লূক
11আমাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই লিখছেন। 2লোকেরা যারা এই ঘটনাগুলো ঘটতে দেখেছিল তারা তাদের সম্বন্ধে আমাদের যা বলেছিল তা তারা লিপিবদ্ধ করেছে। সেই লোকেরা সেই সময় থেকে সেখানে ছিল যখন সবকিছু প্রথম ঘটতে শুরু করেছিল, এবং তারা তখন থেকেই সেই কাহিনী ছড়িয়ে চলেছে। 3আমি নিজেও প্রথম থেকেই যা কিছু ঘটেছিল তার সবই সতর্কতার সাথে তদন্ত করেছি ৷ তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমিও আপনার জন্য একটি সঠিক বিবরণ লিখব। মহামান্য, থিয়ফিল, 4আমি চাই আপনি জানুন যে লোকেরা আপনাকে যীশু সম্পর্কে যা বলেছে তা সত্য।
5হেরোদ যখন যিহূদিয়ার শাসক ছিলেন, তখন সখরিয় নামে একজন ইহুদি যাজক ছিলেন। তিনি ছিলেন অবিয়ের বংশধর, এবং তাই তিনি অন্য যাজকদের সাথে মন্দিরে সেবা করার পালা নিয়েছিলেন যারাও অবিয়ের বংশধর ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম ছিল ইলীশাবেৎ। তিনি হারোনের বংশধর ছিলেন, এবং তাই তিনিও পুরোহিত বংশের ছিলেন। 6ঈশ্বর তাদের উভয়কেই ধার্মিক বলে বিবেচনা করেছিলেন কারণ ঈশ্বর যা কিছু আদেশ করতেন তারা সর্বদা সব কিছু পালন করতেন। 7কিন্তু তাদের কোন সন্তান ছিল না, কারণ ইলীশাবেৎ সন্তান ধারণ করতে অক্ষম ছিলেন। আর এখন তিনি এবং তার স্বামী সন্তান ধারণের জন্য খুব বৃদ্ধ হয়েছিলেন।
8সখরিয়ের যাজকদের দলের যিরুশালেমে সেবা করার সময় আসে। তাই সখরিয় সেখানে ঈশ্বরের জন্য একজন যাজক হিসেবে কাজ করছিলেন। 9যাজকরা সখরিয়কে প্রভুর মন্দিরে যেতে এবং সেখানে ধূপ জ্বালানর জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তারা তাকে তাদের প্রচলিত পদ্ধতিতে বেছে নিয়েছিলেন, গুলিবাট করে ঈশ্বর কাকে একটি বিশেষ কাজ করতে চান তা নির্ধারণ করতে। 10যখন ধূপ জ্বালানোর সময় হল, তখন অনেক লোক মন্দিরের বাইরে প্রাঙ্গণে প্রার্থনা করছিল ৷
11ঠিক তখনই, প্রভুর এক দূত সখরিয়ের কাছে এলেন। তিনি (স্বর্গদূত) বেদীর ডানদিকে দাঁড়ালেন যেখানে তিনি (সখরিয়) ধূপ জ্বালাচ্ছিলেন। 12যখন সখরিয় স্বর্গদূতকে দেখলেন, তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন ও ভয় পেয়ে গেলেন। 13কিন্তু স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “ সখরিয়, আমাকে ভয় করার কোন কারণ নেই। তুমি প্রার্থনা করছিলে, এবং ঈশ্বর তোমার প্রার্থনার উত্তর দিতে যাচ্ছেন। তোমার স্ত্রী ইলীশাবেৎ তোমার জন্য একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে। তুমি তার নাম রাখবে যোহন।
14যখন সে জন্মগ্রহণ করবে তখন তুমি খুব খুশি হবে এবং আরও অনেক লোকও খুশি হবে । 15তুমি এবং তারা খুশি হবে কারণ তোমার ছেলে ঈশ্বরের জন্য খুব ক্ষমতাশালী হবে। সে কখনই দ্রাক্ষারস বা অন্য কোন উত্তেজক পানীয় পান করবে না। তার জন্মের আগেই পবিত্র আত্মা তাকে ক্ষমতাশালী করতে শুরু করবে।
16তোমার ছেলে ইস্রায়েলীয়দের অনেককে পাপ করা বন্ধ করতে এবং তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাধ্য হতে আবার প্ররোচিত করবে। 17তোমার পুত্র প্রভুর সামনে অগ্রসর হবে এবং তিনি ভাববাদী এলিয়র মতো তার আত্মায় শক্তিশালী হবেন। তিনি পিতামাতাদের তাদের সন্তানদের আবার ভালবাসার কারণ হয়ে উঠবেন। তিনি অনেক লোককে যারা ঈশ্বরের বাধ্য নন তাদের তাঁর বাধ্য করবেন এবং বুদ্ধিমান ও ধার্মিকভাবে জীবনযাপন করাবেন। তিনি এটা করবেন যাতে প্রভুর লোকেরা তাঁর জন্য প্রস্তুত থাকে যখন তিনি আসবেন।” 18তখন সখরিয় স্বর্গদূতকে বললেন, “আমি কি করে নিশ্চিত হব যে আপনি যা বলেছেন তা সত্যিই ঘটবে? আমি অনেক বৃদ্ধ, এবং আমার স্ত্রীও অনেক বৃদ্ধ, তাই আমার পক্ষে এটি বিশ্বাস করা কঠিন যে সেগুলি ঘটবে।" 19তখন স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “আমি গাব্রিয়েল! আমি ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকি! তোমার সাথে কি ঘটবে সেই বিষয়ে এই সুসংবাদ জানাতে ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন। 20এখন শোনো! আমি তোমাকে যা বলেছি তা অবশ্যই ঈশ্বরের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঘটবে। কিন্তু যেহেতু তুমি আমার কথা বিশ্বাস করনি, তাই ঈশ্বর তোমাকে কথা বলা থেকে বিরত রাখবেন। তোমার ছেলের জন্ম হওয়ার দিন পর্যন্ত তুমি কথা বলতে পারবে না!”
21যখন সখরিয় এবং স্বর্গদূত মন্দিরের মধ্যে কথা বলছিলেন, তখন মন্দিরের উঠানে লোকেরা সখরিয়র বাইরে আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা খুবই অবাক হলো যে তিনি কেন এতক্ষন মন্দিরের ভিতরে আছেন। 22তারপর তিনি মন্দির থেকে বেরিয়ে আসলেন, কিন্তু তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারলেন না ৷ তিনি কথা বলতে না পারার কারণে, কী ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য তার হাতের দ্বারা ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। এর ফলে লোকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে তিনি মন্দিরে মধ্যে থাকাকালীন সময়ে ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি দর্শন দেখেছিলেন। 23আর যখন সখরিয় মন্দিরে যাজক হিসাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় শেষ করলেন, তখন তিনি যিরুশালেম ছেড়ে নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন।
24এর কিছু সময় পরে, তার স্ত্রী, ইলীশাবেৎ, গর্ভবতী হন এবং তিনি পাঁচ মাস জনসমক্ষে যাননি। সে মনে মনে বললেন, 25“প্রভু আমাকে গর্ভবতী হতে সমর্থ করেছেন। এইভাবে, তিনি আমার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন। তাঁকে ধন্যবাদ, আমাকে আর অন্য লোকেদের কাছে লজ্জিত হতে হবে না।"
26ইলীশাবেৎ যখন ছয় মাসের গর্ভবতী ছিলেন, তখন ঈশ্বর গাব্রিয়েল দূতকে গালীল প্রদেশের নাসরৎ নামে একটি শহরে পাঠিয়েছিলেন। 27ঈশ্বর তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন মরিয়ম নামের এক কুমারীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ৷ তার পিতামাতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি যোষেফ নামে একজনকে বিয়ে করবেন, যিনি রাজা দায়ূদের বংশধর ছিলেন। 28মরিয়ম যেখানে ছিলেন সেখানে স্বর্গদূত এসে তাকে বললেন, “হে ধন্যজন! তুমি প্রভুর কাছে খুবই বিশিষ্ট!” 29কিন্তু তিনি (স্বর্গদূত) যখন এই কথা বললেন, তিনি (মরিয়ম) বিভ্রান্ত হলেন ৷ এই অভিবাদনের অর্থ কী তা তিনি বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
30তারপর স্বর্গদূত তাকে বললেন, মরিয়ম, “ঈশ্বর তোমাকে আশীর্বাদ করতে চান, তাই ভয় পেও না! 31এখন শোন। তুমি গর্ভবতী হবে, এবং তুমি একটি পুত্রের জন্ম দেবে। এবং তাঁর নাম যীশু রাখবে। 32তিনি মহান হবেন এবং তিনি পরমেশ্বরের পুত্র হবেন ৷ ঈশ্বর প্রভু তাঁকে তাঁর লোকদের উপরে রাজা করবেন, যেমন তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদ ছিলেন। 33তিনি সর্বদা ইস্রায়েলের লোকদের উপরে রাজা হবেন। তিনি চিরকাল তাদের উপর রাজত্ব করবেন!”
34তখন মরিয়ম স্বর্গদূতকে বললেন, “কিন্তু আমি একজন কুমারী। তাহলে এটা কিভাবে হতে পারে?" 35স্বর্গদূত উত্তর দিলেন, “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন। পরমেশ্বর শক্তি ছায়ার মত তোমার উপর পতিত হবে। তাই তুমি যে শিশুর জন্ম দেবে তা হবে পবিত্র। তিনি হবেন ঈশ্বরের পুত্র।
36এটাও শোন। তোমার আত্মীয় ইলীশাবেৎও গর্ভবতী, এবং তার একটি ছেলে হতে চলেছে। যেহেতু তিনি অনেক বৃদ্ধ, লোকেরা ভেবেছিল যে তিনি সন্তান ধারণ করতে পারবেন না। কিন্তু সে এখন প্রায় ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। 37তাই দেখ, ঈশ্বর সবই করতে পারেন!” 38তখন মরিয়ম বললেন, “ঠিক আছে। আমি প্রভুর বাধ্য হতে ইচ্ছুক। আপনি যা বর্ণনা করেছেন তা ঈশ্বর আমার সাথে ঘটাতে পারেন।” তারপর স্বর্গদূত তাকে ছেড়ে চলে গেল।
39এরপর খুব শীঘ্রই, মরিয়ম প্রস্তুত হলেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাত্রা করলেন যে শহরে সখরিয় বাস করতেন, যা ছিল যিহুদীয়ার উঁচু উপত্যাকায়। 40তিনি সখরিয়ের বাড়িতে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর স্ত্রী ইলীশাবেৎকে শুভেচ্ছা জানালেন। 41ইলীশাবেৎ মরিয়মের অভিবাদন শুনতে পাওয়ার সাথে সাথেই ইলীশাবেতের ভিতরের শিশুটি হঠাৎ নড়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে পবিত্র আত্মা ইলীশাবেৎকে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করলেন। 42তিনি উচ্চস্বরে মরিয়মকে বললেন, “"ঈশ্বর অন্য যে কোন মহিলাকে যা আশীর্বাদ করেছেন তার চেয়ে বেশি তিনি তোমাকে আশীর্বাদ করেছেন, এবং তুমি যে শিশুটিকে জন্ম দেবে তাঁকে তিনি আশীর্বাদ করেছেন! 43আমি এর যোগ্য নই, যে, তুমি, আমার প্রভুর মা, আমাকে দেখতে আসবে! 44আমি এই সব জানি কারণ অমি তোমার অভিবাদন শোনার সাথে সাথেই আমার গর্ভের শিশুটি নড়াচড়া করতে শুরু করেছিল কারণ সে খুব উত্তেজিত ছিল! 45তুমি ধন্য কারণ তুমি বিশ্বাস করেছো যে প্রভু তোমাকে যা বলেছেন তা সত্য হবে।”
46তখন মরিয়ম এই বলে ঈশ্বরের প্রশংসা করলেন:
“ওহ, কেমন করে আমি ঈশ্বরের প্রশংসা করবো
47এবং আমি ঈশ্বরের বিষয়ে খুব আনন্দিত বোধ করি,
যিনি আমাকে রক্ষা করেন!
48আমি খুশি কারণ তিনি আমার প্রতি সদয় ছিলেন, যদিও আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম না।
শুধু এটা কল্পনা কর—এখন থেকে, ভবিষ্যতে প্রজন্মের সব লোকেরা বলবে যে ঈশ্বর আমাকে আশীর্বাদ করেছেন।
49তারা এই কথা বলবে কারণ শক্তিশালী ও পবিত্র ঈশ্বর, আমার জন্য কত মহান কাজ করেছেন।
50যারা তাঁকে শ্রদ্ধা করে তাদের প্রতি তিনি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম পর্যন্ত সবসময় দয়াপূর্ণ আচরণ করেন।
51তিনি লোকেদেরকে দেখিয়েছেন যে তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী ৷
যারা নিজেদের অন্তরে গর্ব চিন্তা করে এমন লোকেদের তিনি উচ্ছিন্ন করেছেন।
52তিনি শাসকদের শাসন করা বন্ধ করেছেন,
কিন্তু নম্র লোকেদেরকে সন্মানিত করেছেন।
53তিনি ক্ষুধার্ত লোকদের ভাল খাবার খেতে দিয়েছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা তৃপ্ত হয়েছে,
কিন্তু তিনি ধনী লোকদের কিছু না দিয়েই বিদায় করেছেন।
54-55তিনি ইস্রায়েল লোকেদের, যারা তাঁর সেবা করত তাদের সাহায্য করেছেন।
বহুবছর আগে তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি তাদের প্রতি দয়াবান হবেন।
তিনি সেই প্রতিজ্ঞা রেখেছেন এবং আব্রাহাম ও তাঁর বংশের সকল লোকেদের প্রতি সর্বদা দয়া দেখিয়েছেন।"
56মরিয়ম প্রায় তিন মাস ইলীশাবেতের সঙ্গে থাকলেন ৷ তারপর, তিনি বাড়িতে ফিরে গেলেন।
57যখন ইলীশাবেতের সন্তান প্রসব করার সময় আসলো, তখন তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন। 58যখন তার প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজন শুনলেন যে ঈশ্বর তাকে একটি পুত্র দিয়ে তার প্রতি কতটা দয়া দেখিয়েছেন, তারা সবাই ইলীশাবেতের সাথে খুবই আনন্দিত হলেন।
59আটদিন পরে, লোকেরা শিশুটির ত্বকছেদনের জন্য একত্রিত হলেন এটি দেখাতে যে তিনি ঈশ্বরের। এটাই সেই শিশুটির একটি নাম দেওয়ারও সময় ছিল ৷ লোকেরা শিশুটির নাম সখরিয় রাখতে চেয়েছিল কারণ এটি ছিল তার পিতার নাম। 60কিন্তু তার মা বললেন, “না, তার নাম সখরিয় হবে না। তার নাম হবে যোহন!” 61তাই তারা তাকে বলল, “কিন্তু যোহন তোমার আত্মীয়দের মধ্যে কারোর নাম নয়!”
62তারপরে তারা তার বাবার দিকে তাদের হাত দিয়ে ইশারা করলেন, তাকে নির্দেশ করতে বললেন যে তিনি তার ছেলেকে কি নাম দিতে চান। 63তখন তিনি ইঙ্গিত দিলেন যে তারা যেন তাকে লেখার জন্য একটি পাথরের ফলক দেয়। যখন তারা তাকে একটি পাথরের ফলক দিলেন, তিনি তাতে লিখেছিলেন, "তার নাম যোহন।" এটি সেখানে উপস্থিত সকলকে অবাক করেছিল!
64সঙ্গে সঙ্গে সখরিয় আবার কথা বলতে পারলেন এবং তিনি ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন। 65যখন লোকেরা যারা আশেপাশে বাস করত তারা এই সব কথা শুনল, তখন তারা ঈশ্বরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা অনুভব করল। যা ঘটেছিল সে বিষয়ে তারা আরও অনেক লোককে বলল এবং এই খবরটি যিহূদীয়া দেশের সমস্ত উচ্চভূমিতে ছড়িয়ে পড়ল ৷ 66যারা এই সব কথা শুনেছিল তারা প্রত্যেকে সেগুলি নিয়েই ভাবতে লাগল ৷ তারা ভেবেছিল, "অবশ্যই এই শিশুটি বড় হয়ে বিশেষ কেউ হবে!" তারা এটা ভেবেছিল কারণ তারা এটা দেখতে পাচ্ছিল যে প্রভু তাঁর জীবনে শক্তিশালীরূপে উপস্থিত ছিলেন ৷
67শিশুটির পিতা সখরিয় আবার কথা বলতে পারার পর, পবিত্র আত্মা সখরিয়কে অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং তিনি এই কথা গুলো ঈশ্বরের দ্বারা বলতে লাগলেন:
68ঈশ্বরের প্রশংসা হোক, সেই ঈশ্বরের যাকে আমরা ইস্রায়েলের লোকেরা আরাধনা করি,
কারণ তিনি আমাদের, তাঁর লোকদের, মুক্ত করতে এসেছেন।
69তিনি এমন একজনকে পাঠিয়েছেন যিনি শক্তিশালীরূপে আমাদের রক্ষা করবেন,
এমন একজন যিনি দায়ূদের বংশধর, যাকে তিনি রাজা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। 70(বহু বছর আগে ঈশ্বর তাঁর ভাববাদীদের এটি বলতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যে তিনি এই কাজগুলি করবেন ৷)
71আমাদের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর এই উদ্ধারকারীকে পাঠাচ্ছেন,
এবং যারা আমাদের ঘৃণা করে তাদের ক্ষমতা থেকে তিনি আমাদের উদ্ধার করবেন।
72ঈশ্বর এটা করেছেন কারণ তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন এবং তাই তিনি তাদের প্রতি যে পবিত্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তিনি পালন করছেন।
73এটি সেই প্রতিজ্ঞা যা তিনি আমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামের কাছে শপথ করেছিলেন যে তিনি আমাদের জন্য কী করবেন ৷
74তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি আমাদের শত্রুদের শক্তির হাত থেকে রক্ষা করবেন
যাতে আমরা নির্ভয়ে তাঁর সেবা করতে পারি।
75এর ফলে, যতদিন আমরা বেঁচে থাকব, ততদিন আমরা সঠিকভাবে বেঁচে থাকতে পারব, সম্পূর্ণরূপে তাঁরই লোক হিসাবে ৷
76তখন সখরিয় তার শিশুপুত্রকে বললেন,
"আমার সন্তান,
তুমি পরমেশ্বরের একজন ভাববাদী হবে ৷
প্রভু আসার আগেই তুমি তোমার কাজ শুরু করবে
যাতে তুমি লোকদেরকে তাঁর জন্য প্রস্তুত করতে পার।
77তুমি ঈশ্বরের লোকদেরকে বলবে যে তিনি তাদের পাপ ক্ষমা করে তাদের রক্ষা করতে চান ৷
78ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করতে চান কারণ তিনি দয়াময় এবং করুণাময়।
সেই কারণেই, তিনি আমাদের সাহায্য করার জন্য স্বর্গ থেকে এই ত্রাণকর্তাকে পাঠাচ্ছেন ৷
79এই ত্রাণকর্তা সত্যকে প্রদর্শন করবেন তাদের কাছে যারা এটি জানে না, এমনকি তাদের কাছেও যারা এটি একেবারেই জানে না। তিনি আমাদের দেখাবেন যে কেমনভাবে জীবনযাপন করতে হয় যা ঈশ্বরকে খুশি করে।”
80সময়ের সাথে সাথে, সখরিয়র এবং ইলীশাবেতের শিশু পুত্র হয়ে ওঠে এবং আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারপর তিনি একটি নির্জন জায়গায় বসবাস করতে যান। তিনি যখন প্রকাশ্যে ঈশ্বরের লোকেদের, ইস্রায়েলীদের কাছে প্রচার করতে শুরু করেছিলেন তখনও তিনি সেখানেই বাস করছিলেন।
21এছাড়াও সেই সময়ে, আগস্ত কৈসর, যিনি সমগ্র রোম সাম্রাজ্যের উপর শাসন করেছিলেন, আদেশ দিয়েছিলেন যে তার সাম্রাজ্যে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে সেখানে বসবাসকারী লোকদের একটি সরকারী খাতায় তার নাম নতিভুক্ত করতে হবে। 2এই প্রথমবার রোমীরা তাদের সাম্রাজ্যে বসবাসকারী প্রত্যেকের নাম লিপিবদ্ধ করেছিল ৷ কুরীনিয় যখন সিরিয়া প্রদেশের রাজ্যপাল ছিলেন তখন তারা এটা করেছিল। 3তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নিজের নিজের পরিবারের শহরে নাম নতিভুক্ত করার জন্য যেতে হয়েছিল ৷ 4-5আর যোষেফও মরিয়মকে নিয়ে তার নিজের পরিবারের নগরের দিকে যাত্রা করলেন, যিনি যোষেফের বাগদত্তা ছিলেন এবং গর্ভবতী ছিলেন৷ যেহেতু যোষেফ রাজা দায়ূদের বংশধর ছিলেন,, তাই তারা গালীলের নাসরৎ নগর ছেড়ে যিহূদিয়ার বৈৎলেহেম নগরেরে দিকে যাত্রা করলেন, যেটি রাজা দাউদের নগর নামেও পরিচিত। যোষেফ ও মরিয়ম সেখানে তাদের নাম জনগনের খাতায় নতিভুক্ত করবার জন্য গিয়েছিলেন। 6-7তারা যখন বেথেলহেমে পৌঁছালেন, তখন সেখানে থাকার জন্য তাদের কোন জায়গা ছিল না, যেখানে সাধারণত অতিথিরা থাকতো। তাই পশুরা যেখানে রাত্রের বেলা ঘুমাতো সেরমকম জায়গায় তাদের থাকতে হয়েছিল। যখন তারা সেখানে ছিল তখন মরিয়মের সন্তান প্রসব করার সময় এসেছিল এবং তিনি তার প্রথম সন্তান, একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তিনি তাকে চওড়া কাপড়ে জড়ালেন এবং যেখানে পশুদের খাবার রাখা থাকত সেই যাবপাত্রে তাকে শোয়ালেন।
8আর সেই রাতে বৈৎলেহেমের কাছে খোলা জায়গায় কিছু মেষপালকের দল শিবির করেছিল। তারা সেখানে তাদের মেষেদের দেখাশুনা করছিল। 9হঠাৎ তারা প্রভুর এক দূতকে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন ৷ প্রভুর এক উজ্জল আলো তাদের চারিদিকে জ্বলে উঠল। তারা খুব ভয় পেয়ে গেল।
10কিন্তু স্বর্গদূত তাদের বললেন, “ভয় পেও না! মন দিয়ে শোন, কারণ আমি তোমাদের কাছে এক সুসংবাদ জানাতে এসেছি! এই সুসংবাদ সকল মানুষের জন্য, এবং তা সকলকে আনন্দ করা উচিত! 11তারা আনন্দ করবে কারণ আজ, রাজা দায়ূদের নগরে, বেথলেহেমে, সেই ব্যক্তির জন্ম হয়েছে যিনি তোমাদেরকে তোমাদের পাপ থেকে রক্ষা করবেন! তিনি সেই মশীহ, প্রভু! 12আর তোমাদের জন্য একটি চিহ্ন রয়েছে ৷ যদি তোমরা বৈৎলেহেমে যাও, সেখানে তোমরা একটি শিশুকে কাপড়ের জড়ানো এবং পশুদের খাওয়ানোর যাবপাত্রে শোয়ান দেখতে পাবে।”
13হঠাৎ স্বর্গ থেকে স্বর্গদূতেদের একটি বড় দল অন্য স্বর্গদূতের সাথে উপস্থিত হল। তারা সবাই এই বলে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলো,
14“সর্বোচ্চ স্বর্গে সমস্ত স্বর্গদূতেরা ঈশ্বরের প্রশংসা করুক! এবং পৃথিবীতে সমস্ত মানুষ যারা ঈশ্বরকে খুশি করে তারা ঈশ্বরের এবং একে অপরের সাথে শান্তিতে থাকুক!”
15যখন স্বর্গদূতেরা তাদের ছেড়ে স্বর্গে ফিরে গেলেন, তখন মেষপালোকেরা একে অপরকে বলল, “আমাদের এখনই বৈৎলেহেমে যাওয়া উচিত এবং এই বিস্ময়কর ঘটনাটি যা ঘটেছে তা দেখা উচিত, যা প্রভু আমাদের বলেছেন!" 16তাই তারা তাড়াতাড়ি গেলেন এবং যখন তারা সেই জায়গা খুঁজে পেলেন যেখানে যোষেফ এবং মরিয়ম ছিলেন, তারা দেখলেন যে শিশুটি পশুদের খাবারের যাবপাত্রে শুয়ে আছে।
17তারা তাঁকে দেখার পর, এই শিশুটির বিষয়ে প্রভু তাদের কাছে যা প্রকাশ করেছিলেন তা সকলকে জানালেন ৷ 18সমস্ত লোকেরা যারা এটি শুনছিল তারা মনে করল যে মেষ পালকেরা তাদের যা বলল তা আশ্চর্যজনক ৷ 19কিন্তু মরিয়ম সেই বিষয়গুলি নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতে লাগলেন এবং খুবই সতর্কভাবে সেই সবগুলি স্মরণ করলেন ৷ 20মেষপালকেরা মাঠে ফিরে গেল যেখানে তাদের মেষ পাল ছিল৷ তারা অনবরত সেই মহান ঈশ্বরের বিষয়ে যা শুনেছে এবং দেখেছে সে বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকল এবং তাঁর প্রশংসা করতে থাকল। স্বর্গদূতেরা তাদের যেমন বলেছিল সবকিছু একেবারে হুবহু তেমনি ঘটেছিল।
21শিশুর জন্মের অষ্টম দিনে, তারা তাঁর ত্বকছেদ করালেন এবং তাঁর নাম যীশু রাখলেন। এটাই ছিল সেই নাম যা স্বর্গদূত তাদের তাঁকে দিতে বলেছিলেন, এমনকি মরিয়ম গর্ভধারণ করার আগেই বলেছিলেন। 22মোশির ব্যবস্থা অনুসারে শিশুর জন্মের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুচি হওয়ার জন্য যেকটা দিনের প্রয়োজন ছিল তার জন্য মরিয়ম এবং যোষেফ অপেক্ষা করেছিলেন ৷ এরপর তারা তাদের সন্তানকে প্রভুর কাছে উৎসর্গ করার জন্য যিরুশালেমে মন্দিরে নিয়ে গেলেন ৷ 23প্রভুর নিয়ম মেনে চলার জন্য তারা এই কাজ করেছিলেন, যা বলে, "প্রথম জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক পুরুষ সন্তানকে প্রভুর জন্য আলাদা করতে হবে।" 24সেখানে তারা সেই বলি উৎসর্গ করল, যেটা সদাপ্রভুর আইন এক নবজাতক পুত্রের পিতামাতাকে দিতে বলেছিল, “দুটি ঘুঘু বা দুটি পায়রার বাচ্চা”।
25সেই সময় যিরুশালেমে শিমিয়োন নামে একজন লোক ছিলেন। তিনি সেরকম কাজই করতেন যা ঈশ্বরকে খুশি করে এবং ঈশ্বরের আইন মেনে চলতেন। ইস্রায়েলের লোকেদের উত্সাহিত করার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে ঈশ্বরের পাঠানো সেই মশীহের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আর পবিত্র আত্মা তাকে পরিচালনা করছিলেন। 26আর পবিত্র আত্মা পূর্বেই তাঁর কাছে প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি মারা যাওয়ার আগে সদাপ্রভু মশীহকে পাঠাবেন এবং তিনি তাঁকে দেখতে পাবেন ৷ 27তাই পবিত্র আত্মা শিমিয়োনকে মন্দিরের প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে চালনা করলেন ৷ তিনি সেখানে ছিলেন যখন যোষেফ এবং মরিয়ম শিশু যীশুকে নিয়ে এলেন যাতে তারা তাঁর জন্য সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে পারেন যা ঈশ্বর ব্যবস্থায় আদেশ করেছিলেন। 28যখন শিমিয়োন যীশুকে দেখলেন, তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন, তারপর বললেন,
29“প্রভু, তুমি আমার কাছে তোমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছ এবং এখন আমি তোমার জন্য সন্তুষ্ট, আমাকে মরতে দাও।
30কারণ আমি তাঁকে দেখেছি, যাঁকে তুমি লোকদের রক্ষা করতে পাঠিয়েছ,
31সেই একজনকে যাঁকে তুমি প্রস্তুত করেছ সমস্ত লোকের জন্য যাতে সবাই দেখতে পায় ৷
32তিনি এমন এক আলোর মত হবেন যা অন্যান্য জাতির কাছে তোমার (ঈশ্বরের) সত্যকে প্রকাশ করবেন। তিনি দেখাবেন ইস্রায়েলের জন্য তোমার লোকদের জন্য তোমার পরিকল্পনা কত মহান।”
33শিমিয়োন তাঁর সম্বন্ধে যা বললেন তাতে যীশুর পিতা ও মাতা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। 34তখন শিমিয়োন তাদের আশীর্বাদ করলেন এবং যীশুর মা মরিয়মকে বললেন, “আমি যা বলছি তা ভাল করে জেনে রাখুন: ঈশ্বর ঠিক করেছেন যে, এই শিশুর কারণে, ইস্রায়েলের অনেক লোক ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং অনেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত হবে। তিনি ঈশ্বরের থেকে এমন এক চিহ্নস্বরূপ হবেন, যাঁর অনেকে বিরোধিতা করবে ৷ 35তোমার জন্য, লোকেরা তাঁর প্রতি যে নিষ্ঠুর আচরণ করবে তা তোমাকে এমন দুঃখিত করবে যে মনে হবে যেন একটা তলোয়ার তোমার নিজের প্রাণে বিদ্ধ হচ্ছে ৷ কিন্তু এটা দরকার যাতে সে অনেক লোকের গোপন চিন্তাকে প্রকাশ করতে পারে।”
36হান্না নামে একজন ভাববাদিনীও সেখানে মন্দিরের প্রাঙ্গনে ছিলেন ৷ তিনি খুবই বৃদ্ধা ছিলেন। তিনি ছিলেন আশের গোষ্ঠির পনূয়েললের কন্যা। একজন যুবতী হিসাবে, তিনি সাত বছর ধরে বিবাহিত ছিলেন, আর তারপরে তার স্বামী মারা গিয়েছিলেন। 37এর পরে, তিনি আরও 84 বছর বিধবার জীবনযাপন করেন। মনে হচ্ছিল যেন তিনি সবসময় মন্দিরেই থাকতেন, রাত ও দিন সবসময় উপবাস ও প্রার্থনা করে ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। 38সেই একই সময়ে, হান্না যোষেফ ও মরিয়ম ও শিশুটির কাছে গেলেন ৷ হান্না শিশুটির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন। এরপরে, তিনি আরও অনেক লোকের কাছে যীশুর বিষয়ে কথা বলতে থাকেন, যারাও আশা করছিলেন যে ঈশ্বর সেই মশীহকে পাঠাবেন যিনি ইস্রায়েলের লোকদের মুক্ত করবেন।
39যোষেফ ও মরিয়ম প্রভুর ব্যবস্থা অনুসারে যা যা করা দরকার তা শেষ করার পরে, তারা গালীলে নিজেদের শহর নাসরতে ফিরে গেলেন। 40শিশুটি বড় হওয়ার সাথে সাথে সে শক্তিশালী ও জ্ঞানী হয়ে উঠল এবং ঈশ্বর তার জীবনে উপস্থিত ছিলেন।
41আর প্রতি বছর যীশুর পিতা-মাতা নিস্তারপর্ব পালন করতে যিরূশালেমে যেতেন ৷ 42তাই যীশুর বয়স যখন 12 বছর ছিল, তারা সকলে একত্রে যিরুশালেমে গিয়েছিলেন আর তখন নিস্তারপর্বের সময় ছিল ৷ 43যখন উৎসব উদযাপনের দিন শেষ হল, তখন যীশুর পিতা-মাতা বাড়ি ফিরে আসার জন্য যাত্রা শুরু করলেন, কিন্তু তাদের ছেলে যীশু যিরুশালেমেই থেকে গেলেন। তার পিতা-মাতা জানতেন না যে তিনি এখনও সেখানেই রয়েছেন৷ 44তারা ভেবেছিল যে তিনি অন্যান্য লোকেদের সাথে আছেন যারা তাদের সঙ্গে যাত্রা করছিল ৷ কিন্তু একদিনের রাস্তা হাঁটার পর, তারা তাদের আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের মধ্যে তাঁর খোঁজ করতে লাগলেন ৷ 45যখন তারা তাঁকে খুঁজে পেলেন না, তখন তারা তাঁকে খোঁজার জন্য যিরুশালেমে ফিরে গেলেন। 46আর মরিয়ম ও যোষেফ যিরুশালেম ত্যাগ করার তিন দিন পরে, তারা যীশুকে মন্দিরে দেখতে পেলেন ৷ তিনি ইহুদি ধর্মগুরুদের মধ্যে বসে ছিলেন। তিনি তাদের শিক্ষা শুনছিলেন এবং তিনি তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন। 47যারা তাঁর কথা শুনেছিলেন তারা সকলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি কতটা বুঝেছেন এবং কত ভালো ভাবে তিনি শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। 48যখন তাঁর পিতা-মাতা তাঁকে দেখলেন, তাঁরা খুব অবাক হলেন। তাঁর মা তাঁকে বললেন, “আমার পুত্র, আমাদের সাথে তোমার এমন করা উচিত হয়নি। আমার কথা শোন! তোমার পিতা এবং আমি খুব চিন্তিত ছিলাম কারণ তোমাকে না পেয়ে আমরা তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম!” 49আর তিনি তাদের বললেন, “আমি আশ্চর্য যে, তোমাদের আমার খোঁজ করতে হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম তোমরা জান যে আমার পিতার বাড়িতে আমাকে থাকতে হবে, তাঁর সম্পর্কে শিখতে হবে।" 50কিন্তু তারা তাঁর কথার কোনো অর্থ বুঝতে পারলেন না যে তিনি তাদের কি বলছেন ৷ 51তারপর তিনি তাদের সাথে নাসরতে ফিরে গেলেন এবং তিনি সবসময় তাদের বাধ্য থাকলেন। তাঁর মা ঘটে যাওয়া ঐ সব বিষয় নিয়ে সবসময় খুব গভীরভাবে ভাবতে থাকলেন। 52বছর অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে যীশু আরও জ্ঞানী হতে থাকলেন, এবং তিনি বয়সে আরও বড় হতে লাগলেন। ঈশ্বর এবং লোকেরা অবিরত তাঁকে আরও বেশি করে অনুমোদন করতে থাকলেন।
31ইতিহাসের এই পরবর্তী অংশটি ঘটেছিল যখন তিবিরিয় কৈসর প্রায় পনেরো বছর ধরে রোমীয় সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন। সেই সময়ে, পন্তীয় পীলাত যিহুদিয়ার প্রদেশের শাসক ছিলেন, হেরোদ অন্তিপা গালীল প্রদেশ শাসন করছিলেন, তার ভাই ফিলিপ যিতূরিয়া ও ত্রাখোনীতিয়া অঞ্চল শাসন করছিলেন এবং লুষানীয় অবিলীনীর অঞ্চল শাসন করছিলেন। 2যখন হানন ও কায়াফা যিরুশালেম মন্দিরের মহাযাজক ছিলেন ৷ সেই সময়ে, ঈশ্বর সখরিয়ার পুত্র যোহনের সাথে কথা বলেছিলেন যখন তিনি নির্জন এলাকায় বাস করছিলেন।
3আর যোহন যর্দন নদীর কাছের সমস্ত জায়গায় যাত্রা করলেন। তাঁর কথা শুনতে আসা লোকদের কাছে তিনি ঘোষণা করতে থাকলেন, “যদি তোমরা চাও ঈশ্বর তোমাদের পাপ ক্ষমা করুন, তবে তোমাদের অবশ্যই ভুল জীবনযাপন ত্যাগ করতে হবে। তারপর আমি তোমাদের বাপ্তিস্ম দেব!”
4যখন যোহন এইভাবে প্রচার করেছিলেন, সেই কথাগুলি সত্য হয়েছিল যা অনেক আগেই ভাববাদী যিশাইয় একটি গুটানো কাগজে লিখেছিলেন:
“নির্জন জায়গায়, কেউ একজন লোকেদের চিত্কার করে বলবে:
প্রভুকে গ্রহণ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত কর!
তিনি যখন আসবেন তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর!'
5যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে আসছেন, লোকেরা সমস্ত গর্ত ভরাট করে দেয় এবং এর সমস্ত উঁচুনিচু জায়গাগুলিকে সমান করে দেয়।
রাস্তা যেখানেই আঁকাবাঁকা তারা তা সোজা করে দেয়,
এবং তারা রাস্তার সমস্ত উঁচু বাধাগুলোকে সমান করে। ঠিক একইভাবে, ঈশ্বর নিশ্চিত করবেন যেন সেখানে এমন লোক থাকে যারা মশীহের জন্য প্রস্তুত ৷ 6তখন সকলেই মানুষকে রক্ষা করার ঈশ্বরের পথ চিনতে পারবে।"
7যেখানে যোহন ছিলেন সেখানে লোকদের একটি বড় দল বের হয়ে এসেছিল যাতে তিনি তাদের বাপ্তিস্ম দিতে পারেন ৷ তাই যোহন তাদের বললেন, “তোমরা বিষাক্ত সাপের মত ছদ্মবেশী ও বিপজ্জনক! তোমরা মনে কর যে আমি যদি তোমাদেরকে বাপ্তিস্ম দিই, তবে ঈশ্বর পাপীদের শাস্তি দেওয়ার সময় তোমাদেরকে ছেড়ে দেবেন। কিন্তু আমি তা বলিনি!
8তোমাদের এমন কিছু করতে হবে যা দেখাবে যে তোমরা সত্যি তোমাদের আগের পাপপূর্ণ জীবনযাপনকে প্রত্যাখ্যান করেছ! এবং নিজের মনে এরকম বলতে আরম্ভ কর না, 'নিশ্চয়ই ঈশ্বর আমাদের শাস্তি দেবেন না, কারণ আমরা আব্রাহামের বংশধর!' এটি ঈশ্বরকে প্রভাবিত করে না ৷ আমি তোমাদেরকে নিশ্চিতরূপে বলতে পারি, ঈশ্বর এই পাথরগুলিকে আব্রাহামের বংশধরে পরিণত করতে পারেন ৷ !
9তোমরা সেই ফল গাছের মত যা ভাল ফল দেয় না। ঈশ্বর এমন একজন ব্যক্তির মতো যে তার কুড়ালের মাথাটি সেই গাছগুলির গোড়ায় রাখছে, আর সেগুলিকে কেটে আগুনে ফেলতে প্রস্তুত। ঈশ্বরও তোমাদের সেইরকম শাস্তি দিতে প্রস্তুত, যদি তোমরা পাপ করতে থাকো।”
10তখন ভিড়ের মধ্যে বেশ কিছু লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে, আমরা কি করব, ঈশ্বর আমাদের কাছে কি চান?” 11তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের কারও যদি দুটি জামা থাকে তবে একটি জামা যার নেই এমন কাউকে দেওয়া উচিত। তোমাদের কারোর যদি প্রচুর পরিমানে খাবার থাকে, তবে যাদের খাবার নেই তাদের কিছু খাবার দেওয়া উচিত।"
12কিছু কর আদায়কারীও এসেছিলেন, তারা চেয়ে ছিলেন যোহন যেন তাদের বাপ্তিস্ম দেন ৷ তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “গুরু, ঈশ্বর আমাদের কাছে কি চান?” 13তিনি তাদের বললেন, “রোমীয় সরকার যে অর্থ লোকেদের থাকে আদায় করতে বলেছে তার চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করো না!”
14সেখানে আরও কিছু লোক ছিল যারা সৈন্য ছিল ৷ এমনকি তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “আর আমাদের কী হবে? ঈশ্বর আমাদের কাছে কি চান?” তিনি তাদের বললেন, “লোকেদের ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে বা তারা কিছু অন্যায় করেছে এরকম মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জোর করে টাকা আদায় কর না ৷ কিন্তু একজন সৈনিক হিসাবে তুমি যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন কর তাতে সন্তুষ্ট থাকো।"
15লোকেরা দীর্ঘকাল ধরে মশীহের আসার জন্য অপেক্ষা করছিল ৷ কিন্তু এখন তারা যোহন সম্পর্কে খুব আশাবাদী হয়ে উঠছিল। তারা ভেবেছিল যে হয়তো তিনিই মশীহ। 16কিন্তু যোহন তাদের সকলকে বললেন, “আমি মশীহ নই ৷ তিনি আসছেন, এবং তিনি আমার থেকে অনেক মহান ৷ তিনি এতই মহান যে আমি সেই ক্রীতদাসের মতন হওয়ার যোগ্যও নই যে তাঁর জুতোর ফিতে খুলে দেয়, যখন তিনি ঘরে আসেন! আমি যখন তোমাদের বাপ্তিস্ম দিয়েছিলাম, তখন আমি কেবল জল ব্যবহার করেছি। কিন্তু যখন মশীহ আসবেন, তখন তিনি তোমাদেরকে পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম দেবেন, যিনি তোমাদের বিচার করবেন ও শুদ্ধ করবেন ৷
17মশীহ এটি করতে প্রস্তুত, ঠিক যেমন একজন কৃষক যার কুলা প্রস্তুত রয়েছে ব্যবহার করার জন্য ৷ একজন কৃষক বাজে তুষ থেকে সমস্ত ভাল শস্য আলাদা করে। আর সে গোলাঘরে সাবধানে তার শস্য সঞ্চয় করে, কিন্তু সে সমস্ত তুষ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুনে পোড়ায়। আর এটি প্রকাশ করে যে কীভাবে মশীহ সেই লোকদেরকে একত্রিত করবেন যারা ঈশ্বরকে খুশি করে এবং যারা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে তাদের তিনি শাস্তি দেবেন ৷"
18এই রকম বিভিন্ন উপায়ে, যোহন লোকেদেরকে পাপ করা বন্ধ করতে এবং ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পণ করার জন্য আহ্বান করেছিলেন, আর সেভাবে তিনি তাদের [ঈশ্বরের] সুসমাচার বলতে থাকলেন ৷ 19যোহন এমনকী হেরোদ যে সমস্ত মন্দ কাজ করেছিলেন তার জন্য রাজা হেরোদকে তিরস্কার করেছিলেন ৷ কিন্তু যোহন যখন হেরোদকে তার জীবিত ভাইয়ের স্ত্রী হেরোদিয়াকে বিয়ে করার জন্য তিরস্কার করেছিলেন, 20তখন হেরোদ আরেকটা খারাপ কাজ করেছিলেন। তিনি তার সৈন্যদের দিয়ে যোহনকে কারাগারে বন্দী করেছিলেন।
21কিন্তু হেরোদ তা করার আগে, যোহন যখন অনেক লোককে বাপ্তিস্ম দিচ্ছিলেন, তখন যোহন যীশুকেও বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন। এরপর, যীশু যখন প্রার্থনা করছিলেন, তখন আকাশ খুলে গেল। 22তখন পবিত্র আত্মা, পায়রার রূপে, নেমে আসলেন এবং যীশুর উপরে অবস্থিতি করলেন ৷ তখন ঈশ্বর স্বর্গ থেকে যীশুর সাথে এই কথা বললেন ৷ তিনি বললেন, “তুমি আমার পুত্র, যাকে আমি খুব ভালোবাসি। আমি তোমার প্রতি খুবই সন্তুষ্ট!"
23সেই সময় থেকে যীশু ঈশ্বরের জন্য তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় 30 বছর। এটি যীশুর বংশ তালিকা: লোকেরা যীশুকে যোষেফের পুত্র বলে মনে করেছিল। যোষেফের ছিলেন এলির পুত্র। 24এলি ছিলেন মত্ততের পুত্র। মত্তত ছিলেন লেবির পুত্র। লেবি ছিলেন মল্কির পুত্র। মল্কির ছিলেন যান্নায়ের পুত্র। যান্নায় ছিলেন যোষেফের পুত্র।
25যোষেফ ছিলেন মত্তথিয়ের পুত্র। মত্তথিয় ছিলেন আমোসের পুত্র। আমোস ছিলেন নহূমের পুত্র। নাহূম ছিলেন ইষলির পুত্র। ইষলি ছিলেন নগির পুত্র। 26নগি ছিলেন মাটের পুত্র। মাট ছিলেন মত্তথিয়ের পুত্র। মত্তথিয় ছিলেন শিমিয়ির পুত্র। শিমিয়ি ছিলেন যোষেখর পুত্র। যোষেখ ছিলেন যুদার পুত্র।
27যুদা ছিলেন যোহানার ছেলে। যোহানা ছিলেন রীষার ছেলে। রীষা ছিলেন সরুববাবিলের পুত্র। সরুব্বাবিল ছিলেন শল্টিয়েলের পুত্র। শল্টিয়েল ছিলেন নেরির পুত্র। 28নেরি ছিলেন মেল্খির পুত্র। মেলচি ছিলেন অদ্দির পুত্র। আদ্দি ছিলেন কোসামের পুত্র। কোসাম ছিলেন এলমাদামের পুত্র। এলমাদাম ছিলেন এরের পুত্র। 29এর ছিলেন যীশুর পুত্র ৷ যীশু ছিলেন ইলীয়েষরের পুত্র ৷ ইলীয়েষর ছিলেন যোরীমের পুত্র ৷ যোরীম ছিলেন মত্ততের পুত্র ৷ মত্তত ছিলেন লেবির পুত্র ৷৷
30লেবি ছিলেন শিমিয়নের পুত্র ৷ শিমিয়ন ছিলেন যুদার পুত্র ৷ যুদা ছিলেন যোষেফের পুত্র ৷ যোষেফ ছিলেন যোনমের পুত্র ৷ যোনম ছিলেন ইলিয়াকীমের পুত্র ৷ 31ইলিয়াকীম ছিলেন মিলেয়ারের পুত্র ৷ মিলেয়ার ছিলেন মিন্নার পুত্র ৷ মিন্না ছিলেন মত্তথের পুত্র ৷ মত্তথ ছিলেন নাথনের পুত্র ৷ নাথন ছিলেন দায়ূদের পুত্র ৷ 32দায়ূদ ছিলেন যিশয়ের পুত্র, যিশয় ছিলেন ওবেদের পুত্র, ওবেদ ছিলেন বোয়সের পুত্র, বোয়স ছিলেন সলমনের পুত্র, সলমন ছিলেন নহশোনের পুত্র ৷
33নহশোন ছিলেন অম্মিনাদবের পুত্র ৷ অম্মিনাদব ছিলেন অদমানের পুত্র ৷ অদমানের ছিলেন অর্নির পুত্র ৷ অর্নি ছিলেন হিষ্রোনের পুত্র ৷ হিষ্রোণ ছিলেন পেরসের পুত্র ৷ পেরস ছিলেন যিহুদার পুত্র ৷ 34যিহুদা ছিলেন যাকোবের পুত্র ৷ যাকোব ছিলেন ইসহাকের পুত্র ৷ ইসহাক ছিলেন আব্রাহামের পুত্র ৷ আব্রাহাম ছিলেন তেরহের পুত্র ৷ তেরহ ছিলেন নাহোরের পুত্র ৷ 35নাহোর ছিলেন সরূগের পুত্র ৷ সরূগ ছিলেন রিযুর পুত্র ৷ রিযু ছিলেন পেলগের পুত্র ৷ পেলগ ছিলেন এবরের পুত্র ৷ এবর ছিলেন শেলহের পুত্র ৷
36শেলহ ছিলেন কৈননের পুত্র ৷ কৈনন ছিলেন অর্ফকষের পুত্র ৷ অর্ফকষ ছিলেন শেমের পুত্র ৷ শেম ছিলেন নোহের পুত্র ৷ নোহ ছিলেন লেমকের পুত্র ৷ 37লেমক ছিলেন মথুশেলহের পুত্র ৷ মথুশেলহ ছিলেন হনোকের পুত্র ৷ হনোক ছিলেন যেরদের পুত্র ৷ যেরদ ছিলেন মহললেলের পুত্র ৷ মহললেল ছিলেন কৈননের পুত্র ৷ 38কৈনন ছিলেন ইনোশের পুত্র ৷ ইনোশ ছিলেন শেথের পুত্র ৷ শেথ ছিলেন আদমের পুত্র ৷ আদম ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র ৷
41যোহন তাকে বাপ্তিস্ম দেওয়ার পর, যীশু যর্দন নদী থেকে ফিরে আসেন। পবিত্র আত্মা তাকে সম্পূর্ণরূপে শক্তিযুক্ত করছিলেন। তারপর পবিত্র আত্মা তাঁকে মরুভূমিতে নিয়ে গেলেন। 2যীশু 40 দিন মরুভূমিতে ছিলেন ৷ তিনি সেখানে থাকাকালীন সময়ে শয়তান তাঁকে প্রলুব্ধ করতে থাকে। সেই পুরো সময়ে, যীশু কিছুই খাননি। তাই যখন 40 দিন শেষ হল, তখন তিনি খুবই ক্ষুধার্ত ছিলেন। 3তখন শয়তান যীশুকে বলল, "তুমি যদি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এই পাথরটিকে তোমার খাওয়ার জন্য রুটি হয়ে যাবার জন্য আদেশ দাও।" 4আর যীশু উত্তর দিলেন, “না, আমি তা করব না, কারণ শাস্ত্র বলে, 'মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাবারের চেয়েও বেশি কিছু দরকার ৷'”
5তারপর শয়তান যীশুকে একটি উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেল এবং তাঁকে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের সমস্ত রাজ্যগুলি দেখাল ৷ 6তারপর শয়তান যীশুকে বলল, “আমি তোমাকে এই সমস্ত রাজ্যের শাসনকর্তা করব এবং তুমি তাদের সমস্ত সম্পদের অধিকারী হবে। আমি এটি করতে পারি কারণ ঈশ্বর আমাকে তাদের সকলকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দিয়েছেন, আর তাই আমি যাকে ইচ্ছা তাকে দিতে পারি। 7তোমাকে যাটা করতে হবে সেটা হল আমাকে প্রণাম কর আর আমার আরাধনা কর ৷ তাহলে আমি তোমাকে তাদের সবার ওপরে শাসন করতে দেব!”
8কিন্তু যীশু উত্তর দিলেন, “না, আমি তোমার আরাধনা করব না, কারণ শাস্ত্র বলে, ‘তুমি কেবল তোমার প্রভু ঈশ্বরেরই আরাধনা করতে হবে ৷ তিনিই একমাত্র যাঁর সেবা তুমি করতে পারো!’’ 9তারপর শয়তান যীশুকে যিরুশালেমে নিয়ে গেল। সে তাঁকে মন্দিরের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় বসিয়ে বললেন, “তুমি যদি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র হও, তাহলে এখান থেকে ঝাঁপ দাও। 10তোমার কোন আঘাত লাগবে না, কারণ শাস্ত্র বলে,
'ঈশ্বর তাঁর স্বর্গদূতদের আদেশ করবেন তোমাকে রক্ষা করার জন্য।' 11এবং শাস্ত্র এও বলে,
'যখন তুমি ঝাঁপ দেবে স্বর্গদূতেরা তোমাকে তাদের হাতে করে তুলে ধরবেন, যাতে তোমার আঘাত না লাগে ৷'" 12কিন্তু যীশু বললেন, "না, আমি তা করব না, কারণ শাস্ত্রে এও বলা আছে: 'তোমার ঈশ্বর প্রভুর পরীক্ষা করো না'৷ "
13তারপর, শয়তান এই সমস্ত উপায়ে যীশুকে প্রলোভিত করার চেষ্টা শেষ করার পরে, শয়তান যীশুকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত ছেড়ে চলে গেল যখন সে আবার যীশুকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করতে পারে৷
14এরপর, যীশু মরুভূমির এলাকা ছেড়ে গালীল প্রদেশে ফিরে গেলেন ৷ পবিত্র আত্মা তাঁকে শক্তিযুক্ত করছিলেন। সেই সমগ্র অঞ্চল জুড়ে, লোকেরা যীশুর কথা শুনেছিল এবং অন্যদেরকে তাঁর সম্পর্কে বলেছিল। 15তিনি লোকদের ইহুদী সমাজগৃহে শিক্ষা দিতেন। ফলস্বরূপ সকলে তাঁর প্রশংসা করল ৷
16তারপর যীশু নাসরত শহরে গেলেন, যেখানে তিনি বড় হয়েছিলেন ৷ তিনি সাধারণত ইহুদিদের বিশ্রাম দিনে যেমন করতেন, তেমনি তিনি ইহুদিদের সমাজগৃহের গিয়েছিলেন। যথাযথ সময়ে, তিনি শাস্ত্র থেকে কিছু জোরে জোরে পড়ার জন্য দাঁড়ালেন ৷ 17অনেক আগে ভাববাদী যিশাইয় যে কথাগুলি বলেছিলেন তার কিছু কথা যীশু পড়তে চেয়েছিলেন ৷ তাই তিনি এই কথাগুলি সম্বলিত গোটানো বইটি চেয়েছিলেন এবং সমাজগৃহের একজন পরিচারক তাঁকে তা দিয়েছিলেন ৷ যীশু গোটানো বইটি খুললেন এবং সেই জায়গাটি খুঁজে পেলেন যেখান থেকে তিনি পড়তে চেয়েছিলেন। তিনি এই কথাগুলি পড়লেন:
18"প্রভুর আত্মা আমাকে শক্তি দিচ্ছেন,
কারণ তিনি দরিদ্র লোকদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য আমাকে বিশেষভাবে নিযুক্ত করেছেন ৷
তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন কারাগারে থাকা লোকদের কাছে ঘোষণা করতে যে তারা মুক্ত হবে,
এবং যারা অন্ধ তাদের বলতে যে তারা আবার দেখতে পাবে।
তিনি আমাকে এমন লোকদের মুক্তি দিতে পাঠিয়েছেন যাদের ওপর অন্যরা অত্যাচার করছে,
19এবং ঘোষণা করার জন্য যে এখনই সেই সময় যখন প্রভু মানুষের প্রতি অনুগ্রহের কাজ করবেন ৷
20তারপর তিনি বইটি গুটিয়ে নিয়ে পরিচারককে ফিরিয়ে দিলেন এবং লোকদের শিক্ষা দিতে বসলেন ৷ সমাজগৃহে উপস্থিত সবাই তাঁর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। 21তিনি তাদের এই বলে শিক্ষা দিতে শুরু করলেন, “আমি এখনই এই শাস্ত্রের অনুচ্ছেদটি পূর্ণ করলাম যখন তোমরা আমাকে এটি পড়তে শুনলে, ।” 22সেখানে উপস্থিত সকলেই তাঁর কথা মেনে নিলেন এবং তিনি যে চমত্কার বিষয় গুলি বললেন তাতে তারা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই একে অপরকে বলেছিলেন, "এটি আশ্চর্যের বিষয় যে তিনি এভাবে কথা বলতে পারেন! এই ব্যাক্তি যোষেফের পুত্র, তাই না!"
23তিনি তাদের বললেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে এই প্রবাদটি উদ্ধৃত করবে যা বলে, 'চিকিৎসক, নিজেকে সুস্থ কর!' এর দ্বারা তোমরা যা বোঝাতে চাও তা হল, 'লোকেরা আমাদের বলেছিল যে আপনি ক্যাফরনাহুম শহরে অলৌকিক কাজ করেছিলেন ৷ আপনি যদি আমাদের বিশ্বাস করাতে চান যে আপনি একজন ভাববাদী, তবে এখানে আপনার নিজের শহরে সেই একই ধরণের অলৌকিক কাজ করুন!'” 24তারপর তিনি বললেন, “এটি খুবই সত্য যে একজন ভাববাদীর নিজের শহরের লোকেরা তাঁকে ভাববাদী বলে মেনে নেয় না।
25এই বিষয়ে চিন্তা কর: ভাববাদী এলিয় যখন বেঁচে ছিলেন তখন ইস্রায়েলে অনেক বিধবা ছিল ৷ সেই সময় সাড়ে তিন বছর বৃষ্টি হয়নি। এতে সারাদেশে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। 26তবুও ঈশ্বর এলিয়কে ইস্রায়েলের বিধবাদের কাউকে সাহায্য করার জন্য পাঠান নি ৷ পরিবর্তে, ঈশ্বর তাকে সীদোন দেশের কাছে সারিফথ শহরে পাঠিয়েছিলেন, সেখানে একজন অ-ইস্রায়েলীয় বিধবাকে সাহায্য করার জন্য। 27ভাববাদী ইলীশায়ের সময়কালেও ইস্রায়েলে অনেক কুষ্ঠরোগী ছিল। কিন্তু ইলীশায় তাদের কাউকেই সুস্থ করেন নি। পরিবর্তে, তিনি সুরীয়ার দেশ থেকে শুধুমাত্র নামান, একজন অ-ইস্রায়েলীয় লোককে সুস্থ করেছিলেন।"
28যখন ইহুদীদের সমাজগৃহের সমস্ত লোক তাঁকে এইসব কথা বলতে শুনল, তারা খুব রেগে গেল ৷ 29তাই তারা উঠে দাঁড়িয়ে যীশুকে ধরে নগর বাইরে টেনে নিয়ে গেল ৷ তারা তাঁকে তাদের শহরের বাইরে পাহাড়ের কিনারায় নিয়ে যায় যাতে তারা তাঁকে পাহাড় থেকে নিচে ফেলে দিতে পারে এবং তাঁকে মেরে ফেলতে পারে। 30কিন্তু যীশু ভিড়ের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন ৷ 31সেখান থেকে যীশু গালীল প্রদেশের কফরনাহূম শহরের দিকে নামে গেলেন ৷ প্রতিটি ইহুদি বিশ্রামবারে, তিনি সেখানে ইহুদিদের সমাজগৃহে লোকদের শিক্ষা দিতেন ৷ 32যীশু যা শিক্ষা দিয়েছিলেন তা লোকেদের অবাক করে দিয়েছিল, কারণ তিনি এমন একজন মানুষের মতো কথা বলেছিলেন যিনি জানেন যে তিনি কী বলছেন ৷
33আর সেই ইহুদীদের সমাজগৃহে একজন লোক ছিল যাকে একটি মন্দ আত্মা নিয়ন্ত্রণ করছিল ৷ সে খুব জোরে চিৎকার করে বলল, 34“ওহে! নাসরতীয় যীশু! আপনি আমাদের কাছে কি চান? আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে! আপনি ঈশ্বরের থেকে একজন পবিত্র ব্যক্তি!” 35কিন্তু যীশু সেই মন্দ আত্মার সঙ্গে কড়াভাবে কথা বললেন ৷ তিনি বললেন, "চুপ কর এবং তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসো!" তখন সেই মন্দ আত্মা লোকটিকে লোকেদের মাঝখানে মাটিতে ফেলে দিল। কিন্তু তারপর সে লোকটির কোন ক্ষতি না করে তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল। 36ইহুদীদের সমাজগৃহের সকলে আশ্চর্য হয়ে গেল ৷ তাদের মধ্যে অনেকেই একে অপরকে বলতে লাগলো, “আমরা এরকম কিছু কখনও দেখিনি! তাঁর কথায় অত্যন্ত শক্তিযুক্ত! তিনি মন্দ আত্মাদের এমনভাবে আদেশ করেন যেন তারা তা মানতে বাধ্য হয়, এবং যখন তিনি তাদের আদেশ করেন, তারা মানুষের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে!” 37আর আশেপাশের অঞ্চলের সমস্ত জায়গায় যীশু যা করেছিলেন সে বিষয়ে লোকেরা কথা বলতে থাকলো ৷
38এরপর যীশু ইহুদীদের সমাজগৃহ থেকে বেরিয়ে শিমোন নামে একজনের বাড়িতে গেলেন ৷ সেখানে তার শাশুড়ি ছিলেন। সে অসুস্থ ছিল এবং তার খুব জ্বর হয়েছিল। কিছু লোকেরা যারা সেখানে ছিল তারা যীশুকে তাকে সুস্থ করার জন্য অনুরোধ করেছিল। 39তাই যীশু সেখানে গেলেন যেখানে তিনি ছিলেন এবং তার পাশে দাঁড়ালেন ৷ তিনি জ্বরকে আদেশ করলেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য, আর তাই হল! তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠলেন এবং কিছু খাবার তাদের পরিবেশন করলেন।
40যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল, যা ইহুদিদের বিশ্রামের দিন শেষ করেছিল, তখন অনেক লোক যাদের বন্ধু বা আত্মীয়রা নানা রোগে অসুস্থ ছিল তারা তাদের যীশুর কাছে নিয়ে এল ৷ তিনি তাদের প্রত্যেকের উপরে হাত রাখলেন এবং তাদের সবাইকে সুস্থ করলেন। 41যীশু যখন অসুস্থ লোকেদের ওপর হাত রাখলেন, তখন তাদের অনেকের মধ্য থেকে মন্দ আত্মাও বেরিয়ে এল ৷ যখনই মন্দ আত্মারা বেরিয়ে এল, তখন তারা যীশুর দিকে চিৎকার করে বলল, “তুমি ঈশ্বরের পুত্র!” কিন্তু তিনি সেই মন্দ আত্মাদের আদেশ দিয়েছিলেন যে, তারা যেন তার সম্পর্কে লোকেদের না বলে, কারণ তারা জানতো যে তিনিই সেই মশীহ।
42পরের দিন খুব সকালে যীশু একটি জনবসতিহীন জায়গায় গেলেন ৷ লোকদের ভিড় তাঁকে খুঁজতে থাকে। যখন তারা তাঁর কাছে আসলো যেখানে তিনি ছিলেন, তারা তাঁকে অনুরোধ করল যেন তিনি তাদের ছেড়ে চলে না যান। 43কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “আমাকে অন্যান্য শহরের লোকদেরকেও এই সুসমাচার বলতে হবে যাতে তাদের জীবনেও ঈশ্বর রাজত্ব করতে পারেন, আর সেই কারণেই ঈশ্বর আমাকে এই কাজটি করতে এখানে পাঠিয়েছেন।” 44তাই তিনি যিহূদিয়া প্রদেশ জুড়ে ইহুদীদের সমাজগৃহে প্রচার করতে লাগলেন ৷
51একদিন যখন অনেক লোক যীশুর চারপাশে ভিড় করছিল এবং তাঁর কাছ থেকে ঈশ্বরের বাক্য বিষয়ক শিক্ষা শুনছিল, তখন তিনি গিনেষরৎ হ্রদের ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। 2তিনি সেখানে হ্রদের ধারে দুটি মাছ ধরার নৌকা দেখতে পেলেন ৷ জেলেরা সেই নৌকাগুলি ছেড়ে দিয়েছিল এবং তাদের মাছ ধরার জাল ধুচ্ছিল। 3যীশু দুটি নৌকার মধ্যে একটিতে উঠলেন, যেটি শিমোনের ছিল ৷ যীশু তাকে তীর থেকে অল্প দূরে নৌকা সরাতে বললেন। তারপর যীশু নৌকায় বসলেন এবং সেখান থেকে লোকদের শিক্ষা দিতে থাকলেন ৷
4তাদের শিক্ষা দেওয়া শেষ করার পর, তিনি শিমোনকে বললেন, “নৌকাটিকে আরও গভীর জলে নিয়ে যাও এবং মাছ ধরার জন্য জলে তোমার জাল ফেল ৷” 5শিমোন উত্তর দিলেন, “গুরু, আমরা সারারাত কঠোর পরিশ্রম করেছি আর এখনও পর্যন্ত কোনো মাছ ধরতে পারিনি। কিন্তু আমি আবার জালগুলি ফেলবো, কারণ আপনি আমাকে বলেছেন।" 6তাই শিমোন ও তার দলবল তাদের জালগুলি ফেলল এবং এত বেশি মাছ ধরল যে তাদের জালগুলি ছিঁড়তে লাগলো। 7তারা অন্য নৌকায় থাকা তাদের মাছ ধরার সঙ্গীদের ইসরা করল আসার জন্য এবং তাদের সাহায্য করার জন্য ৷ অতঃপর তারা এসে উভয় নৌকায় এত মাছে ভরে দিল যে নৌকাগুলো ডুবে যেতে লাগল।
8এটা দেখে, শিমোন পিতর যীশুর সামনে হাঁটু গাড়লেন এবং বললেন, প্রভু, "দয়া করে আমাকে ছেড়ে চলে যান, কারণ আমি একজন পাপী মানুষ।" 9তিনি এই কথা বললেন কারণ তারা যে বিপুল সংখ্যক মাছ ধরেছিল তাতে তিনি আশ্চর্য হয়েছিলেন ৷ আর তাঁর সঙ্গে থাকা সকলেই আশ্চর্য হয়েছিল ৷ 10সিবদিয়ের দুই পুত্র যাকোব ও যোহন, যারা শিমোনের অংশীদার ছিল, তারাও অবাক হয়ে গেল। কিন্তু যীশু শিমোনকে বললেন, “ভয় কর না! এখন পর্যন্ত তুমি মাছ সংগ্রহ করছিলে, কিন্তু এখন থেকে তুমি লোকেদের সংগ্রহ করবে আমার শিষ্য হবার জন্য।” 11সেইজন্য লোকেরা নৌকাগুলিকে তীরে নিয়ে আসার পরে, তারা তাদের মাছ ধরার ব্যবসা এবং অন্যান্য সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে যীশুর সাথে চলে গেলেন ৷
12আর যীশু কাছের একটি শহরে গেলেন ৷ সেখানে একজন লোক ছিল যার পুরো শরীরটাই চর্ম রোগে আক্রান্ত ছিল। যখন সে যীশুকে দেখল, সে যীশুর সামনে মাটিতে উবুর হয়ে পড়ল। সে তাঁকে অনুরোধ করল, "প্রভু, আমাকে দয়ে করে সুস্থ করুন! আমি জানি আপনি যদি ইচ্ছা করেন তবে আপনি আমাকে সুস্থ করতে পারেন!" 13তখন যীশু তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন এবং লোকটিকে স্পর্শ করলেন ৷ তিনি বললেন, "আমি চাই তুমি সুস্থ হও, আর আমি এখনই তোমাকে সুস্থ করছি!" সঙ্গে সঙ্গে লোকটি সুস্থ হয়ে গেল। তার আর কোন কুষ্ঠ রোগ থাকলো না!
14তখন যীশু তাঁকে বললেন, “কাউকে বলো না যে আমি তোমাকে সুস্থ করেছি। প্রথমে যাও এবং নিজেকে একজন যাজকের কাছে দেখাও যাতে সে তোমাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারে যে তোমার আর কোন কুষ্ঠরোগ নেই। আর আনুষ্ঠানিকভাবে আবার শুচি হওয়ার জন্য মোশির আদেশ অনুসারে বলিদান নিয়ে আসো।”
15কিন্তু এর পরিবর্তে অনেক বেশি লোক শুনেছিল যে যীশু কীভাবে লোকটিকে সুস্থ করেছিলেন ৷ তারফলে, বিশাল জনতা যীশুর শিক্ষা শোনার জন্য এবং তাদের অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য তাঁর কাছে এসেছিল ৷ 16কিন্তু তিনি প্রায়ই তাদের থেকে দূরে নির্জন এলাকায় চলে যেতেন এবং প্রার্থনা করতেন।
17একদিন যীশু যখন শিক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন ফরীশী সম্প্রদায়ের কিছু লোক এবং ইহুদী আইনের কিছু পারদর্শী শিক্ষক সেখানে কাছেই বসেছিল। তারা গালীল প্রদেশের অনেক গ্রাম থেকে এবং যিরুশালেম এবং যিহূদিয়া প্রদেশের অন্যান্য শহর থেকে এসেছিল ৷ ঠিক সময়ে, প্রভু (ঈশ্বর) যীশুকে লোকেদের সুস্থ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন।
18যীশু যখন সেখানে ছিলেন, তখন কিছু লোক একজন পঙ্গু লোককে তাঁর কাছে নিয়ে এল ৷ তারা সেই লোকটিকে খাটে করে নিয়ে এসেছিলেন এবং তারা তাকে ঘরের ভিতরে যীশুর সামনে শুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ৷ 19কিন্তু ঘরের ভিতরে এত লোকের ভিড় ছিল যে তারা তাকে ভিতরে আনতে পারলেন না ৷ তাই তারা সমতল ছাদে বাইরের সিঁড়ি দিয়ে উঠলেন ৷ তারা ছাদ থেকে কিছু টালি সরিয়ে একটা ফাঁকা জায়গা করলেন ৷ তারপর তারা লোকটিকে তার বিছানা সমেত ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভিড়ের মধ্যে মাঝখানে নামিয়ে দিলেন ৷ আর সে ঠিক যীশুর সামনে নেমে এল।
20যীশু যখন বুঝতে পারলেন যে তারা বিশ্বাস করে যে তিনি লোকটিকে সুস্থ করতে পারবেন, তখন তিনি তাকে বললেন, "বন্ধু, আমি তোমার পাপ ক্ষমা করেছি!" 21আইনের শিক্ষকরা এবং ফরীশীরা মনে মনে ভাবতে লাগলেন, “এই লোকটি এই কথা বলে ঈশ্বরকে অপমান করছে! ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না!”
22যীশু জানতেন যে তারা কি ভাবছে ৷ তাই তিনি তাদের বললেন, “আমি যা বলেছি তা নিয়ে তোমাদের নিজেদের মনে প্রশ্ন করা উচিত নয়! 23এখানে আমি চাই যে তোমরা ভালোভাবে চিন্তা কর ৷ কোনটা বলা সহজ, ‘আমি তোমার পাপ ক্ষমা করেছি’ বা, ‘ওঠো এবং হেঁটে চলে যাও’? তোমরা হয়তো ভাবতে পারো যে 'আমি তোমার পাপ ক্ষমা করেছি' বলাটা সহজ কারণ এর জন্য কোনো দৃশ্যমান প্রমাণের প্রয়োজন নেই ৷ 24কিন্তু আমি চাই যেন তোমারা জানতে পারো যে ঈশ্বর আমাকে, অর্থাৎ মনুষ্যপুত্রকে, পৃথিবীর সমস্ত মানুষের পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা দিয়েছেন ৷ তা দেখাতে, আমি এই লোকটিকে উঠতে বলব ৷" তারপর তিনি পঙ্গু লোকটিকে বললেন, "আমি তোমাকে বলছি, উঠ, তোমার বিছানা তুলে নাও এবং ঘরে চলে যাও!"
25সঙ্গে সঙ্গে লোকটি সুস্থ হয়ে উঠল! সে সবার সামনে উঠে দাঁড়াল ৷ সে তার বিছানা তুলে নিল যার উপর সে শুয়ে ছিল, এবং ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে সে ঘরে চলে গেল। 26সেখানকার সমস্ত লোক আশ্চর্য হয়ে গেল! তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করল এবং সম্পূর্ণরূপে বিস্মিত হল [তারা যীশুকে যা করতে দেখেছিল তা দেখে]৷ তারা বলতে থাকলো, "আমরা আজ বিস্ময়কর জিনিস দেখেছি!"
27তারপর যীশু সেই জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন এবং লেবি নামে একজন লোককে দেখলেন যে রোমীয় সরকারের জন্য কর আদায় করত। সে সেই কর গ্রহণ স্থানে বসেছিল যেখানে লোকেরা তাকে সরকারের প্রয়োজনীয় কর দিতে আসছিল। যীশু তাকে বললেন, "আমার সাথে এসো এবং আমার শিষ্য হও!" 28তাই লেবি তার কাজ ছেড়ে দিল এবং যীশুর সঙ্গে চলে গেলো ৷
29পরে লেবি তাঁর নিজের বাড়িতে যীশু ও তাঁর শিষ্যদের জন্য একটি বড় ভোজের আয়োজন করল। সেখানে কর আদায়কারীদের একটি বড় দল এবং অন্যান্য লোকেরা তাদের সঙ্গে একসাথে খাবার খাচ্ছিল। 30তখন ফরীশী সম্প্রদায়ের কিছু লোক, তারা সহ কয়েকজন যারা ইহুদী আইন শিক্ষা দিত, তারা যীশুর শিষ্যদের নালিশ করল ৷ তারা বলল, "কর আদায়কারী এবং অন্যান্য পাপীদের সাথে বসে তোমাদের খাওয়া-দাওয়া করা উচিত নয়।" 31তখন যীশু তাদের বললেন, “লোকেরা যারা ভালো আছে তাদের ডাক্তারের দরকার নেই ৷ কিন্তু যারা অসুস্থ তাদের ডাক্তারের প্রয়োজন আছে। 32একইভাবে, যারা নিজেদের ধার্মিক মনে করে তাদের আমার কাছে আসার আমন্ত্রণ জানাতে আমি স্বর্গ থেকে আসিনি ৷ পরিবর্তে, আমি তাদের কাছে যারা জানে যে তারা পাপী, তাদের পাপপূর্ণ স্বভাব থেকে ফেরানোর জন্য এবং আমার কাছে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি।”
33সেই ইহুদী নেতারা যীশুকে উত্তর দিয়েছিলেন, “বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের শিষ্যরা প্রায়শই উপবাস এবং প্রার্থনা করে। ফরীশীদের শিষ্যরাও তাই করে। কিন্তু আপনার শিষ্যরা সবসময় খেতে এবং পান করতে থাকে! কেন তারা অন্য লোকেদের মতো উপবাস করে না? 34যীশু উত্তর দিলেন, “যখন বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে, তখন বরের বন্ধুদের কেউ উপবাস করতে বলে না! 35কিন্তু কোন একদিন বর আর তার বন্ধুদের সঙ্গে থাকবে না ৷ তখন, সেই সময়, তারা উপবাস করবে।”
36তারপর যীশু কি বোঝাতে চেয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করার জন্য অন্য আরেকটি উদাহরণ দিলেন। তিনি বলেন, “লোকেরা কখনই একটি নতুন পোশাক থেকে কাপড়ের টুকরো ছিঁড়ে পুরানো পোশাকে লাগিয়ে মেরামত করে না। যদি তারা তা করে, তবে তারা নতুন পোশাকটি ছিঁড়ে নষ্ট করবে এবং নতুন পোশাকের কাপড়ের টুকরোটি পুরানো কাপড়ের সাথে মিলবে না।
37আর কেউ সদ্য পেষাই করা (নতুন) আঙুরের রস পুরানো চামড়ার থলিগুলিতে রাখে না। যদি কেউ তা করে তবে চামড়ার থলিগুলি ফেটে যাবে কারণ যখন নতুন আঙুর রস খামির যুক্ত হয় ও বৃদ্ধি পায়, তখন থলিগুলি আর বাড়ে না৷ তারফলে চামড়ার থলিগুলি নষ্ট হয়ে যাবে, আর আঙুর রসও বাইরে ছিটকে পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। 38এর বিপরীতে, নতুন আঙুরের রস অবশ্যই নতুন চামড়ার ব্যাগে রাখতে হবে। 39যারা শুধুমাত্র পুরানো আঙুর রস পান করেছে তারা নতুন আঙুর রস খেতে চায় না, কারণ তারা মনে করে, ‘পুরানো আঙুরের রস যথেষ্ট ভালো!’”
61একদিন বিশ্রামবারে, যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা যখন শস্যক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শিষ্যরা কিছু শস্যের শীষ তুলেছিলেন। তারা সেগুলিকে তাদের হাতে ঘষে শস্য থেকে তুষকে আলাদা করলেন। আর তারপর তারা সেই শস্য খেয়ে ফেললেন। 2কিছু ফরীশীরা এইসব দেখছিল ৷ তারা তাদের বলল, “তোমাদের এরকম কাজ করা উচিত নয়! আমাদের আইন বিশ্রামবারে কাজ করতে নিষেধ করে!”
3যীশু ফরীশীদের উত্তরে বললেন, “দাউদ এবং তাঁর সঙ্গী লোকেরা যখন ক্ষুধার্ত ছিল, তখন তিনি কী করেছিলেন, সেই বিষয়ে শাস্ত্র কি বলে তা বিবেচনা কর। 4তোমরা যেমন জানো, দায়ূদ সমাগম তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন এবং কিছু খাবার চেয়েছিলেন ৷ যাজক তাকে সেই দর্শন রুটি দিলেন যা ঈশ্বরের সামনে রাখা হয়েছিল। দায়ূদ কিছু খেয়েছিলেন, এবং তিনি তার সাথে থাকা লোকদেরও কিছু দিয়েছিলেন, যদিও আইন বলে যে তারা তা করতে পারে না। শুধুমাত্র যাজকরাই সেই রুটি খেতে পারত।” 5যীশু তাদের আরও বললেন, "আমি, মনুষ্যপুত্রের, “বিশ্রামবারে মানুষের কী করা উচিত তা নির্ধারণ করার অধিকার আমার আছে!”
6অন্য এক বিশ্রামবারে যীশু সমাজগৃহে গিয়ে লোকদের শিক্ষা দিলেন ৷ সেখানে একজন লোক ছিল যে তার ডান হাত নাড়াতে পারত না। 7সেখানে কিছু ইহুদী আইনের শিক্ষক এবং কয়েকজন ফরীশীরা ছিলেন ৷ তারা যীশুর উপর লক্ষ রাখেছিল ৷ তারা দেখতে চেয়েছিল যে তিনি লোকটিকে সুস্থ করেন কিনা। যদি তিনি তা করেন, তবে তারা তাঁকে বিশ্রামবারে কাজ না করার বিষয়ে তাদের আইন অমান্য করার জন্য অভিযুক্ত করবে ৷ 8কিন্তু যীশু জানতেন যে তারা কি ভাবছিল ৷ তাই তিনি সেই লোকটিকে যার হাত শুকিয়ে গিয়েছিল তাকে বললেন, "এখানে এসে এবং সবার সামনে দাঁড়াও!" তখন সেই লোকটি উঠল এবং সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। 9তখন যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের একটা প্রশ্ন করতে চাই ৷ ঈশ্বর মোশিকে যে আইন দিয়েছিলেন তা কি লোকেদের বিশ্রামবারে ভাল করতে আদেশ দেয়, নাকি ক্ষতি করার আদেশ দেয়? সেগুলো কি মানুষকে বিশ্রামবারে একটি জীবন বাঁচাতে, নাকি ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়? 10তারা কেউ তাঁকে উত্তর দিল না, তাই তিনি তাদের সকলের দিকে তাকালেন এবং লোকটিকে বললেন, "তোমার শুকনো হাতটিকে বাড়াও!" লোকটি তাই করল, আর তার হাত আগের মতো পুরোপুরিভাবে ঠিক হয়ে গেল! 11কিন্তু ধর্মীয় নেতারা খুব রেগে গিয়েছিল এবং যীশুর হাত থেকে মুক্তির জন্য তারা কী করতে পারেন সেই বিষয় নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করতে লাগলেন ৷
12সেই সময়, যীশু প্রার্থনা করতে পাহাড়ে উঠে গেলেন ৷ তিনি সেখানে ঈশ্বরের কাছে সারারাত প্রার্থনা করলেন। 13পরের দিন তিনি তাঁর সমস্ত শিষ্যদের তাঁর কাছে আসতে বললেন ৷ তাদের মধ্য থেকে তিনি 12 জনকে বেছে নিলেন এবং তাদের প্রেরিত নাম দিলেন।
14তাদের নামগুলি হল: শিমোন, যাকে যীশু নতুন নাম পিতর দিয়েছিলেন ৷ আন্দ্রিয়, পিতরের ভাই; যাকোব এবং তার ভাই, যোহন; ফিলিপ; বর্থলময়; 15মথি যার অন্য নাম ছিল লেবি; থোমা; যাকোব নামে আরেকজন, যার বাবার নাম ছিল আলফেয়; উদযোগী শিমোন; 16যিহূদা, যাকোব নামে এক অন্য ব্যক্তির পুত্র; এবং ঈস্করিয়োতীয় যিহূদা, যে পরে যীশুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
17যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে এসে একটি সমতল জায়গায় দাঁড়ালেন ৷ সেখানে তাঁর শিষ্যদের বিশাল ভিড় ছিল। সেখানে আরও একটি বড় লোকেদের দল যারা যিরুশালেম থেকে এবং যিহূদিয়া অঞ্চলের আরও অনেক জায়গা থেকে এবং সোর ও সীদোন শহরের কাছের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে এসেছিল। 18তারা যীশুর কথা শুনতে শিক্ষা পেতে ও তাদের নিজেদের রোগ থেকে সুস্থ হতে এসেছিল ৷ এছাড়াও তিনি তাদের সুস্থ করেছিলেন যাদের মন্দ আত্মার কষ্ট দিচ্ছিল। 19ভিড়ের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছিল, কারণ তিনি তাঁর শক্তিতে সকলকে সুস্থ করছিলেন ৷
20তারপর তিনি তাঁর শিষ্যদের দিকে তাকালেন এবং বললেন, “এটি তোমাদের জন্য ভালো যারা তোমরা দরিদ্র, কারণ ঈশ্বর তোমাদের উপর রাজত্ব করছেন ৷ 21এটি তোমাদের জন্য ভালো যারা তোমরা এখন ক্ষুধার্ত, কারণ ঈশ্বর তোমাদের সব কিছুই দেবেন যাকিছু তোমাদের প্রয়োজন ৷
এটি তোমাদের জন্য ভালো যারা এখন তোমরা শোকার্ত, কারণ ঈশ্বর একদিন তোমাদেরকে আনন্দে হাসাবেন।
22এটি খুব ভাল যখন অন্য লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করে, যখন তারা তোমাদের প্রত্যাখ্যান করে এবং তোমাদের অপমান করে এবং বলে যে তোমরা খারাপ কারণ তোমরা মনুষ্যপুত্রকে, অর্থাৎ আমাকে অনুসরণ কর ৷ 23যখন এরকম ঘটবে, তখন আনন্দ কর! আনন্দে নাচা-নাচি কর কারণ তোমরা খুবই খুশি! মনে রেখো যে ঈশ্বর তোমাদেরকে স্বর্গে এক মহান পুরস্কার দিতে যাচ্ছেন! ভুলে যেও না যে লোকেরা যারা আজ তোমাদের সাথে এইভাবে আচরণ করছে তাদের পূর্বপুরুষরা অনেক আগে ঈশ্বরের ভাববাদীদের সঙ্গেও একই রকম আচরণ করেছে ৷ 24কিন্তু এটা কতই না দুঃখের বিষয় তোমাদের জন্য যারা তোমরা ধনী। কারণ তোমরা ইতিমধ্যে সমস্ত সান্ত্বনা পেয়েগেছো যা তোমরা পেতে চলেছিলে তোমাদের ধন থেকে৷ 25কিন্তু এটি কতই না দুঃখের বিষয় তোমাদের জন্য যারা এখন খাবার দিয়ে নিজেদের উদর পূর্ণ করতে পারো ৷ পরে তোমরা ক্ষুধিত হবে।
ধিক তাদেরকে যারা এখন হাসছে। কারণ পরে তোমরা খুবই অসুখী হবে।
26এটি কতই না দুঃখের বিষয় তোমাদের জন্য, যখন সবাই তোমাদের বিষয়ে ভালো কথা বলে। একইভাবে, তাদের পূর্বপুরুষরাও এমন লোকদের সম্পর্কে ভালো কথা বলতেন যারা মিথ্যাভাবে নিজেদের ঈশ্বরের ভাববাদী বলে দাবি করত।
27কিন্তু আমি তোমাদের প্রত্যেককে এই কথা বলছি যারা আমার কথা শোনে: তোমাদের শত্রুদের ভালোবাস, শুধুমাত্র তোমার বন্ধুদের নয়! যারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে তাদের জন্য ভালো কর! 28যারা তোমাদেরকে অভিশাপ দেয় তাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে আশীর্বাদ চাও! তাদের জন্য প্রার্থনা কর যারা তোমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে!
29যদি কেউ তোমার এক গালে চড় মেরে (তোমাকে অপমানিত করে), তবে তোমার মুখ ঘুরিয়ে দাও যাতে সে অন্য গালেও চড় মারতে পারে। যদি কেউ তোমার কোট কেড়ে নিতে চায়, তবে তাকেও তোমার শার্টও নিতে দাও। 30যারা তোমার কাছে কিছু চায় তাদের প্রত্যেকে কিছু দিও। যদি কেউ তোমার কাছ থেকে দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে যায়, তবে সেগুলি আর তার কাছ থেকে ফেরত চেও না।
31যেভাবে তোমরা চাও অন্যরা তোমাদের সাথে ব্যবহার করুক, সেই একইভাবে তোমাদেরও উচিত তাদের সাথে ব্যবহার করা ৷
32যারা তোমাদেরকে ভালবাসে যদি তোমরা শুধু তাদেরই ভালোবাস, তবে এরকম করার জন্য ঈশ্বর তোমাদের পুরষ্কৃত করবেন বলে আশা কর না ৷ এমনকি পাপীরাও তাদেরকেই ভালোবাসে যারা তাদের ভালোবাসে। 33যারা তোমাদের জন্য ভালো কাজ করে তোমরা যদি শুধুমাত্র তাদের জন্য ভালো কাজ কর তবে ঈশ্বর তোমাদের পুরষ্কৃত করবেন বলে আশা কর না ৷ এমনকি পাপীরাও তাই করে। 34তোমরা যদি শুধুমাত্র তাদেরই টাকা অথবা সম্পত্তি ধার দাও যারা তোমাদেরকে পরে তা ফেরত দিতে পারবে, তবে তা করার জন্য ঈশ্বর তোমাদের পুরষ্কৃত করবেন বলে আশা কর না। এমনকি পাপীরাও অন্য পাপীদের ঋণ দেয় যারা তাদের সবকিছু ফিরিয়ে দেবে।
35বরং তোমাদের শত্রুদের ভালোবাস! তাদের জন্য ভালো জিনিস কর! তাদের ধার দাও, এবং তাদের কাছে কিছু ফেরত পাবার আশা কর না! তাহলে ঈশ্বর তোমাদের মহা পুরস্কার দেবেন। এবং তোমরা সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের সন্তান হবে, যেহেতু ঈশ্বর এমনকি সেই সব লোকেদের প্রতিও দয়ালু যারা অকৃতজ্ঞ এবং দুষ্ট। 36তাই তোমাদের উচিত অন্য লোকেদের প্রতি সদয় আচরণ করা, ঠিক যেমন তোমাদের পিতা ঈশ্বর লোকেদের প্রতি দয়াপূর্ণ আচরণ করেন ৷
37অন্য লোকেদের কঠোরভাবে দোষী সাব্যস্ত করনা ৷ তাহলে ঈশ্বরও তোমাদের কঠোরভাবে দোষী সাব্যস্ত করবেন না। অন্য লোকদের উপর দোষারোপ কর না ৷ তাহলে ঈশ্বরও তোমাদের দোষারোপ করবেন না। অন্যরা তোমাদের সাথে যে অন্যায় করেছে তার জন্য ক্ষমা কর। তাহলে ঈশ্বরও তোমাদের ক্ষমা করবেন।
38অন্যকে দাও। তাহলে ঈশ্বর তোমাদের দেবেন। এটি এমন হবে যেন তিনি তোমাদের কাছে থাকা একটি পাত্রে যতটা সম্ভব শস্য দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি শস্য চেপে চেপে দেবেন। তিনি সেই পাত্রটি একসাথে ঝাঁকাবেন। তিনি পাত্রটিকে ততক্ষণ ভরতে থাকবেন যতক্ষণ না এটি উপচে পড়ছে। সুতরাং তোমরা যখন অন্যকে দেবে, তখন এটি এমন হওয়া উচিত যেন তোমরা একটি বড় হাতা ব্যবহার করছো, কারণ ঈশ্বর তোমাদের দেওয়ার জন্য সেই একই আকারের হাতা ব্যবহার করবেন।” 39তিনি তাঁর শিষ্যদেরও এই উদাহরণ দিয়েছিলেন: “একজন অন্ধ ব্যক্তির অন্য আরেকজন অন্ধ ব্যক্তিকে পথ দেখানোর চেষ্টা করা উচিত নয় ৷ যদি সে এটি করে, তারা দুজনেই রাস্তার পাশে গর্তে পড়ে যাবে! 40একজন শিষ্য তার গুরুর চেয়ে বড় নয় ৷ কিন্তু শিক্ষক একবার তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষ করলেই সে তার শিক্ষকের মতন হয়ে উঠবে।
41তোমাদের কারোরই অন্যের ছোটখাটো দোষ নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়। কিন্তু তোমাদের নিজের গুরুতর দোষগুলি সম্পর্কে তোমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। অন্যথায়, তোমার নিজের চোখে একটি বড় কাঠের টুকরো লক্ষ্য না করে সেই ব্যক্তির চোখে পড়ে থাকা একটি কনা লক্ষ্য করার মত হবে। 42তোমার অন্য বিশ্বাসীদেরকে বলা উচিত নয়, 'বন্ধু, আমি তোমাকে তোমার ভুল সংশোধন করতে সাহায্য করি,' যখন তুমি এখনও তোমার নিজের ভুলের বিষয়ে কিছু করোনি। যদি তুমি এমনটা কর, তাহলে তুমি একজন ভন্ড! তোমার উচিত আগে নিজের পাপ কাজ বন্ধ করা। তা হবে তোমার নিজের চোখ থেকে একটি বড় কাঠের টুকরো বার করে ফেলার মতো ৷ তারপর, ফলস্বরূপ, তোমারা এক আত্মিক অন্তদৃষ্টি পাবে যা তোমাদের দরকার অন্য লোকেদের তাদের ছোট ভুল থেকে বার করে আনাতে যা অনেকটা তাদের চোখে পড়ে থাকা ছোট কনার মত দেখায়।
43সবাই জানে যে ভালো গাছ খারাপ ফল দেয় না এবং খারাপ গাছ ভাল ফল দেয় না। 44একজন ব্যক্তি যা করে তার দ্বারা তোমরা তার ভিতরটা কেমন তা বলতে পারবে ৷ তাহলে তোমরা জানবে তাদের কাছ থেকে কী আশা করা যায়। যে মন্দ কাজ করে তার কাছ থেকে তুমি দয়া বা ভালো উপদেশের আশা করবে না ৷ সেটা হবে অনেকটা কাঁটাঝোপের মধ্যে ডুমুর খোঁজার মত অথবা ঝোপের লতায় আঙ্গুর খোঁজার মত ৷
45ভাল লোকেরা ভাল কাজ করে কারণ তারা ভাল চিন্তা করে। দুষ্ট লোকেরা খারাপ কাজ করে কারণ তারা খারাপ জিনিস চিন্তা করে। এর কারণ হল লোকেরা যা ভাবে তার উপর ভিত্তি করে কথা বলে এবং কাজ করে।"
46যীশু লোকদের বললেন, আমি তোমাদের যা করতে বলি তা যখন তোমরা কর না তখন তোমরা কেন আমাকে 'প্রভু' বলে ডাকছো? 47আমি তোমাদেরকে বলি তারা কেমন লোক, যারা আমার কাছে আসে, আমার শিক্ষা শোনে এবং সেগুলিকে মান্য করে। 48এই ধরনের লোকেরা সেই ব্যক্তির মতো যে তার ঘর তৈরী করার জন্য মাটির গভীরে খনন করেছিল। যে শক্ত পাথরের উপর ভিত্তি নির্মাণের জন্য নিশ্চিত করেছিল। এরপর সেখানে বন্যা হয়। তীব্র জলের স্রোত সেই বাড়িটিকে জোরে ধাক্কা দিল। কিন্তু এটি সেই বাড়িটিকে ধ্বংস করতে পারেনি, কারণ সেই ব্যক্তিটি একটি শক্ত ভিত্তির উপর বাড়িটি তৈরী করেছিল।
49কিন্তু কিছু লোক যারা আমার শিক্ষা শোনে কিন্তু তারা তা পালন করে না ৷ তারা এমন একজন ব্যক্তির মতো যে প্রথমে ভিত্তি খনন না করে মাটির উপরে একটি বাড়ি তৈরি করেছিল। যখন বন্যার জল এল (বাড়িটিতে লাগল) সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে পড়ল। সেই জল বাড়িটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিল।”
71যারা শুনছিল, যীশু সেইসব লোকেদের সাথে কথা বলা শেষ করার পর, তিনি কফরনাহূম শহরে গেলেন ৷
2সেই শহরে রোমীয় সৈন্যদলের একজন শতপতি ছিলেন, তার প্রিয় একজন দাস ছিল। আর সেই ক্রীতদাস এতটাই অসুস্থ ছিল যে সে মারা যাচ্ছিল। 3যখন সেই শতপতি যীশুর বিষয়ে শুনলেন, তিনি কিছু ইহুদী প্রাচীনদের যীশুর কাছে অনুরোধ করে পাঠালেন যাতে তিনি আসেন আর তার দাসকে সুস্থ করেন ৷ 4যখন তারা যীশুর কাছে এল, তারা তাকে শতপতির দাসকে সাহায্য করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করল ৷ তারা বলল, “ আপনি যে তার জন্য এটি করেন, তিনি তার যোগ্য, 5কারণ তিনি আমাদের লোকদের ভালবাসেন এবং তিনি আমাদের জন্য আমাদের সমাজগৃহ তৈরী করে দিয়েছেন।”
6তাই যীশু তাদের সঙ্গে শতপতির বাড়িতে গেলেন ৷ তিনি যখন প্রায় সেখানে পৌঁছে গেছেন, তখন সেই আধিকারিক যীশুর কাছে এই বার্তা দেওয়ার জন্য কয়েকজন বন্ধুকে পাঠালেন: “প্রভু, এখানে আসার কষ্ট করবেন না, কেননা আমি এমন যোগ্য নই যে আপনি আমার বাড়িতে আসেন ৷ 7সেই কারণেই আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে আসার যোগ্য নিজেকে মনে করিনি ৷ আমি জানতাম যে আপনি আমার প্রিয় দাসকে শুধুমাত্র একটি আদেশ বলার মাধ্যমে সুস্থ করতে পারেন ৷ 8আমি জানি যে আপনি এটি করতে পারেন কারণ আমি নিজে একজন মানুষ যাকে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের আদেশ মানতে হবে ৷ আমারও সৈন্য আছে যাদের অবশ্যই আমার আদেশ মানতে হবে। আমি যখন তাদের একজনকে বলি, ‘যাও!’ তখন সে যায়। আমি যখন অন্য একজনকে বলি, ‘এসো!’ তখন সে আসে। আমি যখন আমার দাসকে বলি, ‘এটা কর!’ তখন সে তা করে।”
9যীশু যখন সেই আধিকারিকের কথা শুনলেন, তখন তিনি অবাক হলেন ৷ তারপর তিনি তার সঙ্গে থাকা ভিড়ের দিকে ফিরে বললেন, “আমি তোমাদের বলছি, এই অইহুদীর মত আমাকে এতটা বিশ্বাস করে এমন কোন ইস্রায়েলীয়ের সাথে আমার দেখা হয়নি!” 10শতপতির কাছ থেকে যে বন্ধুরা এসেছিল তারা যখন তাঁর বাড়িতে ফিরে গেল, তখন তারা দেখতে পেল যে দাসটি আবার সুস্থ হয়ে উঠেছে।
11এর পরেই যীশু নাইন শহরে গেলেন। তাঁর শিষ্যরা এবং অনেক লোক তাঁর সঙ্গে গেল ৷ 12আর যীশু যখন শহরের দরজার কাছে এলেন, তখন তিনি দেখলেন, অনেক লোক শহর থেকে বেরিয়ে আসছে ৷ একজন লোক সবেমাত্র মারা গেছে, আর তারা তাকে কবর দেওয়ার জন্য বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। তার মা ভিড়ের মধ্যে ছিলেন। তিনি একজন বিধবা ছিলেন এবং সে তার একমাত্র ছেলে ছিল। সে যখন জীবিত ছিল তখন তার (মায়ের) দেখাশুনা করত ৷ 13যীশু যখন তাকে দেখলেন, তার প্রতি তাঁর করুণা হল এবং তাকে বললেন, "কেঁদো না!" 14তারপর তিনি তাদের কাছে আসলেন এবং খাটটি স্পর্শ করলেন যেটির উপরে মৃতদেহটি শোয়ান ছিল৷ সেটি বহনকারী লোকেরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তিনি বললেন, "হে যুবক, আমি তোমাকে বলছি, উঠো!" 15তখন যে লোকটি মারা গিয়েছিল সে উঠে বসলো এবং কথা বলতে লাগল ৷ আর যীশু তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন।
16সেখানে উপস্থিত সবাই ভয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেল। তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করল এবং একে অপরকে বলল, "আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদী এসেছেন!" এবং "ঈশ্বর তার লোকেদের যত্ন নিতে এসেছেন!" 17তারপর যীশু যা করেছিলেন সেই খবর সমস্ত যিহূদিয়া অঞ্চলে এবং আশেপাশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল ৷
18-1918-19 বাপ্তিস্মদাতা যোহনের শিষ্যরা তাঁকে এই সব কথা বললেন ৷ তাই যোহন তার শিষ্যদের মধ্যে দুজনকে ডাকলেন এবং তাদের বললেন প্রভুর কাছে যাও এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা কর: "আপনিই কি সেই ব্যক্তি যাঁর বিষয়ে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আসবেন বলে, নাকি আমরা অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করব?" 20যখন সেই দুজন যীশুর কাছে আসলো, তারা তাঁকে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন আমাদেরকে পাঠিয়েছেন আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে, ‘আপনিই কি সেই ব্যক্তি যাঁর বিষয়ে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আসবেন বলে? নাকি আমাদের অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করা উচিত?"
21ঠিক সেই সময়েই যীশু অনেক লোককে অসুস্থতা ও গুরুতর রোগ থেকে সুস্থ করছিলেন এবং তিনি তাদের মন্দ আত্মা থেকেও উদ্ধার করছিলেন। এছাড়াও তিনি অনেক অন্ধকে আবার দেখার ক্ষমতাও দিয়েছিলেন। 22তখন তিনি সেই দুজনকে উত্তর দিয়ে বললেন, “তোমরা ফিরে যাও যা দেখেছ ও শুনেছ তা যোহনকে জানাও। লোকেরা যারা অন্ধ ছিল তারা এখন দেখতে পাচ্ছে। আর লোকেরা যারা খোঁড়া ছিল তারা এখন হাঁটছে। লোকেরা, যাদের চর্মরোগ ছিল তাদের আর সেগুলো নেই। যারা কানে কালা ছিল তারা এখন শুনতে পাচ্ছে। মৃত লোকেরা আবার জীবিত হয়ে উঠছে। আর আমি দরিদ্র মানুষদের কাছে সুসমাচার প্রচার করছি।” 23এবং তাকে এও বল, "ঈশ্বর তাদের সকলকে আশীর্বাদ করবেন যারা আমি যা করি তা দেখে এবং যা শিক্ষা দিই তা শোনে এবং আমাতে অবিরত বিশ্বাস রাখে ৷
24যোহন যাদের পাঠিয়েছিলেন তারা যখন চলে গেলে, যীশু লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন। তিনি বললেন, “তোমরা মরুভূমিতে কী দেখতে গিয়েছিলে? গাছের একটি সরু ডাঁটা বাতাসে নড়ছে? 25তবে তোমরা কি দেখতে গিয়েছিলে? অভিনব পোশাক পরা একজন মানুষকে? শোন, যারা জমকালো পোশাক পরে এবং যাদের খুব ভালো ভালো জিনিস আছে, তারা রাজার প্রাসাদে থাকে। 26তাহলে তোমরা সেখানে কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন ভাববাদী? হ্যাঁ, যোহনই সেই ব্যক্তি! কিন্তু আমি তোমাদের বলছি যোহন একজন সাধারণ ভাববাদীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
27তিনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর সম্বন্ধে অনেক আগেই ভাববাদীরা লিখেছিলেন: ‘দেখ, আমি আমার দূতকে তোমার আগে পাঠাচ্ছি। সে তোমার আসার জন্য লোকদের প্রস্তুত করবে। 28আমি তোমাদের বলছি, সমস্ত লোকেদের মধ্যে যারা তোমাদের মধ্যে বসবাস করত, তাদের মধ্যে যোহনের চেয়ে মহান আর কেউ নেই। তবুও সবচেয়ে তুচ্ছ যে ব্যক্তি যার জীবনে ঈশ্বর রাজত্ব করছেন সে যোহনের থেকেও মহান।"
29যখন সমস্ত লোক যাদের যোহন বাপ্তিষ্ম দিয়েছিলেন যীশুর কথা শুনলো - তখন কর আদায়কারীরা সহ - সকলে তারা একমত হয়েছিল যে ঈশ্বর যোহনকে পাঠিয়ে ঠিক কাজ করেছেন ৷ 30কিন্তু ফরীশীরা এবং ইহুদী আইনের দক্ষ লোকেরা, যাদের যোহন বাপ্তিস্ম দেননি, তারা তাদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
31তারপর যীশু আরও বললেন, “তোমরা যারা এই যুগে বাস করছো তারা কিসের মত, আমি তোমাদের বলবো৷ 32তোমরা খোলা জায়গায় খেলতে থাকা সেই শিশুদের মত ৷ আর তারা একে অপরকে ডেকে বলে, ‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশিতে আনন্দের গান বাজালাম, কিন্তু তোমরা নাচলে না! তারপর আমরা তোমাদের জন্য দুঃখের গান গাইলাম, কিন্তু তোমরা কাঁদলে না!'
33একইভাবে, যোহন যখন তোমাদের কাছে আসলেন এবং সাধারণ খাবার খেলেন না বা আঙ্গুরের রস পান করলেন না, তখন তোমরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে এবং বলেছিলে, তাঁকে ভুতে নিয়ন্ত্রণ করছে!' 34কিন্তু যখন মনুষ্যপুত্র তোমাদের কাছে আসলেন এবং সাধারণ খাবার খেলেন এবং অন্যদের মত আঙ্গুরের রস পান করলেন, তখন তোমরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলে বললে, 'দেখ! এই লোকটি খুব বেশি খাবার খায় এবং খুব বেশি আঙ্গুরের রস পান করে এবং সে কর আদায়কারী এবং অন্যান্য পাপীদের সাথে মেলামেশা করে!’ 35কিন্তু যারা জ্ঞানী তারা নিজেরাই স্বীকার করে যে যোহন এবং আমি যা করি তাও জ্ঞানপূর্ণ কাজ।”
36একদিন শিমোন নামে একজন জনৈক ফরীশী যীশুকে তার সাথে খাবার খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করলেন। তাই যীশু সেই লোকটির বাড়িতে গেলেন এবং খাবার টেবিলে হেলান দিয়ে বসলেন। 37আর দেখো সেই শহরে একজন মহিলাও ছিল যার বদনাম ছিল ৷ যখন সে শুনল যে, যীশু ফরীশীর বাড়িতে খাবার খাচ্ছেন, সে সেখানে গেল আর একটি পাথরের পাত্রে যাতে সুগন্ধি তেল ছিল তা আনলো ৷ 38যীশু যখন খাবার খেতে বসেছিলেন, তখন সেই স্ত্রীলোকটি তাঁর পিছনে, পায়ের কাছে দাঁড়াল ৷ সে কাঁদছিল এবং তার চোখের জল যীশুর পায়ে পড়ছিল ৷ সে ক্রমাগত তার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিচ্ছিল। আর সে বারবার তাঁর পায়ে চুম্বন করতে থাকে এবং সুগন্ধি তেল মাখিয়ে দিয়ে সেগুলি অভিষেক করে।
39যে ফরীশী যীশুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সে যখন দেখল যে মহিলাটি কী করছে, তখন সে মনে মনে ভাবল, “এই লোকটি যদি সত্যিই একজন ভাববাদী হতেন, তবে তিনি জানতেন যে এই মহিলাটি কে, যে তাঁকে স্পর্শ করছে ৷ তিনি জানতেন যে সে কী ধরনের মানুষ, সে একজন পাপী।" 40জবাবে, যীশু তাকে বললেন, “শিমোন, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।” সে উত্তর দিল, "গুরু, সেটা কি?"
41যীশু তাকে এই গল্পটি বলেছিলেন: "দুজন লোক একজন লোকের কাছে টাকা ধার নেয়, যার টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসা ছিল ৷ তাদের মধ্যে একজনের কাছে 500 রুপার সিকি পাওনা ছিল। অন্য একজনের কাছে 50 টি রুপার সিকি পাওনা ছিল। 42তাদের দুজনের মধ্যে কেউই তার ধার শোধ করতে পারল না, তাই সেই লোকটি খুব সদয় হয়ে বললো যে, তাদের উভয়কেই কিছুই ফেরত দিতে হবে না। তাহলে, এই দুই ব্যক্তির মধ্যে কে সেই লোকটিকে বেশি ভালোবাসবে?" 43উত্তরে শিমোন বললেন, “আমি মনে করি, যে বেশি টাকা ধার নিয়েছিল সেই ব্যক্তি তাকে বেশি ভালবাসবে।” যীশু তাকে বললেন, "তুমি ঠিক বলেছ।"
44তারপর তিনি সেই মহিলার দিকে ফিরলেন এবং শিমোনকে বললেন, “ভেবে দেখ, এই মহিলাটি কি করেছে! আমি যখন তোমার বাড়িতে প্রবেশ করলাম, অতিথিসেবকরা সাধারনত তাদের অতিথিদের স্বাগত জানাতে যা করে তা তুমি কর নি। তুমি আমাকে আমার পা ধোয়ার জন্য কোন জল দাও নি। কিন্তু এই মহিলা তার চোখের জল দিয়ে আমার পা ধুয়ে দিয়েছে এবং চুল দিয়ে সেগুলি মুছে দিয়েছে! 45তুমি আমাকে চুমু দিয়ে অভ্যর্থনা জানাও নি। কিন্তু আমি আসার মুহূর্ত থেকে, সে আমার পায়ে চুমু খাওয়া বন্ধ করেনি!
46তুমি আমার মাথায় জিত বৃক্ষের তেল দিয়ে অভিষেক কর নি, কিন্তু সে আমার পায়ে সুগন্ধি তেল দিয়ে অভিষিক্ত করেছে। 47সেইজন্য আমি তোমাকে বলছি যে ঈশ্বর তার অনেক পাপ ক্ষমা করেছেন, আর সেই কারণেই সে আমাকে এতবেশি ভালবাসে ৷ কিন্তু যে ব্যক্তি মনে করে যে ঈশ্বরকে মাত্র কয়েকটি পাপের জন্য তাকে ক্ষমা করতে হয়েছে সে আমাকে কম ভালোবাসবে।"
48তখন যীশু সেই মহিলাকে বললেন, "আমি তোমার পাপ ক্ষমা করেছি।" 49তখন যারা তাঁর সঙ্গে খাচ্ছিল তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো, “এই লোকটি কে যে বলে যে সে পাপও ক্ষমা করতে পারে?” 50কিন্তু যীশু সেই মহিলাকে বললেন, “যেহেতু তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছ, তাই ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করেছেন। তোমার যাত্রা পথে ঈশ্বর তোমাকে শান্তি দিন!”
81এরপর যীশু ও তাঁর বারোজন শিষ্য বিভিন্ন শহর ও গ্রামে ঘুরে বেড়ালেন ৷ তারা যখন যাচ্ছিলেন, যীশু লোকেদের কাছে প্রচার করলেন, তাদের সুসমাচারের বিষয়ে বললেন যে তাদের জীবনেও ঈশ্বর রাজত্ব করতে পারেন। 2তাদের সঙ্গে যাত্রা পথে বেশ কয়েকজন মহিলারাও ছিলেন যাদের তিনি মন্দ আত্মা থেকে উদ্ধার করেছিলেন এবং অসুস্থতা থেকে সুস্থ করেছিলেন ৷ এর মধ্যে মগ্দলীনী গ্রামের মরিয়মও রয়েছে। যার মধ্যে থেকে যীশু সাতটি মন্দ আত্মাকে তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন। 3এই নারীদের মধ্যে আরেকজন ছিলেন যোহানা ৷ তিনি কূষের স্ত্রী ছিলেন, যিনি রাজা হেরোদের একজন ব্যবস্থাপক ছিলেন। শোশন্না এবং আরও অনেকে, এই মহিলারাও অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ তারা যীশু এবং তাঁর শিষ্যদের সাহায্য করার জন্য তাদের নিজস্ব টাকা ব্যবহার করছিল।
4একদিন অনেক বড় লোকেদের ভিড় জড়ো হল ৷ লোকেরা যীশুকে দেখতে বিভিন্ন শহর থেকে যাত্রা করছিল। তখন তিনি তাদের এই গল্পটি বললেন: 5“একজন কৃষক তার জমিতে কিছু শস্যের বীজ রোপণ করতে বেরিয়েছিলেন। যখন তিনি সেগুলো মাটির ওপর ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন, তখন কিছু বীজ শক্ত রাস্তায় পড়ল। লোকেরা সেই বীজেগুলির উপর দিয়ে হেঁটে চলে গেল এবং পাখিরা সেগুলি খেয়ে নিল। 6কিছু বীজ পাথুরে জমিতে অগভীর মাটিতে পড়ল ৷ সেই বীজগুলি বড় হওয়ার সাথে সাথে, চারাগাছগুলি শুকিয়ে গেল কারণ সেগুলির শিকড়গুলি শিলা ভেদ করে আর্দ্রতায় পৌঁছাতে পারল না।
7কিছু বীজ এমন মাটিতে পড়ল যেখানে কাঁটাগাছেরও বীজ পড়ে ছিল ৷ অল্পবয়স্ক শস্য গাছের চারাগুলির সাথে নতুন কাঁটাগাছের চারাগুলি একসাথে বেড়ে ওঠল। শক্তিশালী কাঁটাগুলি শস্যের গাছগুলিকে ঘিরে ধরল, যাতে শস্যের গাছগুলি ভালভাবে বাড়তে না পারে ৷ 8কিন্তু কিছু শস্যের বীজ উর্বর মাটিতে পড়ল। তারা এত ভালভাবে বেড়ে উঠল যে একশ গুন বেশি শস্য উৎপন্ন করল।” এই কথাগুলো বলার পর, যীশু জনতাকে ডেকে বললেন, “তোমরা এইমাত্র আমাকে যা বলতে শুনলে তা নিয়ে তোমদের খুব ভালোভাবে চিন্তা করা উচিত!”
9তখন যীশুর শিষ্যরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই গল্পের অর্থ কী? 10আর তিনি বললেন, “ঈশ্বর কেমনভাবে রাজা হিসেবে রাজত্ব করবেন সে সম্বন্ধে গোপন বিষয়গুলি জানার সৌভাগ্য ঈশ্বর তোমাদের দিয়েছেন ৷ কিন্তু সকলের সঙ্গে আমি কেবল দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কথা বলি, যাতে,
যদিও তারা দেখে, তবু যেন তারা উপলব্ধি করতে না পারে, এবং যদিও তারা শুনেও, তারা বুঝতে পারে না ৷'
11এখন, গল্পটির অর্থ হল এই: ঈশ্বর লোকেদের যা জানাতে বা বোঝাতে চান এই বীজ সেই বিষয়কে বোঝায় ৷ 12যে বীজগুলি রাস্তার উপর পড়েছিল তা দেখায় যে যখন লোকেরা ঈশ্বরের বাক্য কেবলমাত্র উপর উপর বুঝতে পারে তখন কী হয় ৷ এটি শয়তানের পক্ষে আসাকে সহজ করে তোলে এবং তাদের মন থেকে সেই বাক্য নিয়ে যায়। ফলস্বরূপ, তারা এটি বিশ্বাস করে না, এবং তাই ঈশ্বরও তাদের উদ্ধার করেন না। 13যে বীজগুলি পাথুরে মাটিতে পড়েছিল তা দেখায় যে যখন লোকেরা ঈশ্বরের বার্তা শোনে এবং আনন্দের সাথে তা গ্রহণ করে, কিন্তু তারা গুরুতরভাবে নিজেদের প্রতিজ্ঞা বদ্ধ করে না, তখন কী হয়। তারফলে, তারা অল্প সময়ের জন্য বিশ্বাস করে। যখনই তাদের সাথে খারাপ কিছু ঘটে তারা ঈশ্বরের উপর ভরসা করা বন্ধ করে দেয়।
14যে বীজগুলি কাঁটা ঝোপের মধ্যে পড়েছিল তা দেখায় যে ঈশ্বরের বাক্য শোনেন এমন কিছু লোকের কি হয় ৷ তারা যখন জীবনে এগিয়ে যায়, তারা এই জীবনের উদ্বেগ, সম্পদ এবং আনন্দকে তাদের সমস্ত মনোযোগ দখল করতে দেয়। তারফলে, তারা আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ক হয় না। 15কিন্তু উর্বর জমিতে যে বীজ পড়েছিল তা দেখায় যখন লোকেরা ঈশ্বরের বাক্য শোনে এবং গভীর আন্তরিকতার সাথে তা গ্রহণ করে তখন কি হয় ৷ তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়, আর যেহেতু তারা এই প্রতিজ্ঞা বজায় রাখে, তাই তারা আধ্যাত্মিকভাবে পরিণত হয়।
16এই বিষয়ে চিন্তা কর। মানুষ যখন প্রদীপ জ্বালায়, তারা তা ঝুড়ি দিয়ে ঢেকে রাখে না। তারা এটাকে খাটের নিচে রাখে না। পরিবর্তে, তারা এটি একটি বাতিদানের উপর রাখে। আর যে কেউ ঘরের ভিতরে ঢোকে সে যেন তার আলোয় দেখতে পায়। 17এই উদাহরণটি বোঝায় যে, এখন যা কিছু লোকানো রয়েছে তা একদিন সবাই সবকিছু দেখতে পাবে ৷ এবং যা এখন গোপন রয়েছে তা একদিন সবাই সবকিছু প্রকাশ্যে দেখতে পাবে। 18তাই নিশ্চিত হও যে আমি যা তোমাদের বলি তা তোমরা মনোযোগ সহকারে শুনছো, কারণ কেউ যদি ঈশ্বরের সত্যে বিশ্বাস করে, তবে ঈশ্বর তাকে আরও বুঝতে সক্ষম করবেন ৷ কিন্তু যদি কেউ ঈশ্বরের সত্যকে বিশ্বাস না করে, তবে ঈশ্বর তাকে কিছুই বুঝতে দেবেন না এমনকি একটুও না, যা সে মনে করে যে সে বুঝতে পেরেছে।"
19একদিন যীশুর মা ও ভাইয়েরা তাঁকে দেখতে এলেন, কিন্তু তারা তাঁর কাছে যেতে পারলেন না কারণ তিনি যে ঘরে ছিলেন সেখানে তাঁর চারপাশে এক বিশাল বড়লোকেদের ভিড় ছিল ৷ 20তখন লোকেরা তাঁকে বলল, “আপনার মা ও আপনার ভাইয়েরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, আপনাকে দেখতে চাইছে।” 21কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “যারা ঈশ্বরের বাক্য শোনে এবং তা পালন করে তারা আমার কাছে আমার মা ও আমার ভাইদের মত প্রিয় ৷”
22আর অন্য একদিন যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নৌকায় উঠলেন ৷ তিনি তাদের বললেন, "আমি চাই যে আমরা হ্রদ পার করে ওপারে যাই।" তাই তারা নৌকায় হ্রদ পার হতে শুরু করল। 23কিন্তু তারা যখন নৌকায় যাচ্ছিল, তখন যীশু ঘুমিয়ে পড়লেন ৷ তারপর হ্রদে একটি শক্তিশালী ঝড় শুরু হল। খুব তাড়াতাড়ি নৌকা জলে ভরতে শুরু করল, আর তারা বিপদে পড়ল। 24তাই যীশুর শিষ্যরা তাঁকে জাগানোর জন্য কাছে এল ৷ তারা তাঁকে বলল, “প্রভু! প্রভু ! আমরা সবাই মরতে চলেছি!" তিনি জেগে উঠলেন আর বাতাসকে এবং উত্তাল ঢেউকে ধমক দিলেন। বাতাস বয়া বন্ধ হয়ে গেল, ঢেউগুলি নৌকায় আঘাত করা বন্ধ করে দিল এবং সবকিছু শান্ত হয়ে গেল। 25তারপর তিনি তাদের বললেন, “তোমরা এমন আচরণ করেছ যেন তোমাদের বিশ্বাসই নেই!” তখন শিষ্যরা সবেমাত্র যা ঘটেছিল সেই কারণে খুবই আতঙ্কিত ও আশ্চর্য হয়ে গেল ৷ তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে, “যীশু কে হতে পারেন? তিনি এমনকি বাতাস এবং জলের ঢেউকেও আদেশ করতে সক্ষম এবং তারা তাঁর কথা শোনে।"
26যীশু ও তাঁর শিষ্যরা নৌকা চালিয়ে গেরাসীনের লোকেরা যেখানে বাস করত সেই অঞ্চলে এলেন ৷ এটি গালীল হ্রদের উল্টো দিকে ছিল। 27যীশু যখন নৌকা থেকে বেরিয়ে এলেন, তখন সেই এলাকার এক জন লোকের সঙ্গে তাঁর সঙ্গে দেখা হল ৷ এই লোকটির মধ্যে মন্দআত্মা ছিল। অনেক দিন ধরে এই লোকটি কোন জামাকাপড় পরেনি এবং কোন বাড়িতে বাস করেনি। পরিবর্তে, সে কবরের গুহায় বসবাস করত।
28লোকটি যখন যীশুকে দেখল, সে চিৎকার করে উঠল এবং তাঁর সামনে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল ৷ সে চিৎকার করে বলল, যীশু, সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বরের পুত্র? “আপনি আমার কাছে কি চান, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আমাকে কষ্ট দেবেন না!” 29লোকটি একথা বলেছিল কারণ যীশু তাঁর মধ্য থেকে মন্দআত্মাকে বের হয়ে আসার আদেশ দিয়েছিলেন ৷ অতীতে লোকেরা তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখত এবং তার উপর কড়া নজর রাখত। তারপরেও অনেক সময় মন্দআত্মা তাকে জোর করে ধরতো। তারপর লোকটি তার শিকল ভেঙ্গে ফেলত, এবং মন্দআত্মা তাকে নির্জন জায়গায় যেতে বাধ্য করত।
30তখন যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমার নাম কি?" মন্দ আত্মা বলল, "আমার নাম বাহিনী।" সে এটি বলল, কারণ অনেক মন্দআত্মা লোকটির মধ্যে ঢুকে ছিল। 31মন্দ আত্মারা যীশুর কাছে মিনতি করতে থাকল তিনি যেন তাদের সেই পাতালে যাওয়ার আদেশ না দেন যেখানে ঈশ্বর মন্দ আত্মাদের শাস্তি দেন ৷
32কাছেই পাহাড়ের ধারে একটা বড় শুয়োরের পাল চরছিল। মন্দ আত্মারা যীশুর কাছে মিনতি করল তিনি যেন তাদের শূকরের মধ্যে প্রবেশ করার অনুমতি দেন, এবং তিনি তাদের অনুমতি দিলেন। 33সেইজন্য মন্দ আত্মারা সেই লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে শূকরদের মধ্যে ঢুকে পড়ল এবং শূকরের পাল খাড়া পাড় দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে গিয়ে হ্রদের মধ্যে পড়ল এবং ডুবে গেল ৷
34যারা শুয়োরের পাল দেখাশোনা করছিল, তারা এই ঘটনা দেখে পালিয়ে গেল! তারা যা দেখেছিল তা তাদের আশেপাশে বসবাসকারী সমস্ত লোককে জানালো। 35তখন লোকেরা কি ঘটেছিল তা দেখতে বাইরে গেল ৷ যীশু যেখানে ছিলেন যখন তাঁরা সেখানে গেল, তারা দেখল যে লোকটির থেকে মন্দ আত্মারা বেরিয়ে গিয়েছিলো সে যীশুর পায়ের কাছে বসে আছে ৷ তারা দেখল যে সে জামাকাপড় পরে রয়েছে এবং তার মাথা আগের মতন স্বাভাবিক হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছিল যে যীশু কতটা শক্তিশালী, এবং তারা ভয় পেয়ে গেল ৷
36যারা এই ঘটনা ঘটতে দেখেছিল, তারা সেই সব ঘটনা লোকেদের বললেন যারা সবেমাত্র সেখানে পৌঁছে ছিল যে কীভাবে যীশু সেই ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছিলেন, যাকে মন্দ আত্মা নিয়ন্ত্রণ করছিল ৷ 37তখন গেরাসেনরা যেখানে বসবাস করত সেখানকার অনেক লোক যীশুকে তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলল, কারণ তারা খুব ভয় পেয়েছিল। তাই যীশু ও তাঁর শিষ্যরা হ্রদ পার হয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য নৌকায় উঠলেন ৷
38তারা চলে যাওয়ার আগে, যে লোকটির মধ্য থেকে মন্দ আত্মা বের হয়েছিল সে যীশুকে অনুরোধ করে বলল, "দয়া করে, আমাকে আপনার সাথে যেতে দিন!" কিন্তু তার পরিবর্তে, যীশু তাকে এই বলে বিদায় করে দিলেন, 39“না, তোমার বাড়িতে ফিরে যাও এবং সবাইকে বল যে ঈশ্বর তোমার জন্য কত কিছু করেছেন!” তখন সেই লোকটি চলে গেল এবং সমস্ত শহরের লোকদের জানাল যে যীশু তার জন্য কত কিছু করেছেন ৷
40যীশু ও তাঁর শিষ্যরা যখন হ্রদ পার হয়ে কফরনাহূমে ফিরে এলেন, তখন অনেক লোক তাদের স্বাগত জানাল ৷ তারা সবাই সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিল। 41ঠিক তখনই যায়ীর নামে একজন লোক, যিনি সেখানকার সমাজ-গৃহের নেতাদের একজন ছিলেন, তিনি যীশুর কাছে আসলেন এবং তাঁর সামনে উবুর হয়ে পড়লেন ৷ তিনি যীশুকে তাঁর বাড়িতে আসার জন্য অনুরোধ করলেন। 42তিনি এটি করেছিলেন কারণ তাঁর একটি মাত্র মেয়ে ছিল, যার বয়স প্রায় 12 বছর ছিল এবং সে মারা যাচ্ছিল ৷
তিনি চেয়েছিলেন যীশু তাকে সুস্থ করুন ৷ আর এখন যীশু যখন তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিলেন, তখন বহু লোকেরা তাঁর চারিদিকে ভিড় করেছিল ৷
43ভিড়ের মধ্যে একজন মহিলা ছিলেন যিনি 12 বছর ধরে ক্রমাগত রক্তক্ষরণের রোগে ভুগছিলেন ৷ তিনি সুস্থতার জন্য তার সমস্ত টাকা ডাক্তারদের পিছনে ব্যয় করেছিলেন, কিন্তু তাদের কেউই তাকে সুস্থ করতে পারেনি। 44তিনি যীশুর পিছনে আসলেন এবং তাঁর পোশাকের কিনারা স্পর্শ করলেন ৷ আর সঙ্গে সঙ্গে তার রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেল।
45যীশু বললেন, "কে আমাকে স্পর্শ করেছে?" যীশুর আশেপাশের সকলেই বলেছিল যে তারা তাঁকে স্পর্শ করেনি ৷ পিতর বললেন, “গুরু, আপনার চারপাশে অনেক লোক ভিড় করছে এবং আপনার উপর চাপ চাপি করছে। তাই তাদের মধ্যে যে কেউ আপনাকে স্পর্শ করতে পারে!” 46কিন্তু যীশু বললেন, “আমি জানি যে কেউ আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে স্পর্শ করেছে, কারণ সেই ব্যক্তিকে সুস্থ করার জন্য আমার থেকে শক্তি বেরিয়ে গেছে ৷
47তখন মহিলাটি বুঝতে পারলেন যে তিনি লুকাতে পারবেন না ৷ তিনি কাঁপতে কাঁপতে যীশুর কাছে আসলেন এবং সসম্মানে তাঁর সামনে মাটিতে উবুর হয়ে পড়লেন ৷ আর যেমন অন্যান্য লোকেরা শুনছিল, তিনি ব্যাখ্যা করলেন কেন তিনি যীশুকে স্পর্শ করেছিলেন এবং কীভাবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ভাল হয়ে গিয়েছিলেন। 48আর যীশু তাকে বললেন, “আমার প্রিয় মহিলা, যেহেতু তুমি বিশ্বাস করেছিলে যে আমি তোমাকে সুস্থ করতে পারব, তাই তুমি এখন ভাল আছ। এখন তোমার ঘরে চলে যাও, আর ঈশ্বরের শান্তি তোমার সাথে থাকুক।"
49যীশু যখন সেই মহিলার সাথে কথা বলছিলেন, তখন যায়ীরের বাড়ি থেকে একজন লোক এসে যায়ীরকে বলল, “তোমার মেয়ে মারা গেছে ৷ তাই গুরুর আর বেশি সময় নষ্ট করবেন না।" 50কিন্তু যখন যীশু একথা শুনলেন, তিনি যায়ীরকে বললেন, “ভয় কর না। শুধু আমাকে বিশ্বাস কর, আর সে আবার বেঁচে উঠবে।"
51যখন তিনি বাড়ির বাইরে পৌঁছালেন, তখন যীশু পিতর, যোহন, যাকোব এবং মেয়েটির বাবা ও মা ছাড়া আর কাউকে তাঁর সঙ্গে ঘরের ভিতরে যেতে দিলেন না। 52এবং সেখানে সমস্ত লোকেরা উচ্চস্বরে চিত্কার দেখাচ্ছিল যে মেয়েটি মারা গেছে বলে তারা কতটা দুঃখিত। কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “কান্না বন্ধ কর! সে মরে নি! সে শুধু ঘুমাচ্ছে!” 53আর লোকেরা তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করল কারণ তারা জানত যে মেয়েটি মারা গেছে ৷
54কিন্তু যীশু তার হাত ধরে এবং তাকে ডেকে বললেন, “বালিকা, ওঠ!” 55আর সঙ্গে সঙ্গে সে জীবিত হয়ে উঠল এবং সে উঠে পড়ল ৷ যীশু তাদের বললেন তাকে কিছু খেতে দিতে। 56আর তার বাবা-মা আশ্চর্য হয়ে গেল, কিন্তু যীশু তাদের বললেন, যা ঘটেছে তা অন্য কাউকে এখনই বল না।
91তারপর যীশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে একসাথে ডাকলেন এবং তাদের সকল প্রকার মন্দ আত্মাকে তাড়ানোর এবং লোকদের রোগ থেকে সুস্থ করার অধিকার ও ক্ষমতা দিলেন। 2ঈশ্বর কীভাবে রাজা হিসেবে রাজত্ব করবেন সেই বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করতে তিনি তাদের পাঠিয়ে ছিলেন ৷ তিনি তাদের অসুস্থ লোকেদের সুস্থ করতে বলেছিলেন।
3তারা যাবার আগে তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের যাত্রার জন্য কিছু সঙ্গে নিয়ে যাবে না ৷ হাঁটার জন্য লাঠি বা ভ্রমণকারী ব্যাগ বা খাবার বা টাকা কিছুই নেবে না। অতিরিক্ত জামা-কাপড় নেবে না। 4যে বাড়িতেই প্রবেশ কর না কেন, যতক্ষণ না সেই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছো ততক্ষণ সেই বাড়িতেই থাক।
5যদি কোন শহরের লোকেরা তোমাদেরকে স্বাগত না জানায় তবে তোমাদের সেখানে থাকা উচিত নয়। বরং, সেই শহর ছেড়ে চলে যাও, এবং যখন তোমরা যাবে, তখন তোমাদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেল। তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য এটি তাদের জন্য একটি সতর্কবাণী হবে ৷" 6তারপর যীশুর শিষ্যরা চলে গেলেন এবং অনেক গ্রামে ঘুরে বেড়ালেন ৷ তারা যেখানেই গেলেন, তারা লোকেদের সাথে ঈশ্বরের সুসমাচার সম্বন্ধে কথা বললেন এবং তারা অসুস্থ লোকদের সুস্থ করলেন।
7হেরোদ, গালীল প্রদেশের শাসনকর্তা, যা কিছু ঘটছিল তিনি সব শুনলেন এবং তিনি হতবাক হয়ে গেলেন। কিছু লোক বলছিল যে যোহন বাপ্তাইজক আবার জীবিত হয়েছেন। 8অন্য লোকেরা বলছিল যে ভাববাদী এলিয় আবার আবির্ভূত হয়েছেন ৷ তবুও এখনও অন্য কিছু লোকেরা বলছিল যে, বহুকাল আগের অন্যান্য ভাববাদীদের মধ্যে কোন একজন আবার জীবিত হয়েছেন। 9কিন্তু হেরোদ বললেন, “এটা যোহন হতে পারে না, কারণ আমি তার মাথা কেটে ফেলে ছিলাম। তাহলে এই লোকটি কে? আমি তার সম্পর্কে একইরকম আশ্চর্যজনক জিনিস শুনতে পাচ্ছি! আর তিনি যীশুকে দেখার উপায় খুঁজতে থাকলেন।
10যখন প্রেরিতরা তাদের যাত্রা থেকে ফিরে আসলেন, তারা যীশুকে সবকিছুই বললেন যা তারা করেছিলেন। তারপর তিনি তাদেরকে তাঁর সঙ্গে গোপনে বেথসৈদা শহরে যাওয়ার জন্য নিয়ে গেলেন। 11কিন্তু লোকেরা যখন জানতে পারল যীশু কোথায় গেছেন, তখন তারা তাঁকে সেখানে অনুসরণ করল ৷ তিনি তাদের স্বাগত জানালেন এবং ঈশ্বর কিভাবে রাজা হিসেবে রাজত্ব করতে যাচ্ছেন সে বিষয়ে তাদের সাথে কথা বললেন। আর যারা অসুস্থ ছিল তাদেরও তিনি সুস্থ করলেন।
12যখন বেলা শেষ হয়ে আসছিল, তাই সেই বারোজন শিষ্য তাঁর কাছে এসে বললেন, “দয়া করে এই বিশাল জনতার ভিড়কে বিদায় করুন যাতে তারা আশেপাশের গ্রামে ও খামারগুলিতে গিয়ে কিছু খাবার পেতে পারে এবং থাকার জায়গা খুঁজে নিতে পারে। যেহেতু আমরা এখানে এই ফাঁকা জায়গায় আছি।" 13কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “তোমরা তাদের কিছু খেতে দাও।” তারা বলল, “আমাদের কাছে পাঁচটি ছোট রুটি আর দুটি ছোট মাছ আছে। আমরা কখনই এই সমস্ত লোকের জন্য যথেষ্ট খাবার কিনতে যেতে পারব না! 14তারা এই কথা বলেছিল কারণ সেখানে প্রায় 5000 লোক ছিল ৷ তখন যীশু শিষ্যদের বললেন, “লোকদের দলে দলে বসাও। প্রতিটি দলে প্রায় 50 জন করে রাখো।"
15তখন শিষ্যরা তাই করলেন, আর লোকেরা সবাই বসে গেল ৷ 16তারপর যীশু পাঁচটি রুটি ও দুটি মাছ নিলেন ৷ তিনি স্বর্গের দিকে তাকালেন এবং সেগুলোর জন্য ঈশ্বরের প্রশংসা করলেন। তারপর তিনি রুটি ও মাছকে টুকরো টুকরো করলেন এবং শিষ্যদের হাতে দিলেন যাতে তারা লোকেদের মধ্যে তা ভাগ করে দিতে পারে। 17তারা সকলেই খেয়েছিল, এবং প্রত্যেকের খাওয়ার মতো যথেষ্ট ছিল ৷ পরে শিষ্যরা বেচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করলেন, যা দিয়ে 12 টি ঝুড়ি ভর্তি হয়েছিল!
18যীশু যখন একদিন কাছাকাছি কোথাও তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে একান্তে প্রার্থনা করছিলেন, তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “লোকেরা কি বলে, আমি কে?” 19তারা উত্তরে বলল, “কেউ কেউ বলে যে আপনি বাপ্তিষ্মদাতা যোহন, কিন্তু অন্যরা বলে যে আপনিই ভাববাদী এলিয়, তবুও এখনও অন্যরা বলে যে, বহুকাল আগের অন্যান্য ভাববাদীদের মধ্যে কোন একজন আবার জীবিত হয়েছেন।
20তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের কি মনে হয়? তোমরা কী বল আমি কে?" পিতর উত্তর দিলেন, "আপনি সেই মশীহ, যিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।" 21তখন যীশু তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, তারা যেন এ কথা এখনই কাউকে না বলে ৷ 22তারপর তিনি বললেন, “আমি, মনুষ্যপুত্র, আমাকে অনেক দুঃখ ভোগ করতে হবে: প্রাচীনরা, প্রধান যাজকরা এবং ইহুদী আইনের শিক্ষকরা আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং আমাকে হত্যা করবে। তারপর, এই ঘটনার তিন দিনের দিন, আমি আবার জীবিত হয়ে উঠব।”
23তারপর তিনি তাদের সকলকে বললেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি আমার শিষ্য হতে চাও, তবে তোমরা যা করতে চাও তাই করলে হবে না ৷ বরং, প্রতিদিন তোমাদের কষ্টভোগ করার জন্য ইচ্ছুক থাকতে হবে, এমনকি তোমাদের জীবন বিসর্জন দিতে হতে পারে। এভাবেই আমার শিষ্য হতে হবে। 24তোমাদের অবশ্যই তা করতে হবে কারণ যারা তাদের নিজেদের জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করে তারা তা চিরতরে হারাবে, কিন্তু যারা আমার শিষ্য হওয়ার জন্য তাদের জীবন ত্যাগ করে তারা চিরকালের জন্য তাদের জীবন রক্ষা করবে। 25সর্বোপরি, তোমরা যদি এই পৃথিবীতে সবকিছু লাভ কর কিন্তু তারপর সবকিছু হারিয়ে শেষ হয়, অথবা এমনকি নিজেকে ধ্বংস করে শেষ হয়, তবে তাতে তোমাদের কী লাভ হবে?
26ধরুন কেউ যদি বলতে ভয় পায় যে সে আমাকে বিশ্বাস করে এবং আমার শিক্ষা অনুসরণ করে। তবে, আমি মনুষ্যপুত্র, বলব যে এমন ব্যক্তি আমার নয় ৷ আর এটা তখন ঘটবে, যখন আমি আমার মহিমায় এবং ঈশ্বর পিতার মহিমায় এবং পবিত্র স্বর্গদূতেদের মহিমায় ফিরে আসব ৷ 27কিন্তু তোমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারো: তোমাদের মধ্যে কিছু জন যারা এখন এখানে দাঁড়িয়ে আছো তোমরা মরবে না যতক্ষণ না তোমরা ঈশ্বরকে রাজা হিসেবে রাজত্ব করতে দেখ!
28আর যীশু এই কথাগুলি বলার প্রায় আট দিন পরে, তিনি পিতর, যোহন ও যাকোবকে সঙ্গে নিলেন এবং সেখানে প্রার্থনা করার জন্য একটি পাহাড়ে উঠলেন ৷ 29আর যখন তিনি প্রার্থনা করছিলেন, তখন তাঁর মুখের চেহারা খুব বদলে গেল এবং তাঁর পোশাক উজ্জ্বল হয়ে উঠতে লাগল।
30হঠাতই, সেখানে দুজন বহুকাল আগের ভাববাদী যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন ৷ তারা ছিলেন মোশি এবং এলিয়। 31এই মানুষগুলি মহিমায় পরিবেষ্টিত হয়ে আবির্ভূত হলেন ৷ তারা যীশুর সাথে কথা বলেছিলেন যে তিনি কীভাবে মারা যাবেন ৷ এটি এমন কিছু ছিল যা যিরুশালেমে খুব তারাতারি ঘটতে চলেছিল ৷
32আর পিতর ও অন্যান্য শিষ্যরা যারা তাঁর সঙ্গে ছিল তারা ঘুমে কাতর ছিলেন ৷ কিন্তু যখন তারা পুরোপুরি জেগে উঠলেন, তখন তারা যীশুর উজ্জ্বল রূপ দেখতে পেলেন। তারা মোশি এবং এলিয়কেও তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। 33আর মোশি এবং এলিয় যখন যীশুকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তখন পিতর তাঁকে (যীশুকে) বললেন, “গুরু, আমাদের এখানে থাকা ভাল! আমাদের তিনটি আশ্রয়স্থল তৈরী করা উচিত, একটি আপনার জন্য, একটি মোশির জন্য এবং একটি এলিয়ের জন্য!” কিন্তু তিনি সত্যিই বুঝতে পারেনি যে তিনি কি বলছেন।
34তিনি যখন এই কথাগুলো বলছিলেন, তখন একটা মেঘ এসে তাদের ঢেকে দিল। শিষ্যরা ভয় পেলেন যখন সেই মেঘ তাদের ঢেকে দিল। 35ঈশ্বরের কন্ঠ মেঘের মধ্য থেকে তাদের সঙ্গে কথা বললেন, “ইনি আমার পুত্র, যাকে আমি মনোনীত করেছি; তাঁর কথা শোন!" 36যখন সেই কন্ঠস্বরের কথা বলা শেষ হল, তিনজন শিষ্য দেখলেন যে সেখানে কেবল যীশু একাই রয়েছেন ৷ এসব তারা নিজেদের মধ্যেই রেখে দিলেন। তারা যা দেখেছিল সে বিষয়ে অনেকদিন তারা কাউকে কিছু বলে নি।
37আর পরের দিন, যখন তারা পর্বত থেকে নীচে নেমে আসলো, অনেক লোক যীশুর সঙ্গে দেখা করল ৷ 38হঠাৎ ভিড়ের মধ্য থেকে একজন লোক ডেকে উঠল, “গুরু, আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি, আমার ছেলেকে সাহায্য করার জন্য কিছু করুন! সে আমার একমাত্র সন্তান। 39এখানে যা ঘটছে। একটি মন্দ আত্মা হঠাৎ করে তাকে ধরে এবং তাকে চিৎকার করতে বাধ্য করে। এটি ভয়ানক ভাবে তাকে নাড়ায় এবং তার মুখে ফেনা সৃষ্টি হয়। এই আত্মা আমার সন্তানকে খুব কমই ছেড়ে যায় এবং যখন এটি ছেড়ে যায়, তখন এটি তাকে মারাত্মকভাবে আহত করে। 40আমি আপনার শিষ্যদের অনুরোধ করেছিলাম যেন তারা মন্দ আত্মাকে তার মধ্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আদেশ করে, কিন্তু তারা তা করতে পারেনি!
41জবাবে যীশু বললেন, “এই প্রজন্মের লোকেরা বিশ্বাস করে না, আর তাই তাদের চিন্তাভাবনাও অসৎ! তোমাদের বিশ্বাস করার আগে আর কতদিন আমাকে তোমাদের সাথে থাকতে হবে?" তারপর তিনি ছেলেটির বাবাকে বললেন, "তোমার ছেলেকে এখানে আমার কাছে নিয়ে এসো!" 42তারা যখন ছেলেটিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসছিল, সেই সময় মন্দ আত্মাটি ছেলেটিকে মাটিতে ফেলে দিল এবং মারাত্মকভাবে নাড়া দিতে লাগলো ৷ কিন্তু যীশু মন্দ আত্মাকে ধমক দিলেন এবং ছেলেটিকে সুস্থ করলেন। তারপর তাকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
43ঈশ্বর যে মহান ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন তাতে সেখানকার সমস্ত লোকেরা আশ্চর্য হয়ে গেয়েছিল ৷
যীশুর সমস্ত অলৌকিক কাজ দেখে যখন তারা সবাই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, 44“আমি তোমাদেরকে যা বলতে যাচ্ছি তা মনোযোগ দিয়ে শোন, কারণ শীঘ্রই কেউ আমাকে, মনুষ্যপুত্রকে, শত্রুদের হাতে তুলে দেবে।" 45কিন্তু শিষ্যরা বুঝতে পারলেন না তিনি এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন ৷ আর ঈশ্বরও তাদের বুঝতে বাধা দিয়েছেন যাতে তারা এখনই বুঝতে না পারে যে তিনি কী বলতে চেয়েছিলেন এবং তিনি যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে তারাও তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে ভয় পেয়েছিলেন।
46কিছুদিন পরে, শিষ্যরা নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক করতে লাগলেন যে তাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 47কিন্তু যীশু জানতেন যে তারা কি ভাবছে, তাই তিনি একটি শিশুকে নিয়ে আসলেন এবং শিশুটিকে তাঁর পাশে দাঁড় করালেন ৷ 48তিনি তাদের বললেন, “কেউ যদি আমার কারণে এইরকম একটি শিশুকে গ্রহণ করে, তবে তা আমাকে গ্রহণ করার সমান। আর কেউ যদি আমাকে গ্রহণ করে, তবে তা ঈশ্বরকে গ্রহণ করার সমান, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন ৷ মনে রেখো, তোমাদের মধ্যে যাকে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়, তাকেই ঈশ্বর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।"
49যোহন যীশুকে বললেন, “গুরু, আমরা একজন লোককে দেখেছি যে আপনার নাম ব্যবহার করে লোকদের মধ্য থেকে মন্দ আত্মাদের বেরিয়ে আসার নির্দেশ দিচ্ছিল। কিন্তু আমরা তাকে এটা করা বন্ধ করতে বলেছিলাম, কারণ সে আমাদের মত আপনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে না।” 50কিন্তু যীশু যোহনকে বললেন, “তাকে তা করতে বারণ কর না! কেউ যদি এমন কিছু না করে যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর, তবে সে যা করছে তা তোমাদের জন্য সহায়ক!” 51আর যখন সেই সময় খুব কাছে চলে আসলো যখন ঈশ্বর তাঁকে (যীশুকে) স্বর্গে ফিরিয়ে নেবেন, তখন যীশু যিরুশালেমে যাওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্প করলেন ৷ 52তিনি তাঁর আগে কয়েকজন বার্তাবাহককে পাঠালেন ৷ তারা যাত্রা করে শমরিয়া অঞ্চলের একটি গ্রামে প্রবেশ করলেন আর সেখানে তারা তাঁর থাকার জন্য ব্যবস্থা করার চেষ্টা করলেন। 53কিন্তু শমরীয়রা যীশুকে তাদের গ্রামে থাকতে দিল না, কারণ তিনি যিরুশালেমে যাচ্ছিলেন ৷
54তাঁর দুজন শিষ্য, যাকোব ও যোহন,রেগে গেল যখন তারা দেখল যে শমরীয়রা তাদের স্বাগত জানাবে না ৷ তাই তারা যীশুকে জিজ্ঞাসা করল, "প্রভু, আপনি কি চান যে আমরা স্বর্গ থেকে আগুন নেমে আসার এবং এই লোকদের ধ্বংস করার নির্দেশ দিই?" 55কিন্তু যীশু তাদের দিকে ফিরলেন এবং তাদের কঠোরভাবে বললেন যে তাদের এটা বলা অন্যায়। 56তাই তাঁরা অন্য গ্রামে গেলেন ৷
57যীশু ও তাঁর শিষ্যরা যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন, তখন একজন তাঁকে বলল, "আপনি যেখানেই যাবেন আমি আপনার সঙ্গে যাব ৷" 58যীশু উত্তর দিলেন, "শেয়ালের বাস করার জন্য মাটিতে গর্ত আছে, আর পাখিদের বাসা আছে, কিন্তু আমি, মনুষ্যপুত্র, আমার ঘুমানোর জন্য কোন ঘর নেই!"
59যীশু অন্য একজনকে বললেন, "আমার সাথে এসো!" কিন্তু সেই লোকটি বলল, “প্রভু, আগে আমাকে বাড়ি যেতে দিন এবং আমার বাবাকে কবর দিতে দিন।” 60কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “মৃতদের তাদের নিজের নিজের মৃতদেহকে কবর দিতে দাও। আমি চাই তুমি যাও এবং সব জায়গার লোকেদের বল যে তারা তাদের জীবনে ঈশ্বরের রাজত্ব লাভ করতে পারে।
61অন্য কেউ বলল, "প্রভু, আমি আপনার সাথে আসব এবং আপনার শিষ্য হব, কিন্তু প্রথমে আমাকে আমার বাড়িতে যেতে দিন আর আমার পরিবারকে বিদায় জানাতে দিন।" 62যীশু তাকে বললেন, “যে কোন লোক যে একজন কৃষকের মতো যে তার জমিতে পিছনে তাকিয়ে লাঙ্গল করার চেষ্টা করে সে তাঁর শাসক হিসাবে ঈশ্বরের সেবা করতে সক্ষম নয়।”
101তারপরে, যীশু আরও 72 জন শিষ্যকে যেতে এবং লোকেদেরকে তাঁর কথা শোনার জন্য প্রস্তুত করতে নিযুক্ত করলেন ৷ তিনি তাদের জোড়ায় জোড়ায় করে তাঁর আগে প্রত্যেক শহরে ও গ্রামে পাঠালেন যেখানে তিনি নিজে যেতে চাইতেন। 2তিনি তাদের বললেন, “অনেক লোক আমাকে বিশ্বাস করতে প্রস্তুত, কিন্তু তোমাদের মধ্যে অল্প কয়েকজনকেই আমি, তাদের সাহায্য করতে পাঠাতে পারি। তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর , যিনি চান যে এই সমস্ত লোকে বিশ্বাস করুক, এবং তাঁর কাছে আরও শিষ্যদের জন্য অনুরোধ কর যারা যেতে পারে এবং তাদের সাহায্য করতে পারে ৷
3এখন যাও, কিন্তু মনে রেখো যে আমি তোমাদেরকে বাইরে পাঠাচ্ছি আমার কথা সেই লোকদের কাছে বলার জন্য যারা তোমাদের শত্রুতা করবে। 4কোনো টাকা সঙ্গে আনবে না। একটি বোঁচকায় তোমার সঙ্গে অনেক কিছু আনবে না ৷ অতিরিক্ত জুতো আনবে না। পথে থামবে না এবং লোকেদের সাথে কথা বলবে না।
5যখনই তোমরা কোন বাড়িতে প্রবেশ করবে, প্রথমেই, সেখানে যারা বাস করে তাদের বল, 'ঈশ্বর এই বাড়ির সকলকে শান্তি দান করুন!' 6যারা সেখানে বসবাস করে তারা যদি ঈশ্বরের শান্তির আকাঙ্খা করে, তবে তারা সেই শান্তি অনুভব করবে যা তোমরা তাদেরকে দান করছো। কিন্তু যদি তারা ঈশ্বরের শান্তির আকাঙ্খা না করে, তাহলে তোমরা নিজেরাই সেই শান্তি অনুভব করবে। 7সেই গ্রাম ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত ঐ বাড়িতেই থাকো। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেও না। তারা তোমাদের জন্য যা কিছু দেয় তাই খাও এবং পান কর, কারণ একজন শ্রমিক তার কাজের জন্য পারিশ্রমিক পাওয়ার যোগ্য।
8তোমরা যদি কোন শহরে প্রবেশ করে এবং সেখানকার লোকেরা তোমাদেরকে স্বাগত জানায়, তবে তারা তোমাদের জন্য যা খাবার দেবে তা খেও। 9সেই শহরের যারা অসুস্থ তাদের সুস্থ কর। সবাইকে বলো, 'তোমরা খুব কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছো, যখন ঈশ্বর সর্বত্র রাজা হিসেবে রাজত্ব করবেন তখন এটি কেমন হবে ৷'
10কিন্তু তোমরা যদি কোনও শহরে প্রবেশ কর এবং সেখানকার লোকেরা তোমাদেরকে স্বাগত না জানায়, তবে তার প্রধান রাস্তায় যাও এবং বল, 11'তোমাদের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী স্বরূপ, আমাদের পায়ে লেগে থাকা ধুলোটাও আমরা ঝেড়ে দেব যেহেতু আমরা তোমাদের শহর ছাড়ছি। কিন্তু তোমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, ঈশ্বর যখন রাজা হিসেবে সর্বত্র রাজত্ব করবেন তখন তা কেমন হবে যা তোমরা খুব কাছ থেকে দেখেছ!' 12আমি তোমাদের জানতে চাই যে ঈশ্বর যখন সকলের বিচার করবেন, তখন ঈশ্বর, সদোম শহরে বহু বছর আগে বসবাসকারী দুষ্ট লোকেদের চেয়ে ঐ শহরের লোকদের আরও বেশি কঠিন শাস্তি দেবেন!
13তোমরা যারা কোরাসীন ও বৈৎসৈদা শহরে বাস কর তাদের জন্য কতই না ভয়ঙ্কর হবে! আমি এই কথা বলছি কারণ আমি যখন তোমাদের শহরে ছিলাম তখন বড় অলৌকিক কাজ করেছিলাম ৷ আমি যদি সোর ও সীদোনের প্রাচীন শহরগুলিতে একই রকম অলৌকিক কাজ করতাম, তবে দুষ্ট লোকেরা যারা সেখানে বাস করত তারা তাদের পাপের জন্য খুবই দুঃখিত হত ৷ তারা মোটা কাপড় পড়ে মাটিতে বসে মাথায় ছাই লাগিয়ে তা প্রকাশ করত। 14তাই ঈশ্বর যখন সকলের বিচার করবেন, তখন তিনি তোমাদেরকে সোর ও সীদোনে বসবাসকারী দুষ্ট লোকদের চেয়েও আরও কঠোর শাস্তি দেবেন ৷ 15কফরনাহূম শহরে যারা বাস কর, তাদেরও আমার কিছু বলার আছে ৷ তোমরা ভাবতে পারো যে ঈশ্বর তোমাদেরকে মহান পুরস্কার দিতে যাচ্ছেন। না, ঈশ্বর তোমাদেরকে মোটেও পুরস্কৃত করবেন না!”
16যীশু শিষ্যদের আরও বললেন, "যারা তোমাদের কথা শোনে তারা , প্রকৃতপক্ষে, আমার কথা শুনছে ৷ যারা তোমাদের কথা অগ্রাহ্য করে তারা , প্রকৃতপক্ষে, আমাকে অগ্রাহ্য করছে ৷ আর যারা আমাকে অগ্রাহ্য করে , প্রকৃতপক্ষে, তারা সেই ঈশ্বরকে অগ্রাহ্য করছে যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন।
17সেই 72 জন লোক যাদের যীশু নিযুক্ত করেছিলেন তারা গেলে এবং তিনি তাদের যা করতে বলেছিলেন তাই করল ৷ যখন তারা ফিরে আসলো, তখন তারা খুব আনন্দিত ছিল ৷ তারা বলল, "প্রভু, এমনকি ভূতরাও আমাদের বাধ্য হয়েছে, যখন আমরা আপনার কর্তৃত্বের দ্বারা, তাদের আদেশ দিয়েছিলাম লোকদের ছেড়ে যেতে!" 18যীশু তাদের বললেন, “তোমরা যখন দূরে এসব করছিলে, তখন আমি শয়তানকে দেখেছি বিদ্যুৎ নামার মত হঠাৎ করে এবং দ্রুতগতিতে তার অবস্থান হারাতে! 19শোন! আমি তোমাদের মন্দ আত্মাকে পরাজিত করার ক্ষমতা দিয়েছি। এমনকি আমি তোমাদেরকে আমাদের শত্রু শয়তানকে পরাস্ত করার জন্য যথেষ্ট শক্তি দিয়েছি। কিছুতেই তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না। 20কিন্তু মন্দ আত্মারা অবশ্যই তোমাদের বাধ্য হবে বলে শুধু আনন্দ করো না ৷ তোমাদের আরও বেশি আনন্দ করা উচিত যে ঈশ্বর তোমাদের নামগুলি স্বর্গে লিখে রেখেছেন, কারণ এর অর্থ হল তোমরা চিরকাল ঈশ্বরের সাথে থাকবে।
21ঠিক তখনই, পবিত্র আত্মা যীশুকে মহা আনন্দ দিলেন ৷ তিনি বললেন, “হে ঈশ্বর আমার পিতা, তুমি স্বর্গ ও পৃথিবীর সমস্ত কিছুর প্রভু। আমি তোমার প্রশংসা করি যে তুমি এমন লোকেদেরকে বাধা দিয়েছে যারা মনে করে যে তারা বিষয় বোঝার ব্যপারে বুদ্ধিমান। পরিবর্তে, তুমি সেগুলিকে এমন লোকদের কাছে প্রকাশ করেছো যারা তোমার সত্যকে ছোট বাচ্চাদের মতো সহজে গ্রহণ করে। হ্যাঁ, পিতা, তুমি তা করেছো কারণ এটি তোমাকে এরকম করতে খুশি করেছে।
22ঈশ্বর, আমার পিতা, আমাকে সবকিছু দিয়েছেন। একমাত্র আমার পিতাই আমাকে জানেন, তাঁর পুত্রকে। এবং শুধুমাত্র আমি, তাঁর পুত্র, সত্যিই আমার পিতাকে জানি। কিন্তু আমি কিছু লোকদের তাঁকে দেখানোর জন্য মনোনীত করেছি যে তিনি কে।"
23তারপর যীশু শুধুমাত্র তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি যা করছি তা তোমাদের দেখতে দিয়ে ঈশ্বর তোমাদেরকে একটি মহান উপহার দিয়েছেন! 24আমি চাই তোমরা জান যে অনেক ভাববাদী ও রাজারা সেইসব দেখতে চেয়েছেন যা তোমরা আমাকে করতে দেখছো ৷ কিন্তু তারা সেগুলো দেখতে পায়নি, কারণ তারা অনেক আগে বেঁচে ছিল। তোমরা আমাকে যে কথাগুলো বলতে শুনছ তা তারা শুনতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সেই কথাগুলি শুনতে পায়নি, কারণ তারা অনেক আগে বেঁচে ছিল।"
25সেখানে একজন লোক ছিলেন যিনি ইহুদীদের আইন শিক্ষা দিতেন। তিনি যীশুকে একটি কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার দ্বারা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন ৷ তাই তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, "গুরু, ঈশ্বরের সাথে চিরকাল থাকার জন্য আমাকে কী করতে হবে?" 26যীশু তাকে বললেন, “ঈশ্বরের দেওয়া আইনে মোশি যা লিখেছিলেন তা তুমি পড়েছ। এই আইনগুলি কি বলে?" 27লোকটি উত্তর দিল, “তোমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে, তোমার সমস্ত প্রাণ দিয়ে, তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে এবং তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করো। এবং তোমার প্রতিবেশীকে ততটা ভালোবাস যতটা তুমি নিজেকে প্রেম করো।" 28যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক উত্তর দিয়েছো। তুমি যদি এই সমস্ত কিছু কর, তবে তুমি চিরকাল ঈশ্বরের সাথে বাস করবে।"
29কিন্তু লোকটি দেখাতে চেয়েছিল যে ঈশ্বর তাকে পছন্দ করবেন ৷ তাই তিনি যীশুকে বললেন, " কোন লোকেরা আমার প্রতিবেশী যাদের আমায় ভালোবাসা হবে?" 30যীশু উত্তর দিলেন, “একদিন এক ইহুদি লোক যিরুশালেম থেকে যিরীহোর রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। কিছু ডাকাত তাকে আক্রমন করে। তারা লোকটির বেশিরভাগ জামাকাপড় এবং তার কাছে যাকিছু ছিল তা নিয়ে যায়। তারা তাকে ততক্ষণ মারলো যতক্ষণ না পর্যন্ত সে আধমরা হলো। তারপর তারা তাকে সেখানে ছেড়ে চলে গেল।
31আর সেই রাস্তা দিয়ে একজন ইহুদী যাজক যাচ্ছিলেন ৷ যখন সে লোকটিকে দেখল, তাকে সাহায্য করার পরিবর্তে, সে রাস্তার অপর পাশ দিয়ে চলে গেল। 32একইভাবে, একজন লেবীয়ও যে ঈশ্বরের মন্দিরে কাজ করে সেই জায়গায় এসে লোকটিকে দেখতে পেল ৷ কিন্তু সেও রাস্তার অপর পাশ দিয়ে চলে গেল।
33তারপর শমরিয়া অঞ্চল থেকে একজন লোক সেই রাস্তা ধরে এল যেখানে লোকটি পড়ে ছিল ৷ যখন সে লোকটিকে দেখল, তার জন্য করুণা হল। 34সে তার কাছে গেল এবং তার ক্ষতস্থানে ওলিভ তেল ও আঙ্গুর রস লাগালেন যাতে সেই ক্ষতগুলি সুস্থ হয়৷ সে ক্ষতগুলির চারপাশে কাপড় জড়িয়ে দিলেন। তারপর সে লোকটিকে তার নিজের গাধার পিঠে বসিয়ে একটি সরাইখানায় নিয়ে এল এবং তার যত্ন নিল। 35পরদিন সকালে তিনি সরাইখানার রক্ষককে দুটি রৌপ্যমুদ্রা দিয়ে বললেন, ‘এই লোকটির যত্ন নিও। তার যত্ন নেওয়ার জন্য যদি তোমায় এই টাকার চেয়েও বেশি খরচা করতে হয়, তবে পরে আমি যখন ফিরে আসবো তখন আমি তোমাকে ফেরত দেব।’’ 36তারপর যীশু জিজ্ঞাসা করলেন, “তিনজন লোক সেই লোকটিকে খুঁজে পেয়েছিল যাকে দস্যুরা আক্রমণ করেছিল। তাদের মধ্যে কাকে তুমি সেই লোকটির প্রকৃত প্রতিবেশী বলবে?” 37ব্যবস্থার শিক্ষক উত্তর দিলেন, “সেই যে তার প্রতি দয়ার আচরণ করেছিল।” যীশু তাকে বললেন, "এটা ঠিক ৷ তাই তুমি যাও এবং তোমার সাহায্যের প্রয়োজন এমন কারো সাথে সেরকম আচরণ কর।" 38যীশু ও তাঁর শিষ্যরা চলতে চলতে একটি গ্রামে প্রবেশ করলেন ৷ সেখানে মার্থা নামে এক মহিলা তার বাড়িতে আসার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানালেন। 39তার বোন, যার নাম ছিল মরিয়ম, সে যীশুর পায়ের কাছে বসেছিল এবং তিনি যা শিক্ষা দিচ্ছিলেন তা শুনছিল। 40কিন্তু মার্থা তাদের সকলের খাবার প্রস্তুত করার জন্য চিন্তা করছিল ৷ সে যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “প্রভু, আমার বোন আমাকে সবকিছু একা প্রস্তুত করার জন্য ছেড়ে দিয়েছে। আপনি অবশ্যই জানেন যে এটি ঠিক নয়। দয়া করে তাকে বলুন আমায় সাহায্য করতে! 41কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “মার্থা, মার্থা, তুমি অনেক বিষয়ে খুব চিন্তিত। 42কিন্তু একটি জিনিস যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ তা হল আমি যা শিক্ষা দিচ্ছি তা শোনা ৷ যেহেতু মরিয়ম সবচেয়ে ভালো কাজটি বেছে নিয়েছে, তাই আমি তাকে অন্য কিছু করতে বলব না।”
111একদিন যীশু একটি নির্দিষ্ট জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন। তিনি যখন (প্রার্থনা) শেষ করলেন, তখন তাঁর একজন শিষ্য তাঁকে বললেন, “প্রভু, কীভাবে প্রার্থনা করতে হয় তা আমাদের শেখান। যোহন বাপ্তাইজক তার নিজের শিষ্যদের জন্য এটি করেছিলেন এবং আমরা চাই আপনি আমাদের জন্য এটি করুন।" 2তিনি তাদের বললেন, “তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন এরকমভাবে বল: ‘পিতা, যেন সমস্ত লোক তোমার নামকে পবিত্র বলে সম্মান করে। তুমি শীঘ্রই সর্বত্র সমস্ত মানুষের ওপর রাজত্ব কর। 3অনুগ্রহ করে আমাদের প্রয়োজনের প্রতিদিনের খাবার আমাদের দাও। 4আমরা যা অন্যায় করেছি তার জন্য দয়া করে আমাদের ক্ষমা কর। আর যারা আমাদের সাথে অন্যায় করেছে আমরা নিজেরা সেই মানুষদের ক্ষমা করব। সাহায্য কর যখন কোন কিছু আমাদের প্রলুব্ধ করে তখন যেন আমরা পাপ না করি ৷'”
5তারপর তিনি তাদের বললেন, “ধর, মাঝরাতে তোমাদের মধ্যে একজন এক বন্ধুর বাড়িতে গেল ৷ তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকছো, 'বন্ধু, আমাকে দয়া করে তিনটি রুটি ধার দাও! 6আমার আরেকজন বন্ধু যে যাত্রা করছে সে এইমাত্র আমার বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু তাকে দেবার মত আমার কাছে কোনো খাবার নেই!’ 7এবং মনে কর যে সে ঘরের ভেতর থেকে উত্তর দিল, ‘আমাকে বিরক্ত করো না! আমি ইতিমধ্যে দরজা বন্ধ করেছি, এবং আমার পুরো পরিবার বিছানায় আছে। এখন আমার পক্ষে উঠা এবং তোমাকে কিছু দেওয়া খুব কঠিন হবে!’ 8আমি তোমাকে বলছি, সে হয়তো উঠতে এবং তার বন্ধুকে খাবার দিতে চাইবে না শুধুমাত্র সে তার বন্ধু বলে। কিন্তু যদি সে বার বার চাইতেই থাকে, তবে ভিতরের লোকটি অবশ্যই উঠবে এবং তার যা যা প্রয়োজন তা তাকে দেবে। 9তাই আমি তোমাদেরকে বলছি: তোমাদের যা প্রয়োজন তা ঈশ্বরের কাছে চাইতে থাকো, এবং তিনি তোমাদের তা দেবেন। ঈশ্বরের কাছে সেই জিনিসগুলি খুঁজতে থাকো, এবং তোমরা সেগুলি পাবে ৷ তোমাদের জন্য জিনিসগুলি সম্ভব করার জন্য ঈশ্বরকে বল, এবং তিনি তোমাদের হয়ে কাজ করবেন। 10তোমাদের এটা করা উচিৎ কারণ যে কেউ ঈশ্বরের কাছে অবিরত তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি চাইবে সেগুলি সে পাবে। যে কেউ ঈশ্বরের কাছ থেকে সেই জিনিসগুলি খুঁজবে সে তা পাবে ৷ যদি কেউ ঈশ্বরের কাছে তার জন্য জিনিসগুলি সম্ভব করার জন্য অনুরোধ করে, ঈশ্বর তার হয়ে কাজ করবেন। 11ধরো, তোমাদের মধ্যে একজন পিতার একটি ছেলে ছিল, যে তোমার কাছে একটি মাছ খেতে চেয়েছিল ৷ তুমি নিশ্চই তার পরিবর্তে একটি বিষাক্ত সাপ দেবে না! 12ধরো সে তোমার কাছে একটি ডিম চেয়েছে ৷ তুমি নিশ্চই তার পরিবর্তে তাকে একটি কাঁকড়া বিছে দেবে না! 13যদিও তোমরা পাপী, তবুও তোমরা জানো কেমনভাবে তোমাদের সন্তানদের ভাল উপহার দিতে হয় ৷ তাই এটা আরও কত নিশ্চিত যে তোমাদের স্বর্গের পিতা (তোমাদের) পবিত্র আত্মা দেবেন, যারা তাঁর কাছে চাইবে।”
14একদিন যীশু একটি ভূতকে তাড়াচ্ছিলেন যে একজন মানুষকে কথা বলতে বাধা দিচ্ছিল। এবং যীশু সেই ভূতকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর, লোকটি কথা বলতে শুরু করল। এতে সেখানে উপস্থিত লোকের ভিড় অবাক হয়ে গেল। 15কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “এটি বেলসবুল, ভূতদের অধিপতি, যে এই লোকটিকে ভূত তাড়াতে সক্ষম করেছে!” 16আর সেখানে অন্য লোকেরা তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ৷ তারা দাবি করেছিল যে ঈশ্বর তাঁকে পাঠিয়েছেন তা প্রমাণ করার জন্য তিনি একটি অলৌকিক কাজ করুন। 17কিন্তু তিনি জানতেন তারা কি ভাবছে ৷ তাই তিনি তাদের বললেন, “যদি একই জাতির লোকেরা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তবে তারা তাদের জাতিকে ধ্বংস করবে। যদি একই পরিবারের লোকেরা একে অপরের বিরোধিতা করে, তবে তারা তাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দেবে। 18একইভাবে, যদি শয়তান এবং তার মন্দ আত্মারা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করত, তবে তাদের উপর তার শাসন অবশ্যই বেশিদিন পর্যন্ত থাকবে না! আমি এটা বলছি কারণ তোমরা বলছো যে আমি ভূতেদের অধিপতির শক্তিতে ভূতদের ছাড়াই! 19যদি এটা সত্য হয় যে বেলসবুল আমাকে ভূত তাড়াতে সক্ষম করছে, তাহলে এটাও সত্য যে সে তোমাদের শিষ্যদেরকে ভূত তাড়াতে সক্ষম করছে ৷ কিন্তু তোমরা জানো তা সত্য নয় ৷ তাই তোমাদের নিজেদের শিষ্যরাই প্রমাণ করে যে তোমরা ভুল ৷ 20আমি অবশ্যই ঈশ্বরের শক্তিতে ভূতদের তাড়াচ্ছি ৷ এর অর্থ হল ঈশ্বর তোমাদের উপর রাজত্ব করতে শুরু করেছেন।”
21যীশু আরও বললেন, “যখন একজন শক্তিশালী লোক যার কাছে অনেক অস্ত্র রয়েছে সে তার নিজের ঘর পাহারা দেয়, তখন কেউ ভিতরের জিনিসগুলি চুরি করতে পারে না ৷ 22কিন্তু যখন তার চেয়ে শক্তিশালী অন্য কেউ সেই লোকটিকে আক্রমণ করে এবং তাকে বশীভূত করে, আর সে সেই অস্ত্রগুলি কেড়ে নেয় যার উপর লোকটি নির্ভর করছিল। তারপর সেই লোকটির বাড়ি থেকে সে যা খুশি চুরি করতে পারে। 23যে কেউ আমাকে সমর্থন করে না সে আমার বিরোধিতা করছে ৷ আর যে কেউ লোকেদের আমার কাছে আনছে না সে তাদের আমার কাছ থেকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে।”
24তখন যীশু বললেন, "কোন মন্দ আত্মা হয়তো কাউকে ছেড়ে যায় এবং নির্জন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় অন্য কাউকে খোঁজে তার মধ্যে বাস করার জন্য ৷ যদি এটি সেখানে কাউকে না পায়, তবে এটি বলতে পারে, 'আমি সেই লোকটির মধ্যে ফিরে যাব যার মধ্যে আমি বাস করতাম!' 25তাই এটি ফিরে যায় এবং সেই লোকটিকে এমন একটি ঘরের মত পায় যা কেউ ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করেছে এবং সাজিয়েছে , কিন্তু সেখানে কেউ থাকে না ৷ 26তখন এই মন্দ আত্মা গিয়ে আরও সাতটি আত্মা পায় যারা তার চেয়েও মন্দ। তারা সবাই সেই ব্যক্তির মধ্যে প্রবেশ করে এবং তার মধ্যে বসবাস শুরু করে। ওই ব্যক্তির অবস্থা আগে খারাপ ছিল, এখন আরও খারাপ হয়ে গেল।”
27আর যীশু যখন এই কথা বললেন, তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন মহিলা যিনি শুনছিলেন উচ্চস্বরে তাঁকে ডেকে বললেন, "যে স্ত্রীলোক তোমাকে জন্ম দিয়েছে এবং যে তোমাকে লালন-পালন করেছে তার প্রতি ঈশ্বর সন্তুষ্ট!" 28তখন তিনি উত্তর দিলেন, “ঈশ্বর তাদের প্রতি আরও বেশি খুশি হন, যারা তাঁর বাণী শোনে এবং মেনে চলে!”
29আরও অনেক লোক যীশুর চারপাশের ভিড়ের সাথে যোগ দিতে আসছিল ৷ তিনি বলেন, “এই সময়ে যারা বসবাস করছে তারা খারাপ মানুষ। তারা চায় আমি একটা অলৌকিক কাজ করি এটা প্রমাণ করতে যে আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছি৷ কিন্তু একটিমাত্র প্রমাণ তারা দেখতে পাবে তা হল যোনার মতো একটি অলৌকিক ঘটনা। 30অনেক আগে ঈশ্বর যোনার জন্য একটি অলৌকিক কাজ করেছিলেন যা নীনবী শহরের লোকেদের দেখাতে যে তিনি তাকে পাঠিয়েছেন। একইভাবে, ঈশ্বর আমার জন্য, অর্থাৎ মনুষ্যপুত্রের জন্য, একই রকম অলৌকিক কাজ করবেন, এখনকার জীবিত লোকদের দেখানোর জন্য যে তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। 31অনেক আগে শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনার জন্য শিবার রাণী অনেক দূর থেকে যাত্রা করেছিলেন। এখন শলোমনের চেয়েও মহান একজন এখানে তোমাদের সাথে আছে। কিন্তু আমি যা বলছি তা তোমরা ভালো করে শোন নি ৷ তাই, ঈশ্বর যখন সমস্ত লোকের বিচার করবেন, তখন সে উঠবে এবং এখন যারা জীবিত আছে তাদের দোষী সাব্যস্ত করবে ৷ 32যোনা যখন তাদের কাছে প্রচার করেছিলেন তখন প্রাচীন নীনবী শহরে বসবাসকারী লোকেরা তাদের পাপময় পথ থেকে ফিরেছিল। আর এখন আমি, যে যোনার চেয়েও মহান, এখানে এসেছি এবং তোমাদের কাছে প্রচার করেছি ৷ কিন্তু তোমরা তোমাদের পাপপূর্ণ পথ থেকে ফিরছো না ৷ সেইজন্য, ঈশ্বর যখন সমস্ত লোকের বিচার করবেন, তখন যে সব লোকেরা নীনবীতে বসবাস করত তারা উঠবে এবং এখন যারা জীবিত আছে তাদের দোষী করবে ৷
33লোকেরা যারা প্রদীপ জ্বালায় তারা তা লুকিয়ে রাখে না বা ঝুড়ির নিচে রাখে না। পরিবর্তে, তারা এটি একটি বাতিদানের উপর রাখে যাতে যারা সেই ঘরে প্রবেশ করে তারা যেন আলো দেখতে পায়। 34তোমার চোখ তোমার শরীরের ভিতরে আলো দেয় ৷ তোমার চোখ যদি সঠিকভাবে কাজ করে তবে তোমার সমস্ত শরীর আলোয় পূর্ণ হবে। কিন্তু তোমার চোখ যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে তোমার শরীরে কোনো আলো পাবে না। 35অতএব, সতর্ক থাকো এটা ভেবো না যে তোমার চোখ ঠিক কাজ করছে এবং আলো দিচ্ছে, যদি এটি আসলে ভালোভাবে কাজ না করে এবং কোন আলো না দেয়। 36তাই যদি তোমার শরীরের প্রতিটি অংশে আলো প্রবেশ করে, যাতে এটির কোনো অংশ অন্ধকারে না থাকে, তাহলে তোমার সমস্ত শরীর আলোয় পূর্ণ হবে ৷ প্রদীপের উজ্জ্বল আলো যেমন বাইরে তোমার চারপাশে জ্বলে, ঠিক তেমনি তোমার ভিতরেও উজ্জ্বল আলো জ্বলবে।"
37যীশু এই কথাগুলি শেষ করার পর, একজন ফরীশী তাঁকে তার সঙ্গে খাবার খেতে নিমন্ত্রণ করলেন ৷ তাই যীশু সেই ফরীশীর বাড়িতে গেলেন এবং খাবারের টেবিলে হেলেন দিয়ে বসলেন। 38ফরীশী আশ্চর্য হয়ে গেল যখন সে দেখল যে যীশু খাওয়ার আগে রীতি অনুযায়ী তার হাত ধোয়নি ৷ 39যীশু তাঁকে বললেন, “তোমরা ফরীশীরা খাওয়ার আগে পেয়ালা ও থালা-বাসনের বাইরেটা ধুয়ে ফেল, কিন্তু তোমরা নিজেরা ভিতর থেকে খুব লোভী ও দুষ্ট ৷ 40হে মূর্খ লোকেরা! তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, ঈশ্বর শুধুমাত্র বাইরেটা তৈরী করেননি, ভেতরটাও তৈরী করেছেন! 41রীতি অনুযায়ী থালা-বাসন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার বিষয়ে চিন্তা না করে, দয়ালু হও এবং থালা-বাসনের মধ্যে যা আছে তা অভাবগ্রস্ত লোকেদের দিয়ে দাও ৷ তাহলে তোমার ভিতরে এবং বাইরে উভয়ই ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
42কিন্তু ফরীশীরা তোমাদের জন্য এটি কতই না ভয়ঙ্কর হবে! তোমরা সাবধানে ঈশ্বরকে তোমাদের সমস্ত কিছুর দশমাংশ দান করে থাকো, এমনকি তোমাদের বাগানে যে সব ভেষজও জন্মায় তা দাও। কিন্তু তোমরা অন্যদের প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসা বা ন্যায্যতা দেখাও না। তোমাদের নিশ্চিত করা উচিত যে ঈশ্বরকে দেওয়ার পাশাপাশি, তোমরা সেগুলিও কর। 43ফরীশীরা তোমাদের জন্য কতই না ভয়ঙ্কর হবে, কারণ তোমরা সমাজ-গৃহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসতে পছন্দ কর এবং তোমরা বাজারে লোকেদের বিশেষ সম্মানের সঙ্গে শুভেচ্ছা পেতে পছন্দ কর ৷ 44এটা তোমাদের জন্য কতই না ভয়ঙ্কর হবে, কারণ তোমরা অচিহ্নিত কবরের মতো যা মানুষ না বুঝেই তার উপর দিয়ে হেঁটে যায় আর তাই আচার-সংক্রান্ত অনুযায়ী অশুচি হয়ে যায়।”
45সেখানে ইহুদী আইনের শিক্ষকদের মধ্যে একজন যীশুর কাছে অভিযোগ করল, "গুরু, আপনি যখন এমন কথা বলেন, তখন আপনি আমাদেরও সমালোচনা করছেন!" 46কিন্তু যীশু উত্তর দিলেন, “তোমাদের জন্যও এটি কতটা ভয়ানক হবে যারা ইহুদী আইনের শিক্ষক! আমি এটা বলছি কারণ তোমরা লোকেদের অনেক নিয়ম মেনে চলতে বল, তবুও তোমরা তাদের সাহায্য করার জন্য সামান্যতম কাজও করবে না। 47এটা তোমাদের জন্য কতই না ভয়ঙ্কর হবে, কারণ তোমরা ভাববাদীদের কবর চিহ্নিত করার জন্য নির্মান করে থাকো, কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষরাই হল সেই লোকেরা যারা তাদের হত্যা করেছিল! 48সুতরাং যখন তোমরা এই ইমারত গুলি নির্মাণ কর, তখন তোমরা ঘোষণা কর যে, তোমাদের পূর্বপুরুষরা যখন ভাববাদীদের হত্যা করেছিল তখন তারা যা করেছিল তা তোমরা অনুমোদন কর ৷ 49তাই ঈশ্বর, যিনি অত্যন্ত জ্ঞানী, তিনি আরও বললেন, 'আমি আমার লোকদের পথ দেখানোর জন্য ভাববাদী ও প্রেরিতদের পাঠাব। কিন্তু তারা তাদের অনেক কষ্ট দেবে। এমনকি তারা তাদের (ভাববাদীদের) কয়েকজনকে হত্যাও করবে।’ 50এরফলে, এই সময়ে বসবাসকারী লোকেরা পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যে সমস্ত ভাববাদীদের লোকেরা হত্যা করেছে তাদের হত্যার জন্য শাস্তি পাবে। 51তারা প্রত্যেক হত্যার জন্য শাস্তি পাবে, যা শুরু হয়েছিল আদমের পুত্র হেবল থেকে, যার ভাই কয়িন তাকে হত্যা করেছিল, সেই তখন থেকে ভাববাদী সখরিয়ের হত্যা পর্যন্ত, যাকে রাজার লোকেরা মন্দিরের ভিতরে বেদী এবং পবিত্র স্থানের মধ্যে হত্যা করেছিল। 52ইহুদী আইনের শিক্ষকেরা তোমাদের জন্য এটি কতই না ভয়ঙ্কর হবে ৷ তোমরা লোকেদেরকে ঈশ্বর সম্পর্কে জানার বিষয়ে দূরে সরিয়ে রাখছো! তোমরা নিজেরাই ঈশ্বরকে জানো না, এবং তোমরা অন্য লোকেদের জন্য জিনিসগুলিকে কঠিন করে তুলছো, যারা ঈশ্বরকে আরও ভালভাবে জানতে চায়।" 53যীশু সেইসব কথা শেষ করার পর, তিনি সেই ফরীশীর বাড়ি থেকে চলে গেলেন ৷ তখন ইহুদী আইনের শিক্ষকরা এবং ফরীশীরা তাঁর প্রতি অত্যন্ত বিরূপ আচরণ করতে শুরু করে। তারা তাঁকে নানা বিষয়ে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে লাগলো। 54তারা তাঁর কিছু ভুল ধরার জন্য তাঁর কথা শুনতে থাকল যাতে তারা তাঁকে মিথ্যা শিক্ষার জন্য অভিযুক্ত করতে পারে।
121এদিকে, হাজার হাজার লোক যীশুর চারপাশে জড়ো হল ৷ সেখানে এত বেশি (লোক) ছিল যে তারা একে অপরের উপর চাপাচাপি করতে লাগলো। তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন তা হল, “সাবধান থেকো, তোমরা যেন ফরীশীদের মত না হয়ে পড়, যারা প্রকাশ্যে ধর্মীয় কাজ করে কিন্তু গোপনে মন্দ কাজ করে। 2আর লোকেদের পাপ গোপন রাখার চেষ্টা করা বৃথা ৷ কোন একদিন ঈশ্বর সবাইকে সবকিছু জানাবেন যা লোকেরা লুকানোর চেষ্টা করছে। 3তুমি গোপনে যাকিছু বলেছ কোন একদিন সবই লোকে জনসমক্ষে শুনবে ৷ যাকিছু তুমি তোমার ঘরে ফিস ফিস করে যা বলেছো, একদিন কেউ চিৎকার করে বলবে যেন সবাই শুনতে পায়।
4আমার বন্ধুরা, মনোযোগ দিয়ে শোন! লোকেদের ভয় কর না। তারা তোমাদের মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু তারপরে তারা তোমাদের সাথে আর কিছু করতে পারে না! 5আমি তোমাদেরকে বলব কাকে সত্যিই তোমাদের ভয় করা উচিত ৷ তোমাদের ঈশ্বরকে ভয় করা উচিত। তিনি শুধু মানুষের মৃত্যুর কারনই নন, তাছাড়াও পরে তাদের নরকে নিক্ষেপ করারও অধিকার তার আছে! হ্যাঁ, আমি তোমাদেরকে বলছি, ঈশ্বরই সেই একমাত্র যাকে তোমাদের সত্যিই ভয় করা উচিত! 6চড়ুই পাখিদের কথা চিন্তা কর। তাদের মূল্য এতই কম যে তোমরা মাত্র দুটি ছোট মুদ্রায় পাঁচটি কিনতে পারো। আর তবুও ঈশ্বর তাদের কাউকে ভুলে যান না! 7তোমাদের মাথায় কত চুল আছে তাও ঈশ্বর জানেন। ভয় পেও না, কারণ তোমরা অনেক চড়ুই পাখির চেয়েও ঈশ্বরের কাছে বেশি মূল্যবান।
8আমি তোমাদের আরও বলছি যে, লোকেরা যদি অন্যদেরকে বলে যে তারা আমার শিষ্য, তবে আমি, মনুষ্যপুত্র, ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের বলব যে তারা আমার শিষ্য। 9কিন্তু তারা যদি অন্যদের বলে যে তারা আমার শিষ্য নয়, তবে আমি ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের বলব যে ওই লোকেরা আমার শিষ্য নয়। 10আমি তোমাদের আরও বলি যে, লোকে যদি আমার, মনুষ্যপুত্রের, সম্বন্ধে খারাপ কথা বলে, ঈশ্বর সেজন্য তাদেরকে ক্ষমা করিবেন। কিন্তু লোকেরা যদি পবিত্র আত্মা সম্পর্কে খারাপ কথা বলে, তাহলে ঈশ্বর তাদের সেইজন্য ক্ষমা করবেন না ৷ 11তাই লোকেরা যখন তোমাদেরকে সমাজগৃহে নিয়ে আসে সেখানকার ধর্মীয় নেতাদের সামনে তোমাদেরকে প্রশ্ন করার জন্য এবং দেশের ক্ষমতায় থাকা অন্যান্য লোকেদের কাছে, তখন তাদের কীভাবে উত্তর দেবে বা কী বলা উচিত তা নিয়ে চিন্তা কর না, 12কারণ পবিত্র আত্মা ঠিক সেই সময়েই তোমাদেরকে বলবেন যে তোমাদের কী বলা উচিত।”
13তখন ভিড়ের মধ্যে একজন যীশুকে বলল, “গুরু, আমার ভাইকে বলুন যেন আমাদের বাবার সম্পত্তি আমার সাথে ভাগ করে নেয়!” 14কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “হে মানুষ, সম্পত্তির বিষয়ে লোকেদের যে সমস্যা আছে তা সমাধান করার জন্য কেউ আমাকে বিচারকর্তা বানায় নি!” 15তারপর তিনি সমস্ত লোকেদের বললেন, “সাবধান হও কোন বিষয়ে লোভী হয়ো না! একজন মানুষ কতটা সম্পত্তির মালিক তা দিয়ে তার জীবনে কি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা হয় না।"
16তারপর যীশু জনতাকে এই গল্প বললেন: “একজন ধনী ব্যক্তির জমিতে প্রচুর ফসল হয়েছিল। 17সে মনে মনে ভাবল, 'আমি জানি না কী করব, কারণ আমার এই সমস্ত ফসল রাখার মতো যথেষ্ট বড় জায়গা আমার কাছে নেই ৷' 18তারপর তিনি মনে মনে ভাবলেন, 'আমি জানি আমি কী করব! আমি আমার শস্যের গলাঘরগুলি ভেঙ্গে ফেলব এবং আরও বড় তৈরী করব! তারপর আমি আমার সমস্ত শস্য এবং অন্যান্য জিনিসগুলি বড় নতুন গলাঘরে সংরক্ষণ করতে পারব। 19তারপর আমি নিজেকে বলব, “এখন আমি অনেক বছর ধরে থাকার মতো যথেষ্ট জিনিস জমা করেছি। তাই আমি আমার জীবনকে সহজভাবে নেব। আমি খাব-পান করব এবং সুখী থাকবো।” 20কিন্তু ঈশ্বর তাকে বললেন, 'তুমি মূর্খ মানুষ! আজ রাতেই তুমি মারা যাবে! তাহলে তুমি নিজের জন্য যাকিছু সঞ্চয় করেছ তা অন্য কারোর হবে, তোমার নয়!'
21তারপর যীশু এই দৃষ্টান্তটি এই বলে শেষ করলেন, “যারা কেবল নিজের জন্য জিনিস জমা করে তাদের ক্ষেত্রে এরকমই হবে এবং ঈশ্বর যে জিনিসগুলিকে মূল্যবান মনে করেন সেগুলিকে মূল্য দেয় না।"
22তারপর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এই গল্প থেকে তোমাদের কিছু শেখা উচিত। তোমাদের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাবার বা উষ্ণ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পোশাক থাকবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা কর না। 23সর্বোপরি, তোমরা যে খাবার খাও তার চেয়ে তোমাদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ এবং তোমরা যে পোশাক পর তার চেয়ে তোমাদের শরীর গুরুত্বপূর্ণ। 24পাখিদের কথা চিন্তা কর। তারা বীজ রোপণ করে না, এবং তারা ফসলও কাটে না। তাদের ঘর বা বাড়ি নেই যেখানে ফসল সঞ্চয় করতে পরে, কিন্তু ঈশ্বর তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করেন। এবং তোমরা অবশ্যই পাখিদের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। 25তোমাদের মধ্যে কেউ চিন্তা করে তার জীবনে এক মিনিটও যোগ করতে পারবে না! 2626 সুতরাং তোমরা যেহেতু সেই ছোট কাজটিও করতে পারো না, তাই অন্য কিছু নিয়ে তোমাদের অবশ্যই চিন্তা করা উচিত নয় ৷ 27ফুল যেভাবে বাড়ে সে সম্পর্কে চিন্তা কর। তারা টাকা উপার্জনের জন্য কাজ করে না, এবং তারা নিজেদের জন্য পোশাক তৈরী করে না। কিন্তু আমি তোমাদের বলছি যে রাজা শলোমন, যিনি অনেক আগে বেঁচে ছিলেন এবং জমকাল পোশাক পরতেন, তিনি কখনও একটি ফুলের মতো সুন্দর পোশাক পরেন নি ৷ 28অল্প সময়ের জন্য হলেও ঈশ্বর গাছপালাকে সুন্দর করে বৃদ্ধি করেন ৷ তারপর লোকেরা সেগুলো কেটে ফেলে এবং আগুনে ফেলে দেয়। কিন্তু তোমরা ঈশ্বরের কাছে খুবই মূল্যবান ৷ তিনি গাছপালার যত্নের চেয়েও তোমাদের বেশি যত্ন করবেন ৷ তোমরা যতটুকু বিশ্বাস কর তার চেয়ে বেশী তোমাদের ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করা উচিত ৷ 29তোমার জন্য, তোমরা কি খাবে ও কি পান করবে তা নিয়ে চিন্তা কোরো না, আর সে সব বিষয় নিয়ে ভাবতে থেকো না। 30যে সব লোকেরা ঈশ্বরকে জানে না তারা সকলেই এই ধরনের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করে, তোমরা সে বিষয়ে সুনিশ্চিত থাকতে পারো যে তোমাদের স্বর্গের পিতা জানেন যে সেগুলোয় তোমাদের প্রয়োজন আছে। 31এর পরিবর্তে, ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য তোমরা কী করতে পারো তাতে মনোনিবেশ কর ৷ যখন তোমরা তা কর, তখন তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু পাবার জন্য ঈশ্বরের উপর ভরসা করতে পারো।
32আমার বন্ধুরা, তাই তোমাদের ভয় করা উচিত নয়। তোমাদের স্বর্গের পিতা চান যে তোমরা তাঁর রাজ্যের অংশী হও এবং এর সমস্ত সুবিধা লাভ কর৷ 33তাই তোমাদের নিজের জিনিস বিক্রি কর এবং সেই টাকা যাদের খাবার, কাপড় বা থাকার জায়গা দরকার তাদের দাও। নিজেদের জন্য এমন টাকার থলি নাও যা কখনও ছিঁড়ে যাবে না। আমি বলতে চাইছি যে স্বর্গে ধন সঞ্চয় কর যেখানে সেটি সবসময় নিরাপদ থাকবে। সেখানে কোন চোর কিছু চুরি করতে পারবে না এবং কোন পোকা তোমাদের কাপড় নষ্ট করবে না। 34সর্বোপরি, যা কিছু তোমরা সঞ্চয় করে রাখেছো, সেই বিষয়েই তোমরা চিন্তা করবে এবং তোমাদের সময় তার উপর ব্যয় করবে।
35সবসময় ঈশ্বরের কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাক, এমন লোকদের মতো যারা তাদের কাজের পোশাক পরে থাকে এবং সারারাত বাতি জ্বালিয়ে রাখে ৷ 36আমার ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত থাকো, সেই দাসদের মতো যারা তাদের মালিকের বিয়ের ভোজ থেকে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করে ৷ তারা তার জন্য দরজা খুলে দেবার জন্য অপেক্ষা করে যখনই তিনি আসেন এবং দরজায় ধাক্কা দেন। 37সেই দাসদের জন্য এটি খুব ভাল হবে যদি তারা তাদের মালিকের ফিরে আসার সময় জেগে থাকে। আমি তোমাদের এটি বলি: তিনি তাদের পুরস্কৃত করবেন, একজন দাসের মতো পোশাক পরে, তাদের বসতে বলবেন এবং তাদের খাবার পরিবেশন করবেন। 38যদিও তিনি সন্ধ্যায় দেরি করে বাড়ি ফেরেন বা মাঝরাতে বাড়ি ফিরে আসেন, তিনি যদি দেখেন যে তার দাসেরা জেগে আছে এবং তার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, তবে তিনি তাদের প্রতি খুব খুশি হবেন। 39আর আমি চাই তোমরা এই বিষয়টা বিবেচনা কর: যদি বাড়ির মালিক জানতেন যে চোর আসছে এবং কোন সময়ে আসছে, তবে তিনি জেগে থাকতেন এবং চোরকে তার বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না ৷ 40তাই প্রস্তুত থাকো, কারণ আমি, মনুষ্যপুত্র, এমন সময়ে আবার আসব যখন তোমরা আমার আশাও করবে না ৷'
41পিতর জিজ্ঞেস করলেন, “প্রভু, আপনি কি এই উদাহরণটি শুধু আমাদের জন্যই দিচ্ছেন, আপনার শিষ্যদের জন্য? নাকি এটা লোকেদের জন্যও?” 42যীশু উত্তরে বললেন, “আমি প্রত্যেকের জন্যই এটি বলছি, যে একজন বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের মতো, যে তার মালিকের বাড়ির পরিচারক। তার মালিক তাকে তার অন্যান্য দাসদের দেখাশুনার দ্বায়িতে রেখেছেন, এটি নিশ্চিত করতে যাতে তারা সঠিক সময়ে খাবার পায়। 43যদি তার মালিক বাড়ি ফিরে আসে এবং দেখে যে সে সেই কাজ করছে, তবে তিনি সেই দাসকে পুরস্কৃত করবেন ৷ 44আমি তোমাদেরকে এই কথা বলি: সেই মালিক সেই দাসকে তার সমস্ত কিছু দেখাশুনা করার ভার তাকে দেবেন ৷ 45কিন্তু যে দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সে হয়তো মনে মনে বলতে পারে, ‘আমার মালিক অনেক দিনের জন্য বাইরে চলে যাবেন ৷’ তখন সে হয়তো অন্য দাসদের মারধর করতে শুরু করবে ৷ সে হয়তো অনেক খাওয়া-দাওয়া শুরু করবে এবং মাতাল হয়ে যাবে। 46যদি সে তা করে, তবে তার মালিক এমন সময়ে ফিরে আসতে পারে যখন সেই দাস তাকে ( অর্থাৎ তার মালিককে) আশা করে না। তখন তার মালিক তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন এবং এমন লোকেদের সাথে, এমন জায়গায় তাকে নিযুক্ত করবেন যারা বিশ্বস্তভাবে তার সেবা করে না। 47সেই দাস যে জানত তার মালিক কি চায়, কিন্তু প্রস্তুত হয় না এবং সেইমত কাজ না, তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে ৷ 48কিন্তু প্রত্যেক দাস যে জানে না যে তার মালিক তার কাছ কি চায়, এবং তারপর কিছু ভুল করে, তবে সে কেবল অল্প শাস্তি পাবে। প্রভু সেই সমস্ত দাসদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করবেন যাদের তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন। এবং প্রভু সেই দাসদের কাছ থেকে আরও বেশি আশা করবেন যাদের তিনি অনেক বেশি দায়িত্ব দিয়েছেন।
49আমি মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক আবেগ জাগিয়ে তুলতে এসেছি। আমি আশা করি যে তারা ইতিমধ্যে সেগুলির উপর কাজ করছে! 50কিন্তু শীঘ্রই আমাকে ভয়ানক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমার কষ্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি অবিরত কষ্ট পেতে থাকবো। 51তোমাদের জানা উচিত যে, আমি এই জন্য আসিনি যে লোকেরা শান্তিতে একসাথে বাস করবে ৷ না, তোমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে এর পরিবর্তে, লোকেরা আমার পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান নেবে। 52প্রস্তুত থাকো, কারণ এটাই ঘটতে চলেছে ৷ পাঁচ জনের পরিবারে, কেউ আমাকে বিশ্বাস করবে আবার কেউ করবে না। পরিবারের তিনজন সদস্য, দুজন সদ্যসের বিপক্ষে একসঙ্গে যোগ দেবে। 53পরিবারের সদস্যরা বিবাদ করবে। একজন পিতা তার পুত্রের বিরোধিতা করবে, অথবা পুত্র তার পিতার বিরোধিতা করবে। একজন মা তার মেয়ের বিরোধিতা করবে, অথবা একজন মেয়ে তার মায়ের বিরোধিতা করবে। একজন শাশুড়ি তার পুত্রবধূর বিরোধিতা করবে, অথবা পুত্রবধূ তার শাশুড়ির বিরোধিতা করবে।"
54তিনি জনতার উদ্দেশে আরও বললেন, “যখন তোমরা পশ্চিমে কালো মেঘ তৈরী হতে দেখতে পাও, তখনই তোমরা বল, ‘বৃষ্টি হতে চলেছে!’ আর ঠিক তাই হয় ৷ 55যখন দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস বয়ে যায়, তখন তোমরা বল, ‘এটি খুব গরম দিন হবে!’ আর তোমরাই ঠিক। 56তোমরা ভন্ডরা! মেঘ এবং বাতাস পর্যবেক্ষণ করে, আবহাওয়ার বিষয়ে কী ঘটছে তোমরা তা বুঝতে সক্ষম হও। তোমাদের উচিত এই বর্তমান সময়ে ঈশ্বর কি করছেন তা বুঝতে সক্ষম হওয়া!
57তোমাদের প্রত্যেকেরই নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কোনটি সঠিক! 58এখানে একটি জিনিস তোমার করা উচিত ৷ তুমি যখন আদালতে যাওয়ার জন্য পথে আছো তখনও যে তোমায় দোষী করেছে তার সাথে তোমার বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা উচিত। যদি সে তোমাকে বিচারকের কাছে যেতে জোর করে, তাহলে বিচারক সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তুমি দোষী এবং তোমাকে আদালতের অধিকারিকের কাছে দিতে পারে। তখন সেই অধিকারিক তোমাকে জেলে বন্দী করবে। 59আমি তোমাকে বলছি, তুমি যদি জেলে যাও, তুমি কোনভাবেই জেল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি বিচারকের কথামত সমস্ত দেনা পরিশোধ করছো।
131আর সেই সময়, সেখানে ভিড়ের মধ্যে কিছু লোক যীশুকে বললো যে সম্প্রতি কিছু গালীলীয়দের সাথে যা ঘটেছে। পীলাত, রোমীয় শাসনকর্তা, সৈন্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তারা যিরুশালেমের মন্দিরে বলি উৎসর্গের সময় গালীলীয়দের হত্যা করে। 2যীশু তাদের উত্তরে বললেন, “তোমরা কি মনে কর যে গালীলের সেই লোকেদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে কারণ তারা অন্য সমস্ত গালীলীয়দের চেয়ে বেশি পাপী ছিল? 3আমি তোমাদের আশ্বস্ত করছি, সেই কারণে এটি হয় নি! বরং, তোমরা যদি তোমাদের পাপপূর্ণ আচরণ থেকে না ফের তবে ঈশ্বর একইভাবে তোমাদের সবাইকে শাস্তি দেবেন। 4অথবা সেই 18 জন লোকের কী হল যারা মারা গেল যখন শীলোহের পার্শস্ত মিনার তাদের উপর পড়ল? তোমরা কি মনে কর যে তারা যিরুশালেমের অন্য সবার চেয়ে খারাপ পাপী ছিল বলে তাদের সাথে এটি ঘটেছে? 55 আমি তোমাদের আশ্বস্ত করছি, সেই কারণে এটি হয় নি! কিন্তু এর পরিবর্তে, তোমাদের বুঝতে হবে যে যদি তোমরা তোমাদের পাপপূর্ণ আচরণ থেকে না ফের তবে ঈশ্বর একইভাবে তোমাদের সবাইকে শাস্তি দেবেন!”
6তারপর যীশু তাদের এই গল্পটি বললেন: “একজন লোক তার বাগানে একটি ডুমুর গাছ লাগিয়েছিল। প্রতি বছর সে ডুমুর তুলতে আসত, কিন্তু প্রতিবারে তাতে একটাও কিছু থাকত না। 7তারপর সে বাগানের মালীকে বলল, 'এই গাছটিকে দেখ! আমি গত তিন বছর ধরে প্রত্যেক বছর এতে ফল খুঁজছি, কিন্তু এটিতে কোন ডুমুর নেই। এটিকে কেটে ফেল! এটি বিনা কারণে মাটির পুষ্টিগুণ নিচ্ছে!’ 8কিন্তু মালী উত্তর দিল, 'মহাশয়, এটিকে আরও এক বছরের জন্য এখানে রেখে দিন। আমি এর চারপাশে খনন করব এবং সার দেব। 9যদি পরের বছর এটিতে ডুমুর থাকে, তবে আমরা এটিকে বাড়তে দিতে পারি! কিন্তু ততক্ষণে যদি তাতে কোন ফল না ধরে, তবে আপনি তা কেটে ফেলতে পারেন।’
10আর এক যিহূদীদের বিশ্রামের দিনে, যীশু একটি সমাজগৃহে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। 11সেখানে একজন মহিলা ছিলেন যাকে একটি মন্দ আত্মা 18 বছর ধরে পঙ্গু করে রেখেছিল ৷ সে সবসময় ঝুঁকে থাকতো ৷ সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত না। 12যখন যীশু তাকে দেখলেন, তিনি তাকে তাঁর কাছে ডেকে আনলেন ৷ তিনি তাকে বললেন, "নারী, আমি তোমাকে এই রোগ থেকে সুস্থ করেছি!" 13তিনি তাঁর হাত তার উপর রাখলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন! 14কিন্তু সমাজগৃহের নেতারা খুব রেগে গিয়েছলো কারণ যীশু তাকে যিহূদীদের বিশ্রামের দিনে সুস্থ করেছিলেন ৷ তাই তিনি লোকদের বললেন, “প্রতি সপ্তাহে ছয় দিন আছে যেদিন আমাদের আইন মানুষকে কাজ করার অনুমতি দেয়। তোমাদের যদি সুস্থতার প্রয়োজন হয়, সেই দিনগুলি হল সমাজ্গৃহে আসার দিন যাতে কেউ তোমাদেরকে সুস্থ করতে পারে। আমাদের বিশ্রাম বারের দিনে এসো না!” 15তখন যীশু তাকে বললেন, “তুমি এবং তোমার সহ ধর্মীয় নেতারা ভণ্ড! তোমরা প্রত্যেকে বিশ্রামের দিনেও মাঝে মাঝে কাজ কর! উদাহরণস্বরূপ, তোমরা তোমাদের বলদ বা গাধাকে খুলে আস্তাবল থেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাও যেখানে এটি জল পান করতে পারে। 16এই মহিলা একজন যিহূদী, অব্রাহামের বংশধর! কিন্তু শয়তান তাকে 18 বছর ধরে পঙ্গু করে রেখেছে, যেন সে তাকে বেঁধে রেখেছে! তোমরা অবশ্যই একমত হবে যে এটি করা ঠিক যে আমি তাকে এই অক্ষমতার রোগ থেকে মুক্ত করি, এমনকি যদি আমি এটি বিশ্রামের দিনেও করি! 17তিনি একথা বলার পর, তাঁর শত্রুরা তাদের বিষয়ে লজ্জিত হল ৷ কিন্তু তিনি যে সব আশ্চর্যজনক কাজ করছিলেন তার জন্য অন্য সব লোকেরা খুশি ছিল।
18তারপর তিনি বললেন, “আমি ব্যাখ্যা করতে চাই যে ঈশ্বর যখন রাজা হিসাবে রাজত্ব করেন তখন তা কেমন হয় ৷ তোমাদের বুঝতে সাহায্য করার জন্য আমি তোমাদেরকে একটি ছবি দেব। 19এটি একটি ছোট্ট সরষে দানার মত যা একজন লোক তার জমিতে রোপণ করেছিল ৷ এটি একটি গাছের মত বড় না হওয়া পর্যন্ত বাড়তে লাগলো। এটি এত বড় ছিল যে পাখিরা এর ডালে বাসা বাঁধলো।
20তারপর তিনি আবার বললেন, “আমি তোমাদেরকে অন্যভাবে বলব যে ঈশ্বর যখন রাজত্ব করেন (তখন তা কেমন হয়)৷ 21এটা হল অল্প খামিরের মত যা একজন মহিলা প্রায় 25 কেজি ময়দার সাথে মেশালো ৷ সেই অল্প পরিমানের খামির পুরো ময়দার তালকে ফুলিয়ে তুলেছে।”
22যীশু যিরুশালেমের দিকে যাত্রা করতে থাকলেন। তিনি পথের সব শহর ও গ্রামে থামলেন এবং লোকেদের শিক্ষা দিলেন। 23কেউ একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “প্রভু, ঈশ্বর কি কেবল কিছু লোকেদের রক্ষা করবেন?” যীশু উত্তর দিলেন যাতে সেখানে উপস্থিত সকলে শুনতে পায়, 24“তোমাদেরকে প্রবেশ করার জন্য কঠোর চেষ্টা করতে হবে, কারণ এটি খুবই কঠিন। আমি তোমাদেরকে বলছি অনেক লোক ঢোকার চেষ্টা করবে, কিন্তু তারা পারবে না। 25বাড়ির মালিক উঠে দরজা বন্ধ করার পরে, তোমরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং দরজায় আওয়াজ করবে ৷ এবং তোমরা মালিকের কাছে অনুরোধ করবে এবং তাকে বলবে, 'প্রভু, আমাদের জন্য দরজা খুলে দিন!' কিন্তু তিনি উত্তর দেবেন, 'না, আমি এটি খুলব না, কারণ আমি তোমাদেরকে চিনি না এবং আমি জানি না তোমরা কোথায় আসছো থেকে!' 26তখন তোমরা বলবে, 'আপনি নিশ্চয়ই ভুলে গেছেন যে আমরা আপনার সঙ্গে খাবার খেয়েছি, আর আপনি আমাদের শহরের রাস্তায় আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন!' 27কিন্তু তিনি বলবেন, 'আমি তোমাদেরকে আবার বলছি, আমি জানি না তোমরা কোথা থেকে এসেছো। তোমরা সবাই দুষ্ট লোক! এখান থেকে চলে যাও!’’ 28তারপর যীশু বলতে লাগলেন, “তোমরা আব্রাহাম এবং ইসাহাক এবং যাকোবকে দূর থেকে দেখবে। বহুকাল আগে বসবাসকারী সমস্ত ভাববাদীরাও সেখানে থাকবেন যেখানে ঈশ্বর রাজা হিসাবে সব কিছুতে রাজত্ব করেন। কিন্তু তোমরা বাইরে থাকবে, কাঁদবে আর দুঃখে দাঁত কিড়মিড় করবে! 29কিন্তু ভিতরে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে লোকেরা থাকবে , অনেক অ-যিহূদী লোক সহ। তারা সবাই একসাথে উৎসব করবে যেখানে ঈশ্বর রাজা হিসাবে সবকিছুর উপর রাজত্ব করেন। 30এই বিষয়ে চিন্তা কর: কিছু লোক যাদের এখন খুব কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে তখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে, এবং অন্যরা যারা এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে তারা তখন সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হবে।"
31সেই একই দিনে, কয়েকজন ফরীশী আসলো এবং যীশুকে বলল, "এই এলাকা ছেড়ে চলে যান, কারণ শাসনকর্তা হেরোদ আন্তীপা আপনাকে হত্যা করতে চায়।" 32তিনি তাদের বললেন, “যাও এবং সেই ধূর্ত লোকটিকে বল, যে মনে করে সে আমাকে আঘাত করতে পারে কিন্তু যে সত্যিই পারে না, আমার এই বার্তাটি: ‘শোন! আমি ভূতদের তাড়িয়ে দিচ্ছি এবং অলৌকিক কাজ করছি, এবং আমি অল্প সময়ের জন্য তা চালিয়ে যাব। তারপরে, আমি আমার কাজ শেষ করব ৷' 33কিন্তু আগামী দিনেও আমাকে যিরুশালেমে আমার যাত্রা চালিয়ে যেতে হবে, যেহেতু যিহূদী নেতারা সর্বদা এমন আচরণ করেছে যেন যিরুশালেমের ছাড়া অন্য জায়গায় একজন ভাববাদীকে হত্যা করা ঠিক নয় ৷ 34হে, যিরুশালেমের লোকেরা! তোমরা অনেক আগে বেঁচে থাকা ভাববাদীদের হত্যা করেছো। তারপর তোমরা অন্যদের হত্যা করেছিলে যাদেরকে ঈশ্বর তোমাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তোমরা তাদের পাথর ছুড়ে মেরেছ। অনেকবার আমি রক্ষা করার জন্য তোমাদের একত্র করতে চেয়েছি, যেমন একটি মুরগি তার ছানাদের তার ডানার নীচে জড়ো করে। কিন্তু তোমরা চাওনি যে আমি তা করি। 35এখন দেখ! হে যিরুশালেমের লোকেরা, ঈশ্বর আর তোমাদের রক্ষা করবেন না। আমি তোমাদেরকে এটাও বলি: আমি আর একবার তোমাদের শহরে প্রবেশ করব। তারপরে, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমরা আমাকে আর দেখতে পাবেন না, এবং তখন তোমরা আমার সম্পর্কে বলবে, 'ঈশ্বর এই ব্যক্তিকে আশীর্বাদ করুন যিনি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব নিয়ে আসছেন!'"
141আর একদিন বিশ্রামবারের দিন যীশু ফরীশীদের একজন নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন ৷ এই নেতা অন্যান্য ফরীশীদেরও খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ৷ তারা সকলেই যীশুর দিকে খুব ভালোভাবে লক্ষ্য রেখেছিল তাঁকে দোষারোপ করার চেষ্টায়৷ 2ঠিক সেখানে যীশুর সামনে একজন লোক ছিলেন যার একটি রোগ ছিল যার কারণে তার হাত ও পা খুব ফুলে গিয়েছিল ৷ 3যীশু সেখানে উপস্থিত যিহূদী আইনের বিশেষজ্ঞদের এবং ফরীশীদের জিজ্ঞাসা করলেন, "যিহূদী আইন বিশ্রামবারের লোকেদের সুস্থ করার অনুমতি দেয়, নাকি দেয় না?" 4তারা কোন উত্তর দিল না। তাই যীশু সেই লোকটির গায়ে তাঁর হাত রাখলেন এবং তাকে সুস্থ করলেন ৷ তারপর তিনি তাকে বললেন সে যেতে পারে। 5আর তিনি সেখানে অন্য লোকেদের বললেন, “যদি তোমাদের কারোর একটি ছেলে বা বলদ থাকে যা বিশ্রাম বারের দিনে কুঁয়োতে পড়ে যায়, তবে তোমরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে টেনে বের করবে ৷” 6আবার, তারা তাঁকে উত্তর দিতে পারলো না ৷
7যীশু লক্ষ্য করলেন যে সমস্ত লোকেদের খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল তারা সেই জায়গায় বসার জন্য বেছে নিচ্ছে যেখানে সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা বসে। তাই তিনি তাদেরকে এই উপদেশ দিলেন। 8“যখন কেউ তোমাদের একজনকে বিয়ের ভোজে নিমন্ত্রণ করে, তখন এমন জায়গায় বসো না যেখানে গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা বসে। এমন হতে পারে যে সে এমন একজন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যিনি ভোজে তোমরা চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 9যে নিমন্ত্রণকর্তা তোমাদের দুজনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি যখন দেখবেন যে তোমরা কোথায় বসে আছ, তখন সে তোমাকে বলবে, ‘এই লোকটিকে তোমার জায়গাটি দাও!’ তখন তোমাকে কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি নিতে হবে এবং তুমি লজ্জিত হবে ৷ 10এর পরিবর্তে, যখন কেউ তোমাকে ভোজে নিমন্ত্রণ করে, তখন গিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসো। তারপর নিমন্ত্রণকর্তা যে সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সে যখন আসবে, তখন সে তোমাকে বলবে, ‘বন্ধু, এসো ভালো জায়গায় বসো!’ তখন তোমার সাথে যারা খাবার খাবে তারা সবাই দেখবে যে সে তোমার সম্মান করছে। 11কারণ যারা নিজেদেরকে বড় করে ঈশ্বর তাদের নত করবেন এবং যারা নিজেদেরকে নত করে তিনি তাদের উচ্চ করবেন।”
12যীশু সেই ফরীশীকেও বলেছিলেন যে তাকে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, “যখন তুমি লোকদেরকে দুপুরের বা সন্ধ্যার খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ কর, তখন কেবল তোমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা ধনী প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ কর না, কারণ তারা পরে তোমাকে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে শোধ করবে। 13এর পরিবর্তে, তুমি যখন ভোজ দাও, তখন গরীব, পঙ্গু, খোঁড়া বা অন্ধ লোকদের নিমন্ত্রণ কর। 14যদি তুমি তা কর, তবে ঈশ্বর তোমাকে পুরস্কার দেবেন, কারণ তারা তোমাকে শোধ দিতে পারবে না। তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো যে ঈশ্বর তোমাকে সেই সময়ে প্রতিদান দেবেন যখন তিনি ধার্মিক লোকেদের আবার জীবিত করবেন।”
15আর যারা তাঁর সঙ্গে ভোজন করছিল তাদের মধ্যে একজন তাকে এই কথা বলতে শুনল ৷ সে যীশুকে বলেছিল, "ঈশ্বর সত্যিই প্রত্যেককে আশীর্বাদ করেছেন যারা আনন্দ উদযাপন করতে পাবে যেখানে ঈশ্বর রাজা হিসাবে সবকিছুর উপর রাজত্ব করেন!" 16যীশু তাকে বললেন, “একবার একজন লোক একটা বড় ভোজের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি অনেক মানুষকে আসার আমন্ত্রণ জানালেন। 17যখন ভোজের সময় হল, তখন তিনি যাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাদের বলতে তিনি তাঁর দাসকে পাঠালেন, 'এখন এসো, কারণ সবকিছু প্রস্তুত ৷' 18কিন্তু যখন সেই দাস কাজটি করল, সব লোকেরা যাদের তিনি নিমন্ত্রণ করেছিলেন তারা বলতে শুরু করল কেন তারা আসতে পারবে না। প্রথম যে লোকটির কাছে দাসটি গিয়েছিল সে বলল, ‘আমি সবেমাত্র একটি জমি কিনেছি, এবং আমাকে অবশ্যই সেখানে যেতে হবে এবং সেটি দেখতে হবে। দয়া করে তোমার মালিককে বল আমার না আসার জন্য আমাকে যেন ক্ষমা করে দেন!’ 19অন্য লোকটি বলল, ‘আমি সবেমাত্র পাঁচ জোড়া বলদ কিনেছি, এবং আমাকে অবশ্যই সেগুলো পরীক্ষা করতে যেতে হবে। দয়া করে তোমার মালিককে বল আমার না আসার জন্য আমাকে যেন ক্ষমা করে দেন!’ 20অন্য লোকটি বলল, 'আমি সবেমাত্র বিয়ে করেছি, তাই আমি আসতে পারব না ৷' 21তখন দাসটি তার মালিকের কাছে ফিরে গেল এবং সবাই কী বলছে তা জানাল। বাড়ির মালিক খুব রেগে গেলেন এবং তার দাসটিকে বললেন, 'তারাতারি শহরের রাস্তায় ও গলিতে যাও এবং গরীব, পঙ্গু, অন্ধ ও খোঁড়া লোকদের খুঁজে বের কর এবং তাদের এখানে আমার বাড়িতে নিয়ে আস!' 22তারপর দাসটি বাইরে গেল এবং তা করল, সে ফিরে আসলো এবং বলল, 'মহাশয়, আপনি আমাকে যা করতে বলেছিলেন, আমি তা করেছি, কিন্তু এখনও আরও লোকের জন্য জায়গা আছে।' 23তাই তার মালিক তাকে বললেন, 'তাহলে শহরের বাইরে যাও। রাজপথ বরাবর লোকেদের খোঁজ কর। ঘেরাও করে সরু রাস্তা বরাবর অনুসন্ধান কর। ওই সব জায়গার লোকদেরকে আমার বাড়িতে আসার জন্য খুব বেশি করে অনুরোধ কর। আমি চাই এটি (বাড়ি) যেন লোকে ভরে যায়! 24এছাড়াও আমি তোমাদের এই কথা বলি, সেই লোকেরা যাদেরকে আমি প্রথমে আমন্ত্রণ করেছিলাম তাহারা আমার ভোজ উপভোগ করতে পারবে না, কারণ তাহারা আসতে অস্বীকার করেছিল। 25আর এক বিরাট লোকেদের ভিড় যীশুর সাথে যাত্রা করছিল। তিনি লোকদের দিকে ফিরলেন এবং তাদের বললেন বললেন, 26“যদি কেউ আমার কাছে আসে যে তার বাবা, মা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে এবং ভাই ও বোনদেরকে আমার চেয়ে বেশি ভালবাসে, তবে সে আমার শিষ্য হতে পারবে না। তাকে অবশ্যই এমনকি তার নিজের জীবনের চেয়েও আমাকে বেশি ভালোবাসতে হবে! 27যেকেউ নিজের ক্রুশ বহন করে না এবং আমার বাধ্য হয় না, সে আমার শিষ্য হতে পারে না। 28সর্বোপরি, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ একটি দুর্গ বানাতে চায়, তবে প্রথমে তুমি বসবে এবং কত খরচ হবে তা নির্ধারণ করবে। এইভাবে তুমি বুঝতে পারবে যে এটি শেষ করার জন্য তোমার কাছে যথেষ্ট টাকা আছে কিনা। 29অন্যথায়, তুমি যদি ভিত্তি স্থাপন কর এবং দুর্গের বাকি কাজ শেষ করতে না পার, তবে যারা এটি দেখবে তারা সবাই তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে। 30তারা বলবে, ‘এই লোকটি একটি দুর্গ তৈরী করতে শুরু করেছিল, কিন্তু সে তা শেষ করতে পারেনি!’ 31অথবা ধর একজন রাজার সৈন্যবাহিনীতে 10, 000 সৈন্য আছে। এবং ধর অন্য একজন রাজা যার 20, 000 সৈন্য আছে যে তাকে আক্রমণ করতে আসছে। সেই প্রথম রাজা তার সৈন্যবাহিনীকে যুদ্ধে পাঠানোর আগে, অবশ্যই তার উপদেষ্টাদের সাথে বসে তা নির্ধারণ করবে যে তিনি অন্য রাজার সেনাবাহিনীকে হারাতে পারবেন কিনা। 32ধর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে তার সৈন্যবাহিনী অন্য সেনাবাহিনীকে হারাতে পারবে না। তখন তিনি সেই অন্য রাজার সেনাবাহিনী দুরে থাকতেই তার কাছে দূতদের পাঠাবে। তিনি দূতদের জিজ্ঞাসা করতে বলবেন, 'তোমার সাথে শান্তির জন্য আমাকে কি করতে হবে?' 33সেই, একইভাবে, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি প্রথমে সিদ্ধান্ত না নেয় যে তোমদের কাছে যা কিছু আছে সব ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক, তবে তোমরা আমার শিষ্য হতে পারবে না।"
34যীশু আরও বললেন, “তোমরা লবণের মতো , যা খুবই উপকারী ৷ কিন্তু লবণ যদি তার নোনতা স্বাদ হারিয়ে ফেলে, তবে কেউ এটিকে আবার নোনতা স্বাদযুক্ত করতে পারে না। 35যদি লবণ আর লবনের স্বাদযুক্ত না হয়, তবে এটি আর কোন ভালো কাজে লাগে না এমনকি মাটির বা সারের স্তূপের জন্যও তা আর ভাল নয়। লোকেরা এটকে বাইরে ফেলে দেয়। তোমরা এইমাত্র আমাকে যা বলতে শুনলে সে সম্পর্কে তোমাদের সাবধানে চিন্তা করা উচিত!
151এখন, অনেক কর আদায়কারী ও অন্যান্য লোকেরা যাদেরকে ধর্মীয় নেতারা পাপী মনে করত তারা যীশুর শিক্ষা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসতে লাগলো। 2আর যখন ফরীশীরা ও যিহূদী আইনের শিক্ষকরা এটা দেখলো, তারা গজগজ করতে লাগল ৷ তারা বলল, "এই লোকটি পাপীদের স্বাগত জানায় এবং এমনকি তাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করে।" তারা ভাবল যীশু এটা করে নিজেকে অশুচি করছে ৷ 3তাই যীশু তাদের এই দৃষ্টান্তটি বললেন: 4“ধর তোমাদের মধ্যে একজনের 100 টি ভেড়া ছিল এবং তুমি তার মধ্যে একটি হারিয়ে ফেলেছো ৷ নিশ্চিতভাবে তুমি প্রান্তরে অন্য 99 টি ভেড়াকে ছেড়ে দেবে এবং সেই হারিয়ে যাওয়া ভেড়ার সন্ধান করতে যাবে যতক্ষণ না তুমি এটি খুঁজে পাচ্ছো। 5যখন তুমি এটি খুঁজে পাবে, তখন তুমি আনন্দের সাথে এটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোমার কাঁধে রাখবে ৷ 6তারপর যখন তুমি বাড়িতে পৌঁছবে, তখন তুমি একত্রে তোমার বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলবে, 'আমার সাথে আনন্দ কর, কারণ আমি আমার হারিয়ে যাওয়া ভেড়া খুঁজে পেয়েছি।' 7তোমাদের জানা উচিত যে, একইভাবে, একজন পাপী যখন তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয় তখন স্বর্গবাসীদের মধ্যে বড় আনন্দ হয়। সেই আনন্দ অনেক লোকেদের আনন্দের চেয়েও বেশি যারা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের কাছে সঠিক এবং যাদের অনুতাপ করার দরকার নেই।
8অথবা মনে কর যে একজন মহিলার দশটি মূল্যবান রৌপ্য মুদ্রা ছিল কিন্তু তার মধ্যে একটি হারিয়ে ফেলে ৷ তবে নিশ্চিতভাবে সে একটি বাতি জ্বালাবে এবং ঘরের মেঝেতে ঝাড়ু দেবে এবং যতক্ষণ না সে এটি খুঁজে পায় ততক্ষণ ভালো করে খুঁজবে। 9যখন সে এটি খুঁজে পাবে, তখন সে তার বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের একত্রে ডাকবে তাদের বলবে, 'আমার সাথে আনন্দ কর, কারণ আমি যে মুদ্রা হারিয়ে ফেলে ছিলাম তা আমি পেয়েছি!' 10আমি তোমাদের বলছি, সেই একইভাবে, যখন একজন পাপী তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয় তখন ঈশ্বরের স্বর্গদূতেদের মধ্যে অনেক আনন্দ হয়।"
11তারপর যীশু আরও বলতে লাগলেন, “একসময় একজন লোক ছিল যার দুটি ছেলে ছিল। 12একদিন ছোট ছেলে তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, তোমার সম্পত্তির ভাগ আমাকে এখনই দিয়ে দাও যা আমি নচেত তোমার মৃত্যুর পর পাবো।’ তাই বাবা তার সম্পত্তি দুই ছেলের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। 13মাত্র কয়েকদিন পরে, ছোট ছেলে সে যা কিছু পেয়েছিল সবকিছু নিল এবং দূরের এক দেশে যাত্রা করল। সেখানে সেই দেশে সে তার সব টাকা অনৈতিকতার জীবন-যাপন করে, মূর্খতার সাথে অপচয় করে খরচ করে ফেলল। 14তার সমস্ত টাকা খরচ করার পর, সেখানে সেই দেশে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হল ৷ আর শীঘ্রই তার বেঁচে থাকার জন্য কিছুই অবশিষ্ট রইল না। 15তাই সে সেই দেশে বসবাসকারী একজন ব্যক্তির কাছে গেল এবং তাকে কাজে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করল ৷ তাই লোকটি তার শুয়োর চরাবার জন্য তাকে মাঠে পাঠিয়ে দিল। 16তার এত খিদে পেল যে শুয়োরেরা যে শিমের শুঁটি খেয়েছিল সেগুলি তার খেতে ইচ্ছা হয়েছিল, তবুও কেউ তাকে কিছু দেয়নি ৷ 17অবশেষে সে কতটা মূর্খ ছিল তা নিয়ে সে স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে লাগলো, এবং সে মনে মনে বলল: 'আমার বাবার সব ভারা করা দাসেদের সকলেরই খাবার জন্য যথেষ্ট খাবার আছে, কিন্তু এখানে আমি মারা যাচ্ছি কারণ আমার কাছে খাবার জন্য কিছুই নেই! 18তাই আমি এখান থেকে চলে যাব এবং আমার বাবার কাছে ফিরে যাব। আমি তাকে বলব, "বাবা, আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এবং তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি ৷ 19তুমি, আমাকে আর তোমার ছেলে মনে করবার যোগ্য আমি নই। দয়া করে আমাকে তোমার ভাড়া করা দাসেদের একজনের মত তোমার জন্য কাজ করতে দাও।” 20তাই সে সেখান থেকে চলে গেল এবং তার বাবার বাড়িতে ফিরে যাবার জন্য যাত্রা শুরু করল। কিন্তু যখন সে বাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে ছিল, তখন তার বাবা তাকে দেখতে পেল এবং তার জন্য গভীর মমতা অনুভব করল। সে দৌড়ে তার ছেলের কাছে গেল এবং তাকে জড়িয়ে ধরল এবং তার গালে চুমু দিল। 21তার ছেলে তাকে বলল, ‘বাবা, আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ও তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। তাই আমি আর আমাকে তোমার ছেলে মনে করবার যোগ্য নই ৷’ 22কিন্তু তার পিতা তার দাসদের বলল; ‘তাড়াতাড়ি যাও এবং আমার সেরা পোশাকটা নিয়ে আসো এবং আমার ছেলেকে পরিয়ে দাও। এছাড়াও তার আঙুলে আংটি আর পায়ে জুতো পরিয়ে দাও! 23এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য যে বাছুরটিকে আমরা মোটাসোটা করেছি তা আনো আর ওটাকে মার, যাতে আমরা তা খেতে পারি এবং আনন্দ করতে পারি। 24আমাদের আনন্দ উত্সব করতে হবে কারণ আমার এই ছেলেটি মৃত মানুষের মত ছিল, কিন্তু সে এখন আবার জীবিত হয়েছে! সে একজন হারিয়ে যাওয়া মানুষের মত ছিল, কিন্তু আমরা তাকে আবার খুঁজে পেয়েছি!’ তাই তারা সবাই আনন্দ করতে লাগল।
25যখন এই সব ঘটছিল, বাবার বড় ছেলে মাঠে কাজ করছিল ৷ তার কাজ শেষ করার পর, সে বাড়ি দিকে রওনা দিল। সে যতই বাড়ির কাছাকাছি আসতে লাগলো, সে শুনতে পেল লোকেরা গান-বাজনা আর নাচানাচি করছে। 26আর সে দাসেদের মধ্যে একজনকে ডাকলো এবং জিজ্ঞাসা করল কি হচ্ছে? 27দাসটি তাকে বলল, ‘তোমার ভাই বাড়ি ফিরে এসেছে। তোমার বাবা আমাদেরকে মোটাসোটা বাছুরটিকে মেরে আনন্দ করতে বলেছে কারণ তোমার ভাই নিরাপদে ও সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসেছে। 28কিন্তু বড় ভাই রেগে গেল এবং সেই আনন্দ উত্সবে যোগ দিতে চাইল না। তাই তার বাবা বাইরে এল এবং তাকে ভিতরে আসার জন্য অনুরোধ করল ৷ 29কিন্তু সে তার বাবাকে বলল, শোন! এত বছর ধরে আমি তোমার জন্য ক্রীতদাসের মতো কঠোর পরিশ্রম করেছি। তুমি আমাকে যা করতে বলেছো আমি সব সময় পালন করেছি। কিন্তু তুমি আমাকে কখনোই একটি ছোট ছাগলের বাচ্চাও দাওনি যে আমি আমার বন্ধুদের জন্য একটি ভোজের আয়োজন করতে পারতাম। 30কিন্তু এখন তোমার এই ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে, তোমার সমস্ত টাকা বেশ্যাদের ওপর নষ্ট করে, আর তুমি তোমার দাসদের বলেছ মোটাসোটা বাছুরটিকে মারতে আনন্দ উৎসবের জন্য!' 31কিন্তু তার বাবা তাকে বললেন, 'আমার ছেলে, তুমি সবসময় আমার সঙ্গে আছো, আর আমার যা কিছু আছে সব তোমার। 32কিন্তু আমাদের উত্সব করা ও আনন্দ করা উচিত, কেননা তোমার ভাই যেন মারা গিয়েছিল আর সে আবার জীবিত হয়েছে! যেন সে হারিয়ে গিয়েছিল এবং আমরা আবার তাকে খুঁজে পেয়েছি!''
161আর যীশু তাঁর শিষ্যদের আরও বললেন, “একসময় এক ধনী লোক ছিল যার একজন পরিচারক ছিল। একদিন কেউ একজন ধনী লোকটিকে জানালো যে সেই পরিচারক এত খারাপ কাজ করছে যে সেই ধনী লোকটির প্রচুর টাকার ক্ষতি হচ্ছে। 2সেইজন্য সে পরিচারককে তার কাছে ডাকলো এবং বলল, 'আমি শুনছি তুমি যা করছ তা ভয়ঙ্কর! তুমি যে জিনিসগুলি পরিচালনা করছো তার একটি চূড়ান্ত লিখিত বিবরণ আমাকে দাও, কারণ তুমি আর আমার বাড়ির পরিচারক থাকবে না!' 3তখন পরিচারক মনে মনে বলল, 'আমার প্রভু আমাকে পরিচারক পদ থেকে বরখাস্ত করবে, তাই আমাকে ভাবতে হবে আমি কি করব। আমি মাটি কাটার কাজ করার মতন শক্ত-সামর্থ্য নই, এবং আমি টাকা ভিক্ষা করতে লজ্জা বোধ করি। 4তিনি আমাকে আমার পরিচারকের কাজ থেকে বরখাস্ত করার পরে, আমি জানি আমি কি করব যাতে লোকেরা আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে এবং আমার প্রয়োজন মেটাবে৷' 5তাই সে প্রত্যেককে তার কাছে একে একে আসতে বলল যারা তার মালিকের টাকা ধার নিয়ে ছিল। সে প্রথমজনকে জিজ্ঞাসা করল, 'তুমি আমার মালিকের কাছ থেকে কত ধার করেছো?' 6লোকটি উত্তর দিল, '3, 000 লিটার ওলিভ তেল।' পরিচারক তাকে বলল, 'তোমার রসিদ নাও, এখানে বসো এবং তাড়াতাড়ি এটিকে 1, 500 লিটারে পরিবর্তন কর!' 7সে অন্য লোকটিকে বলল, 'তুমি কত ধার করেছো?' লোকটি উত্তর দিল, '1, 000 ঝুড়ি গম।' পরিচারক তাকে বলল, 'তোমার রসিদ নাও এবং এটিকে 800 ঝুড়িতে পরিবর্তন কর!' 8যখন সেই মালিক শুনলো তার পরিচারক কি করেছে, সে সেই অসৎ পরিচারকের চালাকির জন্য প্রশংসা করল ৷ সত্যটি হল, এই জগতের লোকেরা তাদের আশেপাশের লোকদের সাথে কীভাবে সম্পর্ক রাখতে হয় সে বিষয়ে ঈশ্বরের লোকদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। 9আমি তোমাদের বলি, এই পৃথিবীতে তোমাদের নিজের বন্ধু বানাবার জন্য তোমাদের টাকা ব্যবহার কর। তারপর যখন সেই টাকা চলে যাবে, সেই বন্ধুরা তোমাদের তাদের বাড়িতে স্বাগত জানাবে, যা চিরকাল থাকবে। 10লোকেরা যারা বিশ্বসযোগ্য ভাবে অল্প পরিমাণ টাকা পরিচালনা করে তারা অনেক বেশি পরিমাণের ক্ষেত্রেও সৎ হবে। যে লোকেরা অল্প পরিমাণ টাকার পরচালনার ক্ষেত্রে অসৎ তারা অনেক বেশি পরিমাণের ক্ষেত্রেও অসৎ হবে। 11সুতরাং তোমরা যদি এই জগতের টাকা যা ঈশ্বর তোমাদেরকে দিয়েছেন বিশ্বস্তভাবে পরিচালনা না কর, তবে তিনি নিশ্চতভাবে কখনই স্বর্গের প্রকৃত ধনকে নিয়ে তোমাদের বিশ্বাস করবেন না। 12তোমরা যদি অন্য লোকেদের সম্পত্তি বিশ্বস্ততার সাথে পরিচালনা না করে থাকো, তবে তোমাদের আশা করা উচিত নয় যে কেউ তোমাদেরকে নিজের সম্পত্তি দেবে। 13কোন দাসই একই সময়ে দুটি ভিন্ন মালিকের সেবা করতে পারে না। যদি সে তা করার চেষ্টা করে, তবে সে তাদের একজনকে ঘৃণা করবে এবং অন্যজনকে ভালোবাসবে, অথবা সে তাদের একজনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে এবং অন্যজনকে ঘৃণা করবে। তোমরা তোমাদের জীবনকে ঈশ্বরের সেবায় উৎসর্গ করতে পারবে না যদি তোমরা তোমাদের জীবনকে টাকা ও অন্যান্য বস্তুগত সম্পদ অর্জনের জন্যও উৎসর্গ কর।"
14যখন সেই ফরীশীরা যারা সেখানে ছিল শুনলো যীশু কি শিক্ষা দিচ্ছিল, তারা তাঁকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করল কারণ তারা টাকা অর্জন করতে ভালোবাসত ৷ 15কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “তোমরা অন্য লোকেদের মনে এই ভাবনা তৈরী করার চেষ্টা কর যে তোমরা ধার্মিক, কিন্তু ঈশ্বর জানেন তোমরা আসলে কেমন। মনে রেখো যে ঈশ্বর এমন অনেক বিষয়কে ঘৃণিত বলে মনে করেন যেগুলিকে লোকেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রশংসা করে।
16ঈশ্বর মোশিকে যে আইনগুলি দিয়েছিলেন এবং ভাববাদীরা যা লিখেছিলেন তা যোহন বাপ্তাইজক না আসা পর্যন্ত কার্যকর ছিল ৷ সেই থেকে, ঈশ্বর কীভাবে রাজা হিসেবে রাজত্ব করবেন সেই বিষয়ে আমি সুসমাচার প্রচার করছি। অনেক লোক আমার বার্তা গ্রহণ করছে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের অংশ হওয়ার জন্য খুব আগ্রহের সাথে চেষ্টা করছে ৷ 17ঈশ্বরের সমস্ত আইন, এমনকি যেগুলিকে তুচ্ছ মনে হয়, সেগুলি স্বর্গ ও পৃথিবীর চেয়েও বেশি স্থায়ী ৷
18যে কোনও পুরুষ যে তার স্ত্রীকে ত্যাগপত্র দেয় এবং অন্য কোনও মহিলাকে বিয়ে করে সে ব্যভিচার করে, এবং যে কোনও পুরুষ কোনও মহিলাকে বিয়ে করে যার স্বামী তাকে ত্যাগপত্র দিয়েছে সেও ব্যভিচার করে ৷
19যীশু আরও বললেন, “একসময় এক ধনী লোক ছিল, যে দামী বেগুনি ও লিনেন কাপড় পরত ৷ প্রতিদিন সে প্রচুর টাকা খরচ করে ভোজ দিত। 20আর প্রতিদিন লোকে লাসার নামে এক দরিদ্র লোককে ধনী ব্যক্তির বাড়ির দরজার সামনে শুইয়ে দিত ৷ লাসারের শরীর ঘায়ে ভরা ছিল। 21সে এতই ক্ষুধার্ত ছিল যে ধনী লোকটি যেখানে খেতেন সেই টেবিল থেকে পড়ে যাওয়া খাবারের টুকরোগুলো খেতে চাইতো ৷ যখন সে শুয়ে থাকতো কুকুরেরা আসত এবং তার ঘা চেটে দিত। 22অবশেষে দরিদ্র লোকটি মারা গেল। তারপর স্বর্গদূতেরা তাকে তার পূর্বপুরুষ আব্রাহামের কাছে নিয়ে গেল। আর ধনী লোকটিও মারা গেল, এবং লোকেরা তার দেহকে কবর দিল। 23মৃত্যুর জায়গায়, ধনী লোকটি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল ৷ সে উপরের দিকে তাকালো এবং আব্রাহামকে অনেক দূরে এবং লাসার আব্রাহামের খুব কাছে বসে থাকতে দেখল। 24তাই ধনী লোকটি চিৎকার করে বলল, 'পিতা আব্রাহাম, এই আগুনে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি! তাই দয়া করে আমার প্রতি করুণা করুন এবং লসারকে এখানে পাঠান যাতে সে তার আঙুল জলে ডোবায় এবং আমার জিভকে স্পর্শ করে এটিকে ঠান্ডা করতে পারে!’ 25কিন্তু আব্রাহাম উত্তর দিলেন, 'পুত্র, মনে রেখ, যখন তুমি পৃথিবীতে বেঁচে ছিলে তখন তুমি অনেক ভালো জিনিস উপভোগ করেছিলে। কিন্তু লাসার দুঃখী ছিল। এখন সে এখানে সুখী, আর তুমি কষ্ট পাচ্ছ। 26তাছাড়া, ঈশ্বর তোমার এবং আমাদের মধ্যে একটি বিশাল গিরিখাত রেখেছেন ৷ তাই যারা এখান থেকে তোমার কাছে যেতে চায় তারা তা পারবে না। এছাড়াও, কেউ সেখান থেকে এখানে আমরা যেখানে আছি পার করে আসতে পারবে না।’ 27তখন সেই ধনী লোকটি বলল, 'যদি তাই হয়, পিতা আব্রাহাম, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি লাসারকে আমার বাড়িতে পাঠান। 28আমার পাঁচ ভাই আছে যারা সেখানে থাকে৷ তাকে তাদের সাবধান করতে বলুন যাতে তারাও এই জায়গায় না আসে যেখানে আমরা খুব কষ্ট পাই!' 29কিন্তু আব্রাহাম উত্তর দিলেন, 'না, আমি তা করব না কারণ তোমার ভাইদের কাছে মোশি এবং ভাববাদীরা অনেক আগে যা লিখেছিল তা আছে। তাঁরা যা লিখেছেন তা তাদের মেনে চলা উচিত!’ 30কিন্তু ধনী লোকটি উত্তর দিল, ‘না, পিতা অব্রাহাম, তা যথেষ্ট হবে না। কিন্তু যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি তাদের কাছে ফিরে যায় এবং তাদের সতর্ক করে, তবে তারা তাদের পাপের আচরণ থেকে ফিরবে।' 31অব্রাহাম তাকে বললেন, 'যদি তারা মোশি ও ভাববাদীরা যা লিখেছে তা না মানে। তবে যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে কেউ গিয়ে তাদের সতর্ক করলেও সেটি তাদের সাহায্য করবে না। তারা তখনও বিশ্বাস করবে না যে তাদের পাপপূর্ণ আচরণ থেকে ফিরে আসা উচিত।'"
171যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “যে সব জিনিস লোকেদের পাপ করতে প্রলোভিত করে তা অবশ্যই ঘটবে ৷ কিন্তু এটি কারোর জন্য কততা ভয়ঙ্কর হবে যার কারণে ঐসব বিষয় ঘটছে! 2যদি সে এমন কাউকে পাপ করতে বাধ্য করে যে বিশ্বাসে দুর্বল ছিল তবে তার চেয়ে সেই ব্যক্তির পক্ষে ভাল হবে যদি কেউ তার গলায় একটি বড় পাথর বেঁধে তাকে সমুদ্রে ফেলে দেয় ৷ 3তোমরা কেমন আচরণ কর সে সম্পর্কে সতর্ক থাকো। যদি অন্য বিশ্বাসী পাপ করে, তবে তাকে তিরস্কার করা উচিত। যদি সে বলে যে সে পাপ করার জন্য দুঃখিত এবং তোমাদের বলে তাকে ক্ষমা করতে, তাহলে তোমাদের উচিত তাকে ক্ষমা করা। 4এমনকি যদি সে একদিনে সাতবার তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে, আর যদি সে প্রতিবার তোমার কাছে আসে এবং বলে, ‘আমি যা করেছি তার জন্য আমি দুঃখিত,’ তবে তুমি অবশ্যই তাকে ক্ষমা করতে থাকবে।” 5তারপর প্রেরিতরা যীশুকে বলল, "আমাদের আরও বেশি বিশ্বাস দিন!" 6যীশু উত্তর দিলেন, “ এমনকি যদিও তোমাদের বিশ্বাস থাকতো যা এই ক্ষুদ্র সরিষার দানার চেয়ে বড় নয়, তবুও তুমি এই তুঁত গাছকে বলতে পারো, ' তুমি নিজেকে মাটি, শিকড় ও সবকিছু থেকে তুলে নাও এবং নিজেকে সমুদ্রে রোপণ কর, আর এটি তোমার বাধ্য হবে!"
7যীশু আরও বললেন, “ধর, তোমাদের মধ্যে একজনের একটি দাস ছিল যে তোমার ক্ষেত চাষ করত বা তোমার ভেড়ার দেখাশোনা করত ৷ পরে সে ক্ষেত থেকে ঘরে ফিরলে, তুমি বলবে না, ‘এখনই এস এবং খেতে বস!’ 8বরং, তুমি তাকে বলবে, ‘আমার জন্য খাবার তৈরি কর! তারপর তোমার পরিবেশন করার কাপড় পর এবং আমাকে পরিবেশন কর যাতে আমি খেতে এবং পান করতে পারি! পরে তুমি খেয়ো ও পান কর।’ 9তুমি তোমার দাসকে ধন্যবাদ জানাবে না সেই কাজ করার জন্য যা তাকে করতে বলা হয়েছিল! 10একইভাবে, যখন তোমরা সবকিছু কর যা ঈশ্বর তোমাদের করতে বলেছেন, তখন তোমাদের বলা উচিত, ‘আমরা কেবল ঈশ্বরের দাস। আমরা আপনার (ঈশ্বরের) ধন্যবাদ পাবার যোগ্য নই। তিনি আমাদের যা করতে বলেছেন আমরা কেবল তাই করেছি।'” 11যীশু ও তাঁর শিষ্যরা যখন যিরুশালেমের রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন, তখন তারা শমরিয়া ও গালীলের অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। 12যীশু যখন একটি গ্রামে প্রবেশ করলেন, তখন দশজন কুষ্ঠরোগী তাঁর দিকে এগিয়ে এল, কিন্তু তারা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রইল। 13তারা চিৎকার করে বলল, “যীশু, প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া করুন!” 14যীশু যখন তাদের দেখলেন, তিনি তাদের বললেন, “যাও এবং তোমরা নিজেদেরকে যাজকদের দ্বারা পরীক্ষা করাও।” তাই তারা গেল, এবং পথে, তাদের কুষ্ঠরোগ চলে গেল। 15তখন তাদের মধ্যে একজন, যখন দেখল যে তার আর কুষ্ঠরোগ নেই, তখন চিৎকার করে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে ফিরে গেল ৷ 16সে যীশুর কাছে এল এবং যীশুর দিকে মুখ করে পায়ের কাছে মাটিতে শুয়ে পড়ল এবং তাঁকে ধন্যবাদ জানালো ৷ এই লোকটি ছিল একজন শমরীয়। 17তখন যীশু বললেন, “আমি দশজন কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করেছি! আমি আশা করেছিলাম অন্য নয়জনও ফিরে আসবে! 18এই বিদেশী লোকটিই একমাত্র লোক যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে ফিরে এসেছিল ৷ তাদের মধ্যে আর কেউ ফিরে আসেনি!” 19তারপর তিনি লোকটিকে বললেন, “ওঠো এবং তোমার পথে চলে যাও। তুমি আমার উপর বিশ্বাস করেছিলে বলেই ঈশ্বর তোমাকে সুস্থ করেছেন।”
20একদিন কয়েকজন ফরীশী যীশুকে জিজ্ঞাসা করল, "ঈশ্বর কখন সবার উপরে রাজত্ব করতে শুরু করবেন?" তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, "এটি কোন চিহ্নের সাথে ঘটবে না যা লোকেরা সেগুলি লক্ষ্য করে চিনতে পারে। 21লোকেরা বলতে পারবে না, ‘দেখ! ঈশ্বর এখানে রাজত্ব করছেন!’ বা ‘ঈশ্বর সেখানে রাজত্ব করছেন!’ তোমরা যা ভাবছো তার বিপরীতে, ঈশ্বর ইতিমধ্যেই তোমাদের মধ্যে রাজত্ব করতে শুরু করেছেন।”
22যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এমন একটা সময় আসবে যখন তোমরা আমাকে, মনুষ্যপুত্রকে, পরাক্রমের সাথে রাজত্ব করতে দেখতে চাইবে ৷ কিন্তু তোমরা সেটা দেখতে পাবে না। 23লোকেরা তোমাদেরকে বলবে, ‘দেখ, মশীহ সেখানে আছেন!’ অথবা তারা বলবে, ‘দেখ, তিনি এখানে আছেন!’ যখন তারা সেটা বলবে, তাদের অনুসরণ কর না ৷ 24কারণ যখন বিদ্যুৎ চমকায় এবং আকাশকে একদিক থেকে অন্য দিকে আলোকিত করে, তখন সবাই তা দেখতে পায়৷ একইভাবে, যখন আমি, মনুষ্যপুত্র, আবার ফিরে আসব, তখন সবাই আমাকে দেখতে পাবে ৷ 25কিন্তু সেটা ঘটার আগে, আমাকে নানাভাবে কষ্ট পেতে হবে, আর লোকেরা আমাকে অগ্রাহ্য করবে ৷ 26কিন্তু আমি, মনুষ্যপুত্র যখন আবার ফিরে আসব, তখন লোকেরা নোহের জীবনকালে যেমন করত ঠিক তেমনই জিনিস করবে। 27সেই সময়ে লোকেরা যথারীতি ভাবে খেত ও যথারীতি পান করত, এবং যথারীতি ভাবে বিয়ে করত, ততদিন পর্যন্ত যতক্ষণ না নোহ ও তাঁর পরিবার বড় নৌকায় প্রবেশ করল ৷ কিন্তু তারপর বন্যা আসলো এবং নৌকায় যারা ছিল না তাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিল। 28একইভাবে, লোট যখন সদোম শহরে বাস করতেন, তখন সেখানকার লোকেরা যথারীতি ভাবে খেত এবং পান করত। তারা জিনিস কিনত এবং জিনিস বিক্রি করত। তারা শস্য চাষ করতো এবং তারা যথারীতি ভাবে বাড়ি তৈরী করত। 29কিন্তু যেদিন লোট সদোম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, সেদিন আকাশ থেকে আগুন ও জ্বলন্ত গন্ধক নেমে এসেছিল এবং নগরে যারা ছিল তাদের সবাইকে ধ্বংস করেছিল। 30একইভাবে, যখন আমি, মনুষ্যপুত্র, পৃথিবীতে ফিরে আসব, তখন লোকেরা অপ্রস্তুত থাকবে ৷ 31সেই দিন, যারা ঘরের বাইরে থাকবে, সমস্ত কিছু যা তারা তাদের ঘরের ভিতরে রেখেছে, তারা যেন ভিতরে গিয়ে সেইসব আনতে সময় নেয় না। একইভাবে, যারা মাঠে কাজ করছে তারা অবশ্যই কিছু নেবার জন্য বাড়ি ফিরে আসবেন না। তাদের অবশ্যই তাড়াতাড়ি পালিয়ে হবে ৷ 32মনে রেখো লোটের স্ত্রীর কি হয়েছিল! 33যে কেউ নিজের ইচ্ছা মত জীবনযাপন করতে থাকবে সে মারা যাবে ৷ কিন্তু যে কেউ আমার জন্য তার পুরানো জীবনযাত্রা ছেড়ে দেয় সে চিরকাল বেঁচে থাকবে ৷ 34আমি তোমাদেরকে বলছি, যে রাতে আমি ফিরে আসব, দুজন লোক এক বিছানায় ঘুমাবে ৷ যে আমাকে বিশ্বাস করে ঈশ্বর তাকে নিয়ে যাবেন এবং অন্যজনকে ছেড়ে যাবেন। 35দুজন মহিলা একসঙ্গে শস্য পিষবে ৷ ঈশ্বর তাদের মধ্যে একজনকে নিয়ে যাবেন এবং অন্যজনকে ছেড়ে দেবেন।” 36[“ক্ষেত্রে দুজন থাকবে; একজনকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং অন্যজনকে ছেড়ে দেওয়া হবে।”] 37তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “প্রভু, এটি কোথায় হবে?” তিনি তাদের উত্তরে বললেন, "যেখানেই মৃতদেহ পড়ে থাকবে, সেখানেই শকুনরা তা খেতে জড়ো হবে।"
181যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে শেখানোর জন্য আরেকটি গল্প বললেন যে তাদের অবিরত প্রার্থনা করা উচিত এবং নিরুৎসাহিত না হওয়া উচিত যদি ঈশ্বর সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রার্থনার উত্তর না দেন৷ 2তিনি বললেন, “একটি শহরে একজন বিচারক ছিল যে ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করত না এবং মানুষকেও পরোয়া করত না। 3সেই শহরে একজন বিধবা ছিল যে সেই বিচারকের কাছে বার বার আসতে থাকে এবং বলতে থাকে, 'দয়ে করে যে লোকটি আদালতে আমার বিরোধিতা করছে তার বিরুদ্ধে আমার ন্যায়বিচার করুন।' 4অনেক সময় ধরে বিচারক তাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করল। কিন্তু পরে, সে মনে মনে বলল, 'আমি ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করি না এবং আমি লোকেদের বিষয়ে পরোয়া করি না। 5কিন্তু এই বিধবা আমাকে বিরক্ত করে চলেছে! তাই আমি তার মামলার বিচার করব এবং নিশ্চিত করব যে তার সঙ্গে যেন ন্যায্য বিচার হয়। আমি চিন্তিত যে আমি যদি তা না করি, তাহলে সে সবসময় আমার কাছে এসে আমাকে ক্লান্ত করে দেবে!’’ 6তারপর যীশু বললেন, “ভালোভাবে চিন্তা কর যে সেই অন্যায় বিচারক কী বলেছে। 7এমনকি আরও নিশ্চতভাবে ঈশ্বর , যিনি ন্যায়পরায়ণ, তাঁর মনোনীত লোকদের জন্য ন্যায়বিচার আনবেন, যারা সারাদিন তাঁর কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে! এবং তিনি সর্বদা তাদের সাথে ধৈর্যশীল। 8আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বর খুব তাড়াতাড়ি তাঁর মনোনীত লোকদের জন্য ন্যায় বিচার করবেন! তবুও যখন আমি, মনুষ্যপুত্র, পৃথিবীতে ফিরে আসব, তখনও অনেক লোক থাকবে যারা আমাকে বিশ্বাস করবে না।”
9তারপর যীশু কিছু লোককেও নিম্নলিখিত গল্পটি বললেন, কিছু লোক যারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে মনে করেছিল এবং যারা অন্য লোকেদের নিচু চোখে দেখছিল ৷ 10তিনি বললেন, “দুইজন লোক যিরুশালেমের মন্দিরে প্রার্থনা করতে গিয়েছিল ৷ দুজন পুরুষের মধ্যে একজন ফরীশী ছিল। অন্য লোকটি ছিল এমন একজন যে রোমীয় সরকারের জন্য জনগণের কাছ থেকে কর আদায় করত। 11ফরীশী দাঁড়িয়ে নিজের সম্বন্ধে এইভাবে প্রার্থনা করল, 'হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই যে আমি অন্য লোকেদের মত নই। কেউ কেউ অন্যের কাছ থেকে টাকা চুরি করে। কেউ কেউ অন্যদের সাথে অন্যায় আচরণ করে। কেউ কেউ ব্যভিচার করে। আমি ওসব কিছু করি না। এবং আমি নিশ্চিতভাবে এই পাপী কর আদায়কারীর মত নই যে মানুষকে ঠকায়! 12আমি প্রতি সপ্তাহে দুদিন উপবাস করি এবং আমি যা আয় করি তার দশ শতাংশ মন্দিরে দান করি ৷' 13কিন্তু কর আদায়কারী মন্দিরের উঠানে অন্য লোকদের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে রইল ৷ সে এমনকি স্বর্গের দিকেও তাকায় নি। পরিবর্তে, সে তার বুক চাপড়ালো এবং বলল, 'হে ঈশ্বর, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন, কারণ আমি একজন ভয়ানক পাপী!'” 14তারপর যীশু বললেন, “আমি তোমাদের বলছি যে, তারা যখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল, তখন ঈশ্বর সেই কর আদায়কারী ক্ষমা করেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর সেই ফরীশীকে ক্ষমা করেননি। এই কারণেই যারা নিজেকে উচ্চ করে ঈশ্বর তাদের প্রত্যেককে নত করবেন এবং যারা নিজেকে নত করবে ঈশ্বর তাদের প্রত্যেককে উচ্চ করবেন।”
15আর একদিন লোকেরা এমনকি তাদের বাচ্চাদেরও যীশুর কাছে নিয়ে আসছিল যাতে তিনি তাদের উপর হাত রাখেন এবং তাদের আশীর্বাদ করেন। শিষ্যরা যখন এটি দেখল, তারা তাদের এটা করতে বারণ করল। 16কিন্তু যীশু শিশুদের তার কাছে ডেকে আনতে বললেন ৷ তিনি বললেন, “ছোট শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও! তাদের বারণ কর না, কারণ এই শিশুদের মতো নম্র ও বিশ্বাসী লোকেরাই ঈশ্বরকে তাদের জীবনে রাজত্ব করতে দেবেন ৷ 17সত্যিই, আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ নম্রভাবে ও বিশ্বাসের সঙ্গে ঈশ্বরকে তার জীবনের ওপর রাজত্ব করতে দেবে না, সে ঈশ্বরের রাজত্বকে কিছুতেই মেনে নেবে না।”
18একবার একজন যিহূদী নেতা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, "সৎ গুরু, অনন্ত জীবন পেতে হলে আমাকে কি করতে হবে?" 19যীশু তাকে বললেন, “তুমি আমাকে সৎ বলছ কেন? ঈশ্বরই একমাত্র যিনি সত্যিই সৎ! 20তোমার প্রশ্নের উত্তরে, নিশ্চয়ই তুমি সেই আদেশগুলি জানো যা ঈশ্বর মোশিকে দিয়েছিলেন আমাদের পালন করার জন্য: ‘ব্যভিচার কর না। কাউকে খুন কর না। চুরি কর না। মিথ্যা সাক্ষ দিও না। তোমার পিতা ও মাতাকে সম্মান কর।’’” 21লোকটি বলল, “আমি ছোট থেকেই সেই সমস্ত আজ্ঞা পালন করেছি।” 22যীশু যখন তাকে একথা বলতে শুনলো, তিনি তাকে বললেন, “তোমাকে আর একটা কাজ করতে হবে ৷ তোমার যা আছে সব বিক্রি করে দাও। তারপরে সেই টাকাগুলো এমন লোকদের দাও যাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই অল্প টাকা আছে। এরফলে তুমি স্বর্গে আত্মিক ধন পাবে। অতএব এসো আর আমার শিষ্য হও!” 23এই কথা শুনে লোকটি খুব দুঃখিত হল, কারণ সে খুব ধনবান ছিল ৷ 24যীশু লোকটির দিকে তাকালেন এবং বললেন, “যারা ধনী সেই লোকেদের জন্য এটি খুব কঠিন যে ঈশ্বরকে তাদের উপর রাজত্ব করতে দেওয়া। 25প্রকৃতপক্ষে, ধনী ব্যক্তিদের জন্য ঈশ্বরকে তাদের জীবন রাজত্ব করতে দেওয়ার চেয়ে উটের পক্ষে সূঁচের ছিদ্র দিয়ে যাওয়া সহজ।" 26যারা যীশুকে এই কথা বলতে শুনলো তারা উত্তর দিল, "তাহলে মনে হচ্ছে যে ঈশ্বর বিবেচনা করবেন না যে কারো অনন্ত জীবন থাকা উচিত!" 27কিন্তু যীশু বললেন, "মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব তা ঈশ্বরের পক্ষে সম্ভব।" 28তখন পিতর বললেন, “আমাদের কি হবে? আপনার শিষ্য হওয়ার জন্য আমাদের যা কিছু ছিল তা আমরা সব ছেড়ে এসেছি।” 29যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, যারা ঈশ্বরকে তাদের জীবনে রাজত্ব করতে দেবার জন্য তাদের বাড়ি, স্ত্রী, ভাই, বাবা-মা অথবা তাদের সন্তানদের ত্যাগ করেছে 30তারা এই জীবনে অনেক গুন বেশি পাবে যাকিছু তারা পিছনে ছেড়ে এসেছে, এবং আগামী সময়ে তারা অনন্ত জীবন পাবে।”
31যীশু 12 জন শিষ্যকে এক জায়গায় নিয়ে গেলেন ৷ তিনি তাদের বললেন, “ভালোভাবে শোন! আমরা যিরুশালেমে যাচ্ছি। আমরা যখন সেখানে থাকবো, যাকিছু ভাববাদীরা আমার, অর্থাৎ মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে বহু বছর আগে লিখেছিলেন তা সবই ঘটবে ৷ 32আমার শত্রুরা যখন আমাকে অ-যিহূদী কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবে। তারা আমাকে উপহাস করবে, আমাকে অবজ্ঞা করবে, এবং আমার গায়ে থুথু দেবে। 33তারা আমাকে চাবুক মারবে এবং তারপর আমাকে মেরে ফেলবে ৷ কিন্তু দুদিন পর আমি আবার জীবিত হব। 34কিন্তু তিনি যা বললেন সেগুলোর কিছুই শিষ্যরা বুঝতে পারল না ৷ ঈশ্বর সেগুলোর তাৎপর্য বুঝতে তাদের বাধা দিয়েছিলেন, তাই তারা জানত না যে যীশু তাদের যা বলছিলেন তার অর্থ কী।
35আর যীশু ও তাঁর শিষ্যরা যখন যিরীহো শহরের কাছে এলেন, একজন অন্ধ পথের পাশে বসে ছিল ৷ সে টাকা ভিক্ষা করছিল। 36যখন সে শুনলো লোকের ভিড় তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে, সে জিজ্ঞাসা করতে থাকলো, যারা তার আশেপাশে ছিল “কি হচ্ছে?” 37তারা তাকে বলল, “লোকেদের ভিড় আছে তার কারণ যীশু, নাসরত শহরের একজন লোক, এই রাস্তায় আসছেন।” 38আর তিনি চিৎকার করে বললেন, “যীশু, আপনি রাজা দায়ূদের বংশধর, আমার উপর দয়া করুন!” 39যারা ভিড়ের সামনে হেঁটে যাচ্ছিল, তারা তাকে ধমক দিল এবং চুপ করে থাকতে বলল। কিন্তু সে আরও জোরে চিৎকার করে বলল, “আপনি রাজা দায়ূদের বংশধর, আমার উপর দয়া করুন!” 40যীশু হাঁটা থামালেন এবং লোকটিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে লোকেদের আদেশ দিলেন ৷ যখন সেই অন্ধ লোকটি কাছে আসলো, যীশু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 41“তুমি কি চাও আমি তোমার জন্য কি করি?” সে উত্তর দিল, "প্রভু, আমি চাই আপনি আমাকে দেখতে সক্ষম করুন!" 42যীশু তাকে বললেন, “তাহলে আমি এখন তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিচ্ছি! কারণ তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছ বলেই, আমি তোমাকে সুস্থ করেছি!” 43তখনই সে দেখতে সক্ষম হল ৷ আর সে যীশুর সঙ্গে, ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে গেল ৷ আর সেখানে সমস্ত লোক যখন এটা দেখল, তারাও ঈশ্বরের প্রশংসা করল ৷
191আর যীশু যিরীহোতে প্রবেশ করলেন এবং শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন ৷ 2সেখানে একজন লোক ছিল যার নাম সক্কেয় ৷ সে কর সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল, এবং সে খুব ধনী ছিল। 3সে যীশুকে দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু সে ভিড়ের মধ্যে তাঁকে দেখতে পারল না ৷ সে খুব বেঁটে লোক ছিল এবং সেখানে যীশুর চারপাশে অনেক লোক ছিল৷ 4তাই সে রাস্তার আগে দৌড়ে গেল ৷ সে একটি সুকমোর ডুমুর গাছে উঠল যাতে যখন তিনি সেই রাস্তা ধরে আসেন সে যেন যীশুকে দেখতে পায়। 5যীশু যখন সেখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি উপরের দিকে তাকালেন এবং তাঁকে বললেন, "সক্কেয়, তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসো, আজ রাতে আমাকে তোমার বাড়িতে থাকতে হবে।" 6তাই সে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এল ৷ সে যীশুকে তার বাড়িতে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত ছিল। 7কিন্তু যারা যীশুকে সেখানে যেতে দেখেছিল তারা দোষারোপ করে বলল, “তিনি একজন প্রকৃত পাপীর অতিথি হতে গেছেন!” 8তারা যখন খাচ্ছিল তখন সক্কেয় উঠে দাঁড়ালো এবং যীশুকে বলল, “প্রভু, আমি আপনাকে জানাতে চাই যে আমার যা আছে তার অর্ধেক আমি গরীব লোকদের দিয়ে দেব। আর যে সব লোকেদের আমি ঠকিয়েছি, আমি তাদের কাছ থেকে যত টাকা নিয়েছি তার চারগুণ ফেরত দেব। 9যীশু তাকে বললেন, “আজ ঈশ্বর এই পরিবারটিকে উদ্ধার করেছেন, কারণ এই লোকটি দেখিয়েছে যে সে একজন আব্রাহামের প্রকৃত বংশধর ৷ 10মনে রেখো: আমি, মনুষ্যপুত্র, এমন লোকদের খুঁজে বের করতে এবং উদ্ধার করতে এসেছি তোমার মত যারা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছে ৷'
11আর লোকেরা যীশুর সব কথা শুনছিল ৷ তিনি যিরুশালেমের কাছাকাছি এসেছিলেন, এবং তিনি জানতেন যে লোকেদের একটি ভুল ধারণা ছিল৷ তারা ভেবেছিল যে তিনি যিরুশালেমে পৌঁছানোর সাথে সাথে ঈশ্বরের লোকেদের উপর রাজা হিসাবে রাজত্ব করতে শুরু করবেন। তাই যীশু তাদের আরেকটি গল্প বলার সিদ্ধান্ত নিলেন সেই ধারণা সংশোধন করার জন্য। 12তিনি বললেন, “একজন রাজপুত্র দূর দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন যাতে একজন উর্দ্ধতন রাজা তাকে সেই দেশ শাসন করার অধিকার দিতে পারে যেখানে সে বাস করত। সে এটি পাওয়ার পর, সে তার লোকদের উপর শাসন করতে ফিরে আসবে। 13সে যাবার আগে, সে তার দশজন দাসকে ডেকে পাঠালেন ৷ সে তাদের প্রত্যেককে সমান পরিমাণ টাকা দিলেন। সে তাদের বলল, ‘আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এই টাকা দিয়ে ব্যবসা কর!’ তারপর সে চলে গেল। 14কিন্তু তার দেশের অনেক লোক তাকে ঘৃণা করত ৷ তাই তারা কয়েকজন বার্তাবাহককে পাঠালো তাকে অনুসরণ করতে এবং উর্দ্ধতন রাজাকে বলতে যে, ‘আমরা এই লোকটিকে আমাদের রাজা হিসাবে চাই না!’ 15কিন্তু তবুও তাকে রাজা করা হয়েছিল। পরে সে নতুন রাজা হিসেবে ফিরে আসে। তারপর সে যাদেরকে টাকা দিয়েছিল সেই দাসদের ডেকে পাঠালো। সে জানতে চেয়েছিল যে টাকা সে তাদের দিয়েছিল তারা ব্যবসা করে কত টাকা লাভ করেছে। 16প্রথম দাসটি তার কাছে আসলো এবং বলল, ‘প্রভু, আপনার টাকা দিয়ে আমি আরও দশগুণ উপার্জন করেছি!’ 17সে এই লোকটিকে বলল, ‘তুমি একজন ভাল দাস! তুমি খুব ভাল করেছ! যেহেতু তুমি বিশ্বস্ততার সঙ্গে অল্প পরিমাণ টাকার যত্ন নিয়েছ, তাই আমি তোমাকে দশটি শহরের ওপরে শাসন করার অধিকার দেব ৷' 18তারপর দ্বিতীয় দাস আসলো এবং বলল, 'প্রভু, আপনি আমাকে যে টাকা দিয়েছিলেন তার মূল্য এখন পাঁচগুণ বেশি!' 19সে সেই দাসকেও বলল, 'খুব ভালো! আমি তোমাকে পাঁচটি শহরের ওপর রাখবো ৷' 20তারপর আর একজন দাস আসলো ৷ সে বলল, 'প্রভু, এই নিন আপনার টাকা। আমি এটিকে একটি কাপড়ে জড়িয়ে রেখেছিলাম এবং এটিকে নিরাপদ রাখার জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম। 21আমি ভয় পেয়েছিলাম যে, আমি যা উপার্জন করব তা আপনি সব নিয়ে যাবেন। আমি জানি আপনি একজন কঠোর মানুষ যিনি অন্যদের কাছ থেকে এমন জিনিসও নিয়ে যান যা সত্যিই আপনার নয়। আপনি সেই কৃষকের মত যে অন্য কৃষকের চাষ করা শস্য কাটে।’ 22সে সেই দাসকে বলল, 'তুমি দুষ্ট দাস! তুমি এইমাত্র যে কথাগুলো বলেছো তার জন্য আমি তোমাকে দোষী করব। তুমি বলেছো আমি একজন কঠিন মানুষ। তুমি বলেছো যেটা আমার নয় সেটাই আমি নিই। তুমি বলেছো আমি এমন একজন কৃষকের মত যে অন্য কৃষকের চাষ করা ফসল কাটে। 23তাই তোমার অন্তত আমার টাকাটা মহাজনদের কাছে দেওয়া উচিত ছিল! তাহলে যখন আমি ফিরে আসতাম তখন আমি সুদ সমেত সেই টাকা ফেরত নিতে পারতাম!' 24তখন যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল রাজা তাদের বললেন, 'তার কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে নাও এবং সেই দাসকে দাও যে দশগুন বাড়িয়েছে।' 25আর তারা প্রতিবাদ করল, 'কিন্তু প্রভু, তার কাছে আগেই অনেক টাকা আছে!' 26কিন্তু রাজা বললেন, 'আমি তোমাদের এটি বলছি: যে সব লোকরা যা পেয়েছে তা ভাল ব্যবহার করেছে, আমি তাদের আরও বেশি দেব। কিন্তু লোকেদের মধ্যে যারা যা পেয়েছে তা ভাল ব্যবহার করেনি, এমনকি তাদের কাছে যা আছে আমি সেটাও নিয়ে নেব। 27এখন, আমার সেই শত্রুরা যারা চায়নি যে আমি তাদের উপর শাসন করি, তাদের এখানে নিয়ে এসো এবং আমার চোখের সামনে তাদের তাদের হত্যা কর!
28যীশুর এই কথা বলার পর, তিনি যিরুশালেম পর্যন্ত রাস্তা ধরে আরও যেতে লাগলেন। 29আর যখন তারা জৈতুন পর্বতের কাছে, বৈৎফগী এবং বৈথনিয়া গ্রামের খুব কাছে আসলো, তিনি তাঁর দুজন শিষ্যকে আগে পাঠালেন ৷ 30তিনি তাদের বললেন, “তোমরা সামনের গ্রামে যাও। তোমরা যখন সেখানে প্রবেশ করবে, সেখানে তোমরা একটি গাধাকে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাবে যাতে কেউ কখনও চড়েনি। সেটিকে খুলবে এবং আমার কাছে নিয়ে আসবে। 31যদি কেউ তোমাদের জিজ্ঞেস করে, 'তোমরা কেন গাধাটা খুলছো,' তাকে বলবে, 'যীশুর এটিতে প্রয়োজন আছে।'" 32তখন সেই দুই শিষ্য সেই গ্রামে গেল এবং সেই গাধাটিকে দেখতে পেল, যেমনটি যীশু তাদের বলেছিলেন। 33তারা যখন সেটি (গাধাটি) খুলছিল, তখন সেটির মালিক তাদের বলল, “তোমরা আমাদের গাধাটি খুলছ কেন?” 34তারা উত্তর দিল, “যীশুর এটিতে প্রয়োজন আছে।” আর মালিকরা তাদের এটি (গাধাটি) ব্যবহারের অনুমতি দিলেন। 35তখন শিষ্যরা গাধাটিকে যীশুর কাছে নিয়ে আসলো ৷ তারা গাধার পিঠে তাদের পোশাক পেতে দিল এবং যীশুকে তার উপর উঠতে সাহায্য করল। 36তারপর, তিনি যখন যাত্রা করলেন, তখন অন্যরা তাঁকে সম্মান করার জন্য তাঁর সামনের রাস্তায় তাদের কাপড় বিছিয়ে দিল। 37আর যীশু যখন জৈতুন পর্বত থেকে নেমে যাওয়া রাস্তার কাছে এসেছিলেন, তখন তাঁর শিষ্যদের সমগ্র ভিড় যে সমস্ত বড় অলৌকিক কাজ তারা তাঁকে করতে দেখেছিল তার জন্য উচ্চস্বরে, আনন্দের চিৎকারে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে শুরু করেছিল । 38তারা এরকম কথা বলতে লাগলো, “আমাদের রাজাকে ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন যিনি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব নিয়ে আসছেন! স্বর্গের ঈশ্বরের এবং আমাদের অর্থাৎ তাঁর লোকেদের মধ্যে শান্তি থাকুক এবং সবাই ঈশ্বরের প্রশংসা করুক!” 39আর কিছু ফরীশী যারা ভিড়ের মধ্যে ছিল তারা তাঁকে বলল, “গুরু, আপনার শিষ্যদের এসব কথা বলতে বারণ করুন!” 40আর উত্তরে তিনি বললেন, “আমি তোমাদেরকে বলছি, যদি এই লোকেরা চুপ থাকে, তবে পাথরগুলো নিজেরাই আমার প্রশংসা করতে চিৎকার করে উঠবে!”
41যখন যীশু যিরুশালেমের কাছে আসলেন এবং শহরটিকে দেখলেন, তখন তিনি সেখানকার লোকদের জন্য কাঁদলেন ৷ 42তিনি বললেন, “আমার ইচ্ছা যে আজ যদি তুমি জানতে কিভাবে ঈশ্বরের শান্তি পেতে হয়। কিন্তু তুমি এখন এটি জানতে অক্ষম। 43আমি চাই তুমি এটি এটা জান: তুমি কঠিন সময়ের মখোমুখি হবে। তোমার শত্রুরা আসবে এবং তোমার শহরের চারিদিকে বেড়াজাল দিয়ে ঘিরবে। তারা শহরকে ঘিরে ফেলবে এবং চারদিক দিয়ে আক্রমণ করবে। 44তারা দেওয়াল ভেঙ্গে ঢুকবে এবং তাদের ধ্বংস করবে দেবে এবং শহরের বাকি অংশকেও ধ্বংস করে দেবে। তারা তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। তারা সম্পূর্ণরূপে সবকিছু ধ্বংস করে দেবে। এই সব ঘটবে কারণ তুমি সেই সময়কে চিনতে পারেননি যখন ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করতে এসেছিলেন!”
45যীশু যিরুশালেমে প্রবেশ করলেন এবং মন্দিরের উঠানে গেলেন ৷ আর যারা সেখানে জিনিসপত্র বিক্রি করছিল তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করলেন। 46তিনি তাদের বললেন, “শাস্ত্র বলে, ‘ঈশ্বরের মন্দির এমন একটি জায়গা হওয়া উচিত যেখানে লোকেরা প্রার্থনা করে ৷’ কিন্তু তোমরা এটিকে ‘চোরদের লুকানোর জায়গা’ বানিয়েছ!”
47সেই সপ্তাহে প্রতিদিন, যীশু মন্দিরে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন ৷ আর প্রধান যাজকরা, ধর্মীয় আইনের শিক্ষকরা এবং অন্যান্য যিহূদী নেতারা তাকে হত্যা করার রাস্তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিল। 48কিন্তু তারা তা করার কোন উপায় খুঁজে পেল না, কারণ অনেক লোক তাঁর কথা শুনতে আগ্রহী ছিল ৷
201আর সেই সপ্তাহে একদিন, যীশু মন্দিরে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং তাদের ঈশ্বরের সুসমাচার সম্বন্ধে বলছিলেন। তিনি যখন সেটি করছিলেন, তখন প্রধান যাজকরা, যিহূদী আইনের শিক্ষকরা এবং আরও কয়েকজন প্রাচীন তাঁর কাছে আসলো ৷ 2তারা তাঁকে বলল, “আমাদের বল, এই কাজগুলো করার তোমার কি অধিকার আছে? আর কে তোমাকে এই অধিকার দিয়েছে?" 3তিনি বললেন, “আমিও তোমাদেরকে একটা প্রশ্ন করব। আমাকে বল 4যোহনের দ্বারা লোকেদের বাপ্তিষ্মের বিষয়ে: ঈশ্বর কি তাকে বাপ্তিস্ম দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন নাকি মানুষ তাকে আদেশ দিয়েছিল? 5তারা নিজেদের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা করল ৷ তারা বলল, “যদি আমরা বলী, 'ঈশ্বর তাকে আদেশ করেছিলেন,' তাহলে সে বলবে, 'তাহলে কেন তোমরা তাকে বিশ্বাস কর নি?' 6কিন্তু আমরা যদি বলি, 'এটি শুধু মানুষই তাকে বাপ্তিস্ম দিতে বলেছিল,' লোকেরা আমাদের পাথর মেরে মেরে ফেলবে, কারণ তাদের বেশিরভাগ লোকই বিশ্বাস করে যে যোহন একজন ভাববাদী ছিলেন যাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছিলেন৷ 7সেইজন্য তারা উত্তর দিল যোহনকে বাপ্তিস্ম দিতে কে বলেছে তা তারা জানে না ৷ 8তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমরা যেমন আমাকে বলবে না, আমিও তোমাদের বলব না কে আমাকে এইসব কাজ করতে পাঠিয়েছেন ৷
9তারপর যীশু লোকদের এই দৃষ্টান্তটি বললেন: “একজন লোক একটা আঙ্গুর ক্ষেতের বাগান করেছিল। তিনি আঙ্গুর ক্ষেতটি কিছু লোককে দেখাশোনা করার জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন যারা এর যত্ন নেবে (আর যখন ফসল হবে তারা তাকে ফসলেরও ভাগ দেবে)। এরপর তিনি অন্য দেশে চলে যান এবং সেখানে অনেক দিনের জন্য থাকলেন। 10যখন আঙ্গুর ফল কাটার সময় হল, তখন মালিক সেই আঙ্গুর খেতের দেখাশোনা করছিল তাদের কাছে একজন দাস পাঠালেন ৷ তিনি চেয়েছিলেন তারা তাকে তার আঙ্গুরের ভাগ দেবে যা আঙ্গুর ক্ষেত উৎপাদন করেছিল। কিন্তু দাসটি পৌঁছোনোর পর, তারা সেই দাসকে মারধর করল এবং তাকে কোন আঙ্গুর না দিয়ে তাড়িয়ে দিল ৷ 11পরে, সেই মালিক অন্য একজন দাসকে পাঠালেন, কিন্তু তারা সেই দাসকেও মারধর করল এবং তাকে অপমানিত করল। তারা তাকে কোন আঙ্গুর না দিয়ে তাড়িয়ে দিল। 12তারপরও, সেই মালিক আরও একজন দাসকে পাঠালেন ৷ কৃষকেরা এই দাসকেও আহত করল এবং তাকে আঙ্গুর ক্ষেত ছেড়ে যেতে বাধ্য করল। 13তখন আঙ্গুর ক্ষেতের মালিক মনে মনে বললেন, 'এখন আমার কি করা উচিত? আমি আমার ছেলেকে পাঠাব, যাকে আমি খুব ভালবাসি। তারা সম্ভবত তাকে সম্মান করবে ৷' 14তাই তিনি তাঁর ছেলেকে পাঠালেন, কিন্তু যে লোকেরা আঙ্গুর ক্ষেতের দেখাশোনা করছিল তারা তাকে আসতে দেখে, তারা একে অপরকে বলল, 'এই সেই লোক যে একদিন এই আঙ্গুর ক্ষেতের উত্তরাধিকারী হবে! এসো আমরা তাকে হত্যা করি! তাহলেই আঙ্গুর ক্ষেত আমাদের হবে!’ 15তাই তারা তাকে টেনে হিঁচড়ে আঙুর ক্ষেতের বাইরে নিয়ে গেল এবং তারা তাকে মেরে ফেলল ৷ আঙ্গুর ক্ষেতের মালিক তাদের সাথে কি করবেন তা আমি তোমাদেরকে বলব! 16তিনি আসবেন এবং যারা আঙ্গুর ক্ষেতের দেখাশোনা করছিল সেই লোকদের মেরে ফেলবেন ৷ তারপর তিনি অন্য লোকেদের এটির দেখাশোনা করার জন্য ব্যবস্থা করবেন।” লোকেরা যখন যীশুর কথা শুনলো, তারা বলল, “এমন পরিস্থিতি যেন কখনো না হয়!” 17কিন্তু যীশু সরাসরি তাদের দিকে তাকালেন এবং বললেন, “তোমরা তা বলতে পারো, কিন্তু শাস্ত্রে লেখা এই কথাগুলোর অর্থ নিয়ে চিন্তা কর।
'নির্মাতারা যে পাথরটিকে প্রত্যাখ্যাত করেছিল সেইটি বাড়ির জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পাথর হয়ে উঠেছে।
18যে কেউ এই পাথরটি উপর পড়বে সে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, এবং এটি যার উপর পড়বে তাকে চূর্ণ করে দেবে ৷”
19তিনি যখন সেই দুষ্ট লোকদের সম্পর্কে গল্প বলছিলেন তখন প্রধান যাজকেরা এবং যিহূদী আইনের শিক্ষকরা বুঝতে পেরেছিল যে তিনি তাদের দোষারোপ করছেন। তাই তারা তক্ষুনি তাকে গ্রেফতার করার উপায় খুঁজতে চেষ্টা করল। কিন্তু তারা তাকে গ্রেপ্তার করে নি, কারণ তারা ভয় পেয়েছিল যে তারা যদি সেটি করে তবে লোকেরা তাদের সাথে কি করবে ৷ 20তাই তারা তাঁর উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখল ৷ তারা গুপ্তচরও পাঠালো যীশুর সাথে কথা বলার জন্য যারা আন্তরিক হওয়ার ভান করল, কিন্তু যারা আসলে চেয়েছিল যীশু কিছু ভুল কথা বলুক ৷ তারা রোমীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে উৎসাহিত করার জন্য তাঁকে (যীশুকে) অভিযুক্ত করতে চেয়েছিল যাতে তারা তাঁকে প্রদেশের দেশাধক্ষের কাছে সমর্পণ করতে পারে। 21তাদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “গুরু, আমরা জানি যে আপনি যা সঠিক তা বলেন এবং শিক্ষা দেন। আপনি এটি করেন এমনকি যদিও গন্যমান্য লোকেরা এটি পছন্দ করে না। আপনি বিশ্বস্ততার সাথে শিক্ষা দেন যা ঈশ্বর আমাদের দিয়ে করাতে চান। 22তাহলে এই বিষয়ে আপনি কি মনে করেন তা আমাদের বলুন ৷ রোমীয় সরকারকে কর দেওয়া কি আমাদের জন্য ঠিক হবে, নাকি ঠিক হবে না?" 23কিন্তু তিনি জানতেন যে, তারা তাঁকে সমস্যায় ফেলার জন্য তাঁর সঙ্গে চালাকি করার চেষ্টা করছে, হয় যিহূদীদের সাথে, যারা কর দিতে ঘৃণা করত অথবা রোমীয় সরকারের সাথে। তাই তিনি তাদের বললেন, 24“আমাকে একটা রোমীয় মুদ্রা দেখাও। তারপর বল কার ছবি ও কার নাম এর উপর আছে। তাই তারা তাঁকে একটি মুদ্রা দেখালো এবং বলল, "এতে কৈসরের ছবি ও নাম রয়েছে।" 25তিনি তাদের বললেন, "এক্ষেত্রে, যা সরকারের তা সরকারকে দাও এবং যা ঈশ্বরের তা ঈশ্বরকে দাও।" 26লোকেরা যখন তাঁর চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিল তখন যীশু যাকিছু বলেছিলেন তাতে গুপ্তচররা কোন ভুল খুঁজে পায়নি। গুপচররা তাঁর উত্তর এতটাই অবাক হল যে তারা আর কিছুই বলল না।
27এরপর কিছু সদ্দূকীরা যীশুর কাছে এল ৷ তাদের দলের যিহূদীরা শিক্ষা দেয় যে মৃতদের মধ্য থেকে কেউ উঠবে না। তারাও যীশুকে একটি কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার পরিকল্পনা করেছিল। 28তাদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “গুরু, মোশি আমাদের যিহূদীদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, যদি একজন লোক মারা যায় যার স্ত্রী আছে কিন্তু সন্তান নেই, তাহলে তাকে কী করতে হবে। তার ভাইয়ের উচিত সেই বিধবাকে বিয়ে করা যাতে তার দ্বারা তার (বিধবার) একটি সন্তান হয়। লোকেরা তখন সেই শিশুটিকে মৃত ব্যক্তির বংশধর বলে মনে করবে। 29ভালো, এক পরিবারে সাত ভাই ছিল। সবচেয়ে বড়ভাই একজন মহিলাকে বিয়ে করল, কিন্তু তার (সেই মহিলার) কোন সন্তান হওয়ার আগেই সে (স্বামী) মারা গেল এবং তাকে বিধবা হিসাবে রেখে গেল। 30দ্বিতীয় ভাই এই আইন পালন করল এবং সেই বিধবাকে বিয়ে করল, কিন্তু সেই একই জিনিস তার (দ্বিতীয় ভাইয়ের) সাথেও ঘটল। 31তারপর তৃতীয় ভাই তাকে বিয়ে করল, কিন্তু আবার সেই একই ঘটনা ঘটল। শেষ পর্যন্ত, সাতজন ভাই, এক এক করে, সেই মহিলাকে বিয়ে করল কিন্তু কোন সন্তান ছাড়াই মারা গেল। 32পরে, সেই স্ত্রীলোকটিও মারা গেল। 33অতএব, যদি একথা সত্য হয় যে, এমন এক সময় আসবে যখন লোকেরা যারা মারা গেছে আবার বেঁচে উঠবে, তবে সেই মহিলাটি কার স্ত্রী হবে আপনি কি মনে করেন? মনে রাখবেন যে তিনি সাত ভাইকেই বিয়ে করেছিল! 34যীশু তাদের বললেন, “এই পৃথিবীতে পুরুষেরা মেয়েদের বিয়ে করে, আর বাবা-মায়েরা মেয়েদের বিয়ের মাধ্যমে পুরুষদের কাছে দেয়। 35কিন্তু ঈশ্বর যাদেরকে স্বর্গে থাকার যোগ্য মনে করবেন যখন তিনি তাদের মৃত্যুর পর আবার জীবনে ফিরিয়ে আনবেন তখন তারা বিয়ে করবে না। 36তারা বিয়ে করে না কারণ তারা আর মরতে পারবে না ৷ বরং, তারা দূতেদের মত যারা চিরকাল বেঁচে থাকে। তারা ঈশ্বরের সন্তান, যেহেতু তারা মারা যাওয়ার পরে ঈশ্বর তাদের আবার জীবিত করেছেন। 37এখন আমি বিবাহ সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, আমি শাস্ত্র থেকে দেখাব ঈশ্বর মানুষকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করেন ৷ এমনকি মোশি এ সম্পর্কে লিখেছেন। যেখানে তিনি জ্বলন্ত ঝোপে ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা করার কথা বর্ণনা করেছেন, তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন যে কীভাবে প্রভু নিজেকে 'আব্রাহামের ঈশ্বর, ইসহাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর' বলেছেন ৷ ঈশ্বর তা বলতেন না যদি না তিনি তাদের আবার জীবিত করতেন এবং তিনি আর তাদের ঈশ্বর হতেন না ৷ 38সর্বোপরি, তিনি এমন লোকদের ঈশ্বর নন যারা মৃত ৷ কিন্তু তিনি এমন লোকদের ঈশ্বর যারা জীবিত, কারণ ঈশ্বরের কাছে প্রত্যেকেই জীবিত থাকে এমনকি তাদের মৃত্যুর পরেও।
39যিহূদী আইনের কয়েকজন শিক্ষক যারা সেখানে ছিল উত্তর দিল, "গুরু, আপনি খুব ভাল উত্তর দিয়েছেন!" 40ব্যবস্থার শিক্ষকেরা একথা বললেন কারণ যারা যীশুকে ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করছিল তারা তাঁকে কঠিন প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিয়েছিল ৷ তিনি এত সুন্দর উত্তর দিয়েছিলেন যে তারা তাঁকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে ভয় পেল।
41এর পরিবর্তে, যীশু তাদের তাঁর নিজের বিষয়ের একটি কঠিন প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, “কেন লোকেরা বলে যে মশীহ কেবলমাত্ররাজা দাউদের বংশধর? 42বিবেচনা করুন যে দায়ূদ নিজেই গীতসংহিতা বইতে লিখেছিলেন,
'ঈশ্বর আমার প্রভুকে বলেছেন,
"এখানে আমার ডানদিকে বস, সেই মহান সম্মানের জায়গায়৷
43এখানে বস যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করি ৷'
44এই গীতসংহিতাতে, রাজা দায়ূদ মশীহকে 'আমার প্রভু' বলেছেন ৷ এটি একটি মহান সম্মানের উপাধি ৷ তাহলে মশীহ কি করে দাউদের বংশধর হতে পারে? সেই বংশধরদেরই পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত ৷"
45যখন সব লোকেরা শুনছিল, যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, 46“নিশ্চিত কর যে তোমরা যেন সেই লোকের মত আচরণ কর না যারা আমাদের যিহূদী আইনের শিক্ষা দেয় ৷ তারা লম্বা লম্বা পোষাক পরতে পছন্দ করে এবং চারিদিকে ঘোরে লোকেদের বোঝাবার জন্য যে তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লোকেরা বাজারে তাদের সম্মানের সাথে অভ্যর্থনা জানাক তারা এটি পছন্দ করে। তারা সমাজ-গৃহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসতে পছন্দ করে। রাতের প্রীতিভোজের সময় তারা সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের জায়গায় বসতে পছন্দ করে। 47এছাড়াও তারা বিধবাদের সমস্ত সম্পত্তি চুরি করে ৷ কিন্তু অন্য লোকেদের বোঝানোর জন্য যে তারা ধার্মিক, তারা লোক সমাজে দীর্ঘ সময় ধরে প্রার্থনা করে। তারা যা করেছে তার জন্য ঈশ্বর তাদের কঠোর দোষী সাব্যস্ত করবেন ।”
211তারপর যীশু যেখানে বসেছিলেন সেখান থেকে তিনি উপরে তাকালেন এবং দেখলেন ধনী লোকেরা তাদের টাকার উপহারগুলি মন্দিরের উঠানে দান পেটিতে রাখছে ৷ 2এছাড়াও তিনি একজন গরীব বিধবাকে একটি পেটিতে দুটি ছোট তামার পয়সা রাখতে দেখলেন ৷ 3আর তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, “সত্য হচ্ছে যে এই গরীব বিধবা দান পেটিতে সমস্ত ধনী লোকেদের চেয়েও বেশি দিয়েছে ৷ 4আমি তোমাদেরকে বলি কেন এটি সত্য। ঐ সমস্ত ধনী লোকেরা অনেক টাকা দিয়েছিল, কিন্তু এটি ছিল অতিরিক্ত টাকা যা তাদের সত্যিই প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এই বিধবা, যে খুব গরীব, তার সব টাকা দিয়েছিল, যদিও তার বেঁচে থাকার জন্য সত্যিই এটির প্রয়োজন ছিল।”
5যীশুর কিছু শিষ্যরা মন্দিরটি কত সুন্দর পাথর দিয়ে এবং লোকেদের দেওয়া সাজসজ্জায় দিয়ে সজ্জিত ছিল সে বিষয়ে কথা বলছিল ৷ কিন্তু যীশু বললেন, 6“তোমরা যে সব জিনিসের প্রশংসা করছ, সেগুলির সঙ্গে কি ঘটতে চলেছে আমি তোমাদের বলি। কোন একদিন তোমাদের শত্রুরা তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেবে।"
7তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “গুরু, এই জিনিসগুলি কখন ঘটবে? এবং এর চিহ্নইবা কি যে এই জিনিসগুলি ঘটতে চলেছে?” 8যীশু উত্তর দিলেন, “কেউ যেন তোমাদেরকে ভুল পথে চালনা না করে। অনেক লোক আসবে এবং প্রত্যেকে আমি বলে দাবি করবে। প্রত্যেকে নিজের সম্পর্কে বলবে, ‘আমিই মশীহ!’ তারা আরও বলবে, ‘সময় প্রায় এসে গেছে যখন ঈশ্বর রাজা হিসেবে রাজত্ব করবেন!’ তারা যা বলছে তাতে বিশ্বাস করবে না! 9এছাড়াও, তোমরা যুদ্ধ এবং লোকেদের একে অপরের সাথে লড়াইয়ের কথা শুনবে। পৃথিবীর ধ্বংস হবার আগে এইসব ঘটনা অবশ্যই ঘটবে ৷ তাই যখন তোমরা ঐসব কথা শুনবে, ভয় পেয়ো না ৷
10বিভিন্ন লোকের দল একে অপরকে আক্রমণ করবে এবং বিভিন্ন রাজ্যের লোকেরা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করবে। 11এবং বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড ভূমিকম্প হবে ৷ এছাড়াও দুর্ভিক্ষ এবং ভয়ঙ্কর রোগ হবে। এমন অনেক ঘটনা ঘটবে যার কারণে মানুষ খুব ভয় পায়ে যাবে। লোকেরা আকাশে অদ্ভুত জিনিস দেখতে পাবে যা দেখাবে যে খুব গুরুত্বতর কিছু ঘটতে চলেছে। 12কিন্তু এই সমস্ত কিছু ঘটার আগে, তোমাদের শত্রুরা তোমাদেরকে বন্দী করবে এবং তোমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে। তারা তোমাদেরকে সমাজগৃহে নিয়ে যাবে, যাদের (সমাজগৃহের) বিচারকরা তোমাদের বিচার করবে এবং তোমাদের জেলে পঠাবে। তোমার শত্রুদের রাজা এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্তারাও থাকবে, তোমাদের বিচার করবে কারণ তোমরা আমাকে বিশ্বাস করেছো। 13আর এইটি সেই সময় হবে যখন তোমরা তাদের কাছে আমার বিষয়ে সত্য বলবে ৷ 14সুতরাং নিজেদের রক্ষা করার জন্য তোমরা কি বলবে তা নিয়ে সময়ের আগে চিন্তা না করার দৃঢ় সংকল্প কর, 15কারণ আমি তোমাদেরকে সঠিক কথা যুগিয়ে দেব যাতে তোমরা জানতে পারো কী বলতে হবে ৷ ফলস্বরূপ, যারা তোমাদেরকে দোষী করছে তাদের কেউই বলতে পারবে না যে তোমরা ভুল। 16এমনকি তোমাদের বাবা-মা, ভাইয়েরা এবং বোনেরা এবং অন্যান্য আত্মীয়রা ও বন্ধুরা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, এবং তারা তোমাদের কাউকে কাউকে হত্যা করবে। 17অধিকাংশ লোক তোমাদেরকে ঘৃণা করবে কারণ তোমরা আমাকে বিশ্বাস কর। 18কিন্তু তোমাদের সমস্ত সত্ত্বা নিরাপদ থাকবে আত্মিকভাবে৷ 19তোমরা যদি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাও এবং প্রমাণ কর যে তোমরা ঈশ্বরকে বিশ্বাস কর, তবে তোমাদের মৃত্যুর পর তোমাদের আত্মা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে বেঁচে থাকবে ৷
20তোমরা যখন দেখবে যে সৈন্যরা যিরুশালেম শহরকে ঘিরে রেখেছে, তখন তোমরা জানবে যে তারা খুব তাড়াতাড়ি সেই শহরকে ধ্বংস করবে ৷ 21সেই সময়ে তোমাদের মধ্যে যারা যিহূদিয়া প্রদেশের অন্যান্য জায়গায় থাকবে তাদের পাহাড়ে পালিয়ে যেতে হবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা শহরে থাকবে তাদের অবশ্যই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে। তোমাদের মধ্যে যারা কাছাকাছি গ্রামাঞ্চলে আছে তারা অবশ্যই শহরের মধ্যে আসবে না ৷ 22তোমাদের পালিয়ে যাওয়া উচিত কারণ ঈশ্বর এই সময়ে যিরুশালেম শহরকে শাস্তি দেবেন ৷ যখন তিনি তা করবেন, ঈশ্বর এই বিষয়ে শাস্ত্রে যা বলেছেন তখন তা সত্য হবে ৷ 23যখন এই ঘটনা ঘটবে, তখন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এবং যারা তাদের বাচ্চাদের লালন-পালন করছে তাদের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হবে ৷ কারন সেই সময়ে দেশে বড় দুর্ভোগ হবে। ঈশ্বর এই লোকদের উপর রেগে যাবেন এবং তাদের কঠোর শাস্তি দেবেন। 24তাদের মধ্যে অনেকেই মারা যাবে কারণ সৈন্যরা তাদের অস্ত্র দিয়ে তাদের হত্যা করবে। তাদের শত্রুরা অন্যদেরকে বন্দী করবে এবং তাদের পৃথিবীর অনেক জায়গায় পাঠাবে। যতদিন ঈশ্বর অনুমতি দেবেন অযিহুদীরা যিরুশালেম শহরকে নিয়ন্ত্রণ করবে।”
25“এই সময়ে, সূর্যে, চাঁদে ও তারায় অদ্ভুত জিনিস ঘটবে। আর পৃথিবীতে, লোকেদের গোষ্ঠী খুব ভয় পেয়ে যাবে। তারা এমন ভয় পাবে যেমন বিশাল ঢেউ সহ গর্জনকারী সমুদ্রের ভয়ে হয়। 26লোকেরা এত ভয় পাবে যে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়বে কারণ এরপরে পৃথিবীতে কি হবে তারা তার জন্য অপেক্ষা করছে। আকাশের তারাগুলো তাদের স্বাভাবিক স্থান থেকে সরে যাবে। 27তখন সমস্ত লোকেরা আমাকে, মনুষ্যপুত্রকে মেঘের মধ্যে দিয়ে পরাক্রম এবং উজ্জ্বল আলোর সাথে আসতে দেখবে। 28তাই যখন সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে শুরু করবে, তখন আস্থা রেখো, কারণ ঈশ্বর খুব তাড়াতাড়ি তোমাদেরকে উদ্ধার করবেন।"
29তারপর যীশু তাদের একটা উদাহরণ দিলেন। তিনি বললেন, “ডুমুর গাছের কথা ভাব, এবং এমনকি সব গাছের কথা ভাব। 30তোমরা যখন দেখবে যে তাদের পাতা গজাচ্ছে, তোমরা জানবে এটি গরমকালের শুরু। 31ঠিক একইভাবে, যখন তোমরা এইসব জিনিস ঘটতে দেখবে যা আমি এইমাত্র বর্ণনা করেছি, তখন তোমরা জানবে যে ঈশ্বর শীঘ্রই নিজেকে রাজা হিসাবে দেখাবেন। 32আমি তোমাদের সত্যি বলছি। আমি যে চিহ্নগুলি বর্ণনা করেছি তার মধ্যে যারা প্রথমটি দেখে তারা অবশ্যই এই সমস্ত ঘটনা ঘটতে দেখার জন্য বেঁচে থাকবে। 33তোমরা আকাশ ও স্থলকে চিরস্থায়ী মনে করতে পার। তারা নয়, কিন্তু আমার কথা চিরস্থায়ী।
34নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে খুব সাবধান হও। তোমরা যদি মাতাল হও, তবে তোমাদের মন পরে সতর্ক হবে না। আর তোমরা যদি প্রতিদিনের বিষয় নিয়ে চিন্তা কর, তবে তোমরা বিভ্রান্ত হবে। তাহলে আমি তোমাদেরকে যে চিহ্নগুলি বলেছি সেগুলির প্রতি তোমরা মনোযোগ দেবে না, এবং যখন আমি ফিরে আসবো তোমাদের অবাক করে দেব। 35আমি এমনই হঠাৎ করে আসব যে এটি এমন হবে যেন যখন একটি পশুর ওপর ফাঁদের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় ৷ সুতরাং আমার ফিরে আসার জন্য তোমাদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এটি বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে প্রভাবিত করবে ৷ 36সুতরাং আমার আসার জন্য তোমাদেরকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রার্থনা কর যেন তোমরা এই কঠিন বিষয়গুলি অনুভব করার সাথে সাথে আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারো যেগুলোর সম্পর্কে আমি কথা বলছি ৷ এইভাবে আমি, মশীহ, তোমাকদের নির্দোষ বলে ঘোষণা করব যখন আমি জগতের বিচার করতে আসব৷'
37আর প্রতিদিন যীশু মন্দিরে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন ৷ কিন্তু প্রত্যেক সন্ধ্যায় তিনি (শহরের বাইরে) যেতেন এবং সারা রাত জৈতুন পাহাড়ে থাকতেন। 38এবং প্রত্যেকদিন খুব সকালে, অনেক লোকাদের ভিড় মন্দিরে তাঁর কথা শোনার জন্য আসতো যেমন তিনি শিখিয়েছিলেন৷
221তখন প্রায় তাড়ীশূন্য রুটির পর্ব্বের সময় ছিল, যাকে লোকেরা নিস্তারপর্বও বলে ৷ 2আর প্রধান যাজকরা এবং যিহূদী আইনের শিক্ষকেরা অনেক লোকেদের মধ্যে দাঙ্গা ছাড়াই যীশুকে হত্যা করার রাস্তা খুঁজছিল যারা তাঁকে একজন মহান ব্যক্তি বলে মনে করত৷
3তারপর শয়তান যিহূদার মধ্যে প্রবেশ করল, যার অপর নাম ছিল ঈস্করিয়োতীয় ৷ সে ছিল 12 জন শিষ্যের একজন। 4সে গিয়ে প্রধান যাজকদের ও মন্দিরের রক্ষাকারী অধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলল, যে কীভাবে সে যীশুকে ধরতে তাদের সাহায্য করতে পারে ৷ 5তারা খুব খুশি হয়েছিল যখন সে তা করার প্রস্তাব করেছিল৷ তারা বলেছিল যে তারা তাকে টাকা দেবে যদি সে এটি করে। 6তাই যিহূদা রাজি হয়ে গেল, তারপর সে যীশুকে ধরতে তাদের সাহায্য করার জন্য উপায় খুঁজতে লাগলো যেখানে লোকেদের ভিড় তা দেখতে পাবে না।
7তারপর তাড়ীশূন্য রুটির পর্বের দিন এল ৷ এই দিনটি ছিল যখন যিহূদী লোকদের মেষশাবকদের হত্যা করতে হত যা তারা নিস্তারপর্ব উদযাপনের জন্য খাবে। 8তাই যীশু পিতর ও যোহনকে এই নির্দেশ দিয়ে বাইরে পাঠালেন: "যাও এবং নিস্তারপর্ব উদযাপনের জন্য খাবার প্রস্তুত কর যাতে আমরা সবাই একসাথে খেতে পারি।" 9তারা তাঁকে বলল, “আপনি কোথায় চান যে আমরা এই খাবার প্রস্তূত করি?” 10তিনি উত্তর দিলেন, “মন দিয়ে শোন। তোমরা যখন শহরে যাবে, তখন একজন লোকের তোমাদের সাথে দেখা হবে যে একটি বড় জলের পাত্র নিয়ে আসছে। সে যে বাড়িতে প্রবেশ করবে তাকে অনুসরণ কর। 11বাড়ির মালিককে বল, 'আমাদের গুরু আমাদেরকে সেই ঘরটা দেখাতে বলেছেন যেখানে তিনি আমাদের সাথে, তাঁর শিষ্যদের সাথে, একসাথে নিস্তারপর্ব্বের খাবার খেতে পারেন ৷' 12সে তোমাদের একটা বড় ঘর দেখাবে যা বাড়িটির উপরের তলায় আছে। এটি অতিথিদের বিনোদনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। সেখানে আমাদের জন্য খাবার প্রস্তুত কর।" 13তখন সেই দুই শিষ্য শহরে গেল ৷ যীশু তাদের যেমন বলেছিলেন ঠিক সেভাবেই তারা দেখতে পেল। তাই তারা সেখানে নিস্তারপর্ব উদযাপনের জন্য খাবার প্রস্তুত করল ৷
14যখন খাবার খাওয়ার সময় হল, তখন যীশু আসলেন এবং প্রেরিতদের সঙ্গে বসলেন ৷ 15তিনি তাদের বললেন, “আমি মরার আগে তোমাদের সঙ্গে এই বিশেষ নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে চেয়েছিলাম ৷ 16আমি তোমাদের বলছি, পরের বার আমি এটি খাব তখনই যখন ঈশ্বর এর গভীরতম অর্থ দেবেন যখন তিনি রাজা হিসেবে সব জায়গায় রাজত্ব করবেন।” 17তারপর তিনি এক পেয়ালা আঙ্গুর রস নিলেন এবং সেটির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন ৷ তিনি তাঁর প্রেরিতদের বললেন, “এই আঙ্গুর রস নাও এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও ৷ 18আমি চাই তোমরা এটি কর কারণ, আমি তোমাদের বলছি, যতক্ষণ না ঈশ্বর রাজা হিসেবে সর্বত্র রাজত্ব করছেন, আমি আর আঙ্গুর রস পান করব না ৷' 19তারপর তিনি কিছু রুটি নিলেন এবং সেটির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন ৷ তিনি তা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করলেন এবং সেটি তাদের খেতে দিলেন। যখন তিনি এটা করছিলেন, তিনি বললেন, “এই রুটি আমার দেহ, যা আমি তোমার জন্য উৎসর্গ করতে চলেছি। আমাকে সম্মান জানাতে পরে এটি আবার কর।" 20একইভাবে, তারা খাবার খাওয়ার পরে, তিনি আঙ্গুর রসের পেয়ালাটি নিয়ে বললেন, “এটি সেই নতুন চুক্তি যা আমি আমার নিজের রক্ত দিয়ে করব, যা আমার ক্ষত থেকে তোমাদের জন্য প্রবাহিত হবে যখন আমি মারা যাবো। 21কিন্তু আমি চাই তোমরা সবাই জান যে, যে ব্যক্তি অমাকে আমার শত্রুদের হাতে তুলে দেবে সে এখানে আমার সাথে খাবার খাচ্ছে ৷ 22আমি একথা বলছি কারণ আমি, মনুষ্যপুত্র, প্রকৃতই মারা যাবো সেই ভাবে যেভাবে ঈশ্বরের পরিকল্পনা করেছেন ৷ কিন্তু এটি সেই লোকের জন্য কতই না ভয়ঙ্কর হবে যে আমাকে আমার শত্রুদের হাতে তুলে দেবে !” 23তখন প্রেরিতরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো তাদের মধ্যে কে আসলে যীশুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে প্রস্তুত হবে ৷
24এরপরে, তাদের মধ্যে কাকে সবচেয়ে গন্যমান্য বলে তাদের মনে করা উচিত সে বিষয়ে প্রেরিতরা নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক করতে লাগলেন ৷ 25যীশু তাদের বললেন, “অযিহূদী জাতির রাজারা লোকেদের দেখাতে পছন্দ করে যে তারা শক্তিশালী। তবুও তারা নিজেদের নাম দেয় ‘একজন যে লোকেদের সাহায্য করে’। 26কিন্তু তোমরা যেন সেরকম শাসকদের মত না হও! বরং তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের এমন আচরণ করা উচিত যেন তারা সবচেয়ে কম সম্মানিত ব্যক্তি। যে কেউ নেতৃত্ব দেয় তাকে অবশ্যই সেবকের মতো কাজ করতে হবে। 27কেননা তোমরা জানো যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হল সেই ব্যক্তি যে টেবিলে খায়, সেই দাস নয় যে খাবার নিয়ে আসে ৷ কিন্তু আমি, তোমাদের নেতা, তোমাদের মধ্যে থাকাকালীন তোমাদের সেবা করে, তোমাদের জন্য আদর্শ স্থাপন করেছি ৷
28তোমরাই সেই লোক যারা আমার সঙ্গে সমস্ত কঠিন পরিস্থিতে ছিলে যা আমি ভোগ করছি। 29তাই এখন আমি তোমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করছি যেখানে তুমি শাসন করবে, যেমন আমার পিতা আমাকে রাজা হিসাবে শাসন করার জন্য নিযুক্ত করেছেন। 30আমি যখন রাজা হব তখন তোমরা আমার সাথে বসবে এবং খাবে এবং আমার সাথে পান করবে। বাস্তবিক, তোমরা সিংহাসনে বসবে এবং ইস্রায়েলের 12 গোষ্ঠির লোকদের বিচার করবে।"
31“শিমোন, শিমোন, মনোযোগ দাও! শয়তান ঈশ্বরকে বলেছে যেন তিনি তোমাদের সকলকে পরীক্ষা করতে দেন, যেমনভাবে একজন চালুনিতে শস্য নাড়ায়, এবং ঈশ্বর তাকে তা করার অনুমতি দিয়েছেন। 32কিন্তু আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করেছি, শিমোন ৷ আমি ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করেছি যে তুমি আমাকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করা বন্ধ করবে না। তাই তুমি যখন সিদ্ধান্ত নাও যে তুমি সত্যিই আমাকে বিশ্বাস কর, তখন অন্যান্য প্রেরিতদেরও আমাকে বিশ্বাস করতে উৎসাহিত কর ৷ 33পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, আমি আপনার সঙ্গে জেলে যেতে প্রস্তুত ৷ এমনকি আমি আপনার সাথে মরতেও রাজি!” 34যীশু উত্তরে বললেন, “পিতর, আমি চাই তুমি জান যে আজ রাতে, মোরগ ডাকার আগে, তুমি তিনবার বলবে যে তুমি আমাকে চেনো না!”
35তারপর যীশু শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, "যখন আমি তোমাদেরকে পাঠিয়েছিলাম গ্রামগুলিতে, আর তোমরা গিয়েছিলে টাকা, খাবার বা জুতা ছাড়াই, সেখানে কি তোমাদের এমন কোন কিছুর প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা তোমরা পাওনি?" তারা উত্তর দিল, "না, কিছুই ছিল না!" 36তখন যীশু বললেন, “কিন্তু, এখন, যদি তোমাদের মধ্যে কারো কাছে কিছু টাকা থাকে, তবে তার উচিত তা সঙ্গে নেওয়া ৷ এছাড়াও, যার কাছে খাবার আছে তার উচিত তা সঙ্গে নেওয়া। আর যার কাছে তলোয়ার নেই তার উচিত তার কাপড় বিক্রি করা এবং একটি কেনা!” 37আমি তোমাদের এটি বলছি কারণ শাস্ত্রে একজন ভাববাদী আমার সম্পর্কে যা লিখেছেন তা অবশ্যই ঘটবে: ‘লোকেরা তাঁর সাথে অপরাধীর মতো আচরণ করেছিল ৷’ শাস্ত্র আমার সম্পর্কে যাকিছু বলে তা ঘটতে চলেছে ৷ 38শিষ্যরা বলল, “প্রভু, দেখুন! আমাদের দুটি তলোয়ার আছে! তিনি উত্তর দিলেন, "আমাদের দুটির বেশি লাগবে না।"
3939 যীশু শহর ছেড়ে দিলেন এবং জৈতুন পাহাড়ে গেলেন, যেমন তিনি সাধারণত করতেন ৷ তাঁর শিষ্যরা তাঁর সঙ্গে গেলেন। 40যীশু যখন তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে সেই জায়গায় আসলেন যেখানে তিনি প্রায়শই রাত কাটাতেন, তখন তিনি তাদের বললেন, “প্রার্থনা কর যাতে ঈশ্বর তোমাদের সাহায্য করেন যেন যখন তোমরা প্রলোভনে পড় তখন পাপ না কর ৷” 41তারপর তিনি তাদের থেকে প্রায় 30 মিটার দূরে গেলেন, হাঁটু গাড়লেন এবং প্রার্থনা করলেন ৷ 42তিনি বললেন, “পিতা, যদি তোমার ইচ্ছা হয়, তবে দয়া করে আমাকে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলির অভজ্ঞাতা করতে দিও না যা ঘটতে চলেছে ৷ কিন্তু আমি যা চাই তা কর না। তোমার যা ইচ্ছে তাই কর।" 43[তারপর স্বর্গ থেকে একজন স্বর্গদূত তাঁর কাছে আসলেন এবং তাঁকে সাহস দিলেন ৷ 44তিনি খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন ৷ তাই তিনি খুব কাতরভাবে প্রার্থনা করলেন। আর তাঁর ঘাম মাটিতে বড় বড় রক্তের ফোঁটার মতো পড়ছিল ৷] 45আর যখন যীশু প্রার্থনা করে উঠলেন, তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছে ফিরে গেলেন ৷ তিনি আবিষ্কার করলেন যে তারা ঘুমাচ্ছে। তারা খুব দুঃখিত ছিল এবং সেইটি তাদের ক্লান্ত করে তুলেছিল। 46তিনি তাদের জাগিয়ে তুললেন এবং তাদের বললেন, “এখন তোমাদের ঘুমানোর সময় নয়! উঠে পড়! প্রার্থনা কর যেন ঈশ্বর তোমাদের সাহায্য করেন যাতে কোনো কিছুই তোমাদেরকে পাপ করার জন্য প্ররোচিত না করে।"
47যীশু যখন কথা বলছিলেন, তখন একটি লোকের ভিড় তাঁর কাছে এল ৷ যিহূদা, 12 জন শিষ্যের একজন, তাদের পথ দেখাচ্ছিল। সে যীশুর গালে একটি চুম্বন দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে আসলো। 48কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “যিহূদা, আমাকে, মনুষ্যপুত্রকে, চুম্বন দ্বারা শত্রুদের হাতে সমর্পণ করার সাহস তোমার হল কি করে!” 49শিষ্যরা যখন বুঝতে পারল যে কী ঘটছে, তারা বলল, “প্রভু, আমরা কি আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করব যাতে তারা আপনাকে গ্রেপ্তার করতে না পারে?" 50তাদের মধ্যে একজন তার তলোয়ার বের করল এবং মহাযাজকের দাসকে আঘাত করল, কিন্তু শুধুমাত্র তার ডান কান কেটে দিল। 51কিন্তু যীশু বললেন, “এরকম আর কর না!” তারপর তিনি সেই দাসকে স্পর্শ করলেন যেখানে সে আঘাত পেয়েছিল এবং তাকে সুস্থ করলেন। 52-53তারপর যীশু প্রধান যাজকদের, মন্দিরের অধিকারিকদের এবং যিহূদী প্রাচীনদের যারা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল তাদের বললেন, “এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, তোমরা এখানে তলোয়ার নিয়ে এবং দলবদ্ধভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছো, যেন আমি একজন ডাকাত। অনেক দিন ধরে আমি তোমাদের সাথে মন্দিরে ছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাকে ধরার চেষ্টা কর নি! কিন্তু এই সময় তোমরা যা চাও তাই করছো। এটিও এমন সময় যখন শয়তান তার মন্দ কাজ করছে যেমনটি সে করতে চায়।
54যিহূদী নেতারা ও সৈন্যরা যীশুকে ধরলেন এবং তাঁকে নিয়ে গেলেন। তারা তাঁকে মহাযাজকের বাড়িতে নিয়ে আসলেন। পিতর অনেক দূর থেকে একটি নিরাপদ দূরত্ব থেকে তাদের অনুসরণ করছিলেন। 55কিছু লোক উঠানের মাঝখানে আগুন জ্বালালো এবং একসঙ্গে বসলো ৷ পিতর আসলেন এবং তাদের মধ্যে বসলেন। 56একজন দাসী পিতরকে সেখানে বসে থাকতে দেখল যখন আগুন তার উপরে আলো করল ৷ সে তার দিকে ভালো করে দেখলো এবং বলল, "এই লোকটিও তার সাথে ছিল যাঁকে তারা বন্দী করেছে!" 57কিন্তু তিনি (পিতর) তা অস্বীকার করে বললেন, যুবতী, আমি তাঁকে চিনি না! 58তার কিছুক্ষণ পরে অন্য একজন পিতরকে দেখল এবং বলল, “তুমিও তাদের মধ্যে একজন যে সেই লোকটির সাথে ছিল যাঁকে তারা বন্দী করেছে!” কিন্তু পিতর বললেন, "না, মশাই, আমি তাদের একজন নই!" 59প্রায় এক ঘন্টা পরে অন্য একজন চিৎকার বলল, “এই লোকটি যেভাবে কথা বলে তা থেকে বোঝা যায় যে সে গালীল অঞ্চলের। সুতরাং যে লোকটিকে তারা গ্রেপ্তার করেছে তার সাথে সে নিশ্চয়ই এখানে এসেছে!” 60কিন্তু পিতর বললেন, "মশাই, এটা সত্য নয়!" আর তক্ষুনি একটা মোরগ ডেকে উঠল, পিতর তখনও কথা বলছিলেন। 61যীশু পিছনে ঘুরলেন এবং সোজা পিতরের দিকে তাকালেন ৷ তখন পিতরের মনে পড়ল যীশু তাকে কি বলেছিলেন: "আজ রাতে, মোরগ ডাকার আগে, তুমি তিনবার অস্বীকার করবে যে তুমি আমাকে চেনো।" 62আর তিনি উঠান থেকে বেরিয়ে গেলেন এবং ভীষণ দুঃখে কাঁদলেন। 63যে লোকেরা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা তাঁকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করল এবং তাঁকে মারধর করল। 64তারা তাঁর চোখ বেঁধে দিল, যাতে সে দেখতে না পায় এবং তাঁকে পালা করে মারতে লাগলো। তারা তাঁকে বলল, “আমাদের দেখাও যে তুমি একজন ভাববাদী! আমাদের বল কে তোমাকে এক্ষুনি মারলো!” 65তারা তাঁর বিষয়ে আরও অনেক খারাপ কথা বলল, তাঁকে উপহাস করল ৷
66পরের দিন ভোরবেলা, অনেক যিহূদী নেতারা একত্রিত হল। এই দলে প্রধান যাজক এবং যারা যিহূদী আইন শিক্ষা দিত সেই লোকেরা ছিল। তাদের সৈন্য ছিল যীশুকে যিহূদী পরামর্শ কক্ষে নিয়ে আসার জন্য। 67সেখানে তারা তাঁকে বলল, তুমি যদি মশীহ হও, তবে আমাদের বল! কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন, “আমি যদি বলি যে আমিই মশীহ, তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে না। 68কিন্তু আমি যদি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করি তোমরা কি আমাকে মশীহ মনে কর, তোমরা আমাকে উত্তর দেবে না। 69কিন্তু এখন থেকে, আমি, মশীহ, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের পাশে বসে থাকবো এবং শাসন করব!” 70তখন তারা সকলে জিজ্ঞাসা করল, “যদি তাই হয়, তুমি কি বলছ যে তুমিই ঈশ্বরের পুত্র?” তিনি উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ, তোমরা যা বলছো তা সত্য।" 71তখন তারা একে অপরকে বলল, “আমরা নিজেরাই তাকে বলতে শুনেছি যে সে ঈশ্বরের সমান! আর তাই আমাদের নিশ্চিত তার বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার অভিযোগে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আর কোনও লোকের প্রয়োজন নেই!”
231তখন সমস্ত দল উঠলো এবং যীশুকে রোমীয় রাজ্যপাল পীলাতের কাছে নিয়ে গেল ৷ 2তারা তাঁকে পীলাতের সামনে অভিযুক্ত করল ৷ তারা বলল, “আমরা দেখেছি যে এই লোকটি আমাদের লোকদের বিভ্রান্ত করে সমস্যার সৃষ্টি করছে ৷ রোমীয় সম্রাট কৈসর যে কর ধার্য করেছেন তা না দিতে সে তাদের বলছে। এছাড়াও, সে বলেছ যে সেই মশীহ, একজন রাজা!” 3তখন পীলাত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তুমি কি যিহূদীদের রাজা?" যীশু উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ, যেমনটি তুমি আমাকে জিজ্ঞসা করলে ঠিক তেমনই।" 4তখন পীলাত প্রধান যাজকদের ও জনসাধারণকে বললেন, “এই লোকটি কোন অপরাধের জন্য দোষী নয়।” 5কিন্তু যিহূদী শাসক পরিষদের দলটি যীশুকে দোষারোপ করতে থাকলো ৷ তারা বলল, “সে তো লোকেদের দাঙ্গা করানোর চেষ্টা করছে! সে যিহুদিয়ার সমস্ত অঞ্চল জুড়ে তার ধারণাগুলি শিক্ষা দিয়ে চলেছেন ৷ সে গালিলের অঞ্চলে তা করতে শুরু করেছিল, আর এখন সে এখানেও করছে!”
6যখন পীলাত তাদের কথা শুনলেন, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “এই লোকটি কি গালীল অঞ্চল থেকে এসেছেন?” 7পীলাত যখন জানতে পারলেন যে যীশু গালীল থেকে এসেছেন, যেখানে হেরোদ আন্তিপাস রাজত্ব করেন, তখন তিনি যীশুকে তার কাছে পাঠিয়ে দিলেন ৷ আর হেরোদও সেই সময় যিরুশালেমে ছিলেন। 8হেরোদ যখন যীশুকে দেখলেন, তিনি খুব খুশি হলেন, কারণ তিনি অনেক দিন ধরেই যীশুকে দেখতে চেয়েছিলেন ৷ কারণ হেরোদ যীশুর বিষয়ে অনেক কিছু শুনেছিলেন, এবং তিনি তাঁকে একটি অলৌকিক কাজ করতে দেখতে চেয়েছিলেন। 9তাই তিনি যীশুকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু যীশু তার একটিরও উত্তর দিলেন না ৷ 10আর প্রধান যাজকেরা এবং যিহূদী আইনের কিছু দক্ষ লোকেরা যীশুর কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, আর তাঁর বিরুদ্ধে নানান অপরাধ করার জন্য প্রবলভাবে দোষারোপ করলেন ৷ 11পরে হেরোদ ও তার সৈন্যরা যীশুকে অপমান করল এবং তাঁকে ঠাট্টা করল। তারা তার গায়ে দামী কাপড় পরিয়ে দিল ভান করার জন্য যে সে একজন রাজা। পরে হেরোদ তাকে পীলাতের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। 12সেই সময় পর্যন্ত সেই দুজন একে অপরের প্রচন্ড শত্রু ছিল, কিন্তু সেইদিন হেরোদ ও পীলাত বন্ধু হয়েছিলেন।
13তখন পীলাত প্রধান যাজকদের ও অন্যান্য যিহূদী নেতাদের এবং লোকেদের ভিড়কে এক জায়গায় করল যা তখনও সেখানে ছিল। 14তিনি তাদের বললেন, “তোমরা এই লোকটিকে আমার কাছে এনেছ, বলছো যে সে লোকদের বিদ্রোহ করার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু আমি তোমাদের জানতে চাই যে যখন তোমরা শুনছিলে তখন তাকে পরীক্ষা করার পরে, আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে তোমরা যা বলেছো তিনি করেছেন, সেগুলির কোনটি করার জন্য তিনি দোষী নন ৷ 15এছাড়াও, হেরোদ তাকে শাস্তি না দিয়ে আমাদের কাছে ফেরত পাঠালেন ৷ তার মানে তিনিও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে তিনি দোষী নন৷ সুতরাং এটি পরিষ্কার যে এই লোকটি এমন কিছু করেনি যার জন্য সে মৃত্যু যোগ্য। 16তাই আমি আমার সৈন্যদের বলবো যে তাকে চাবুক মারতে এবং তারপর তাকে ছেড়ে দিতে ৷' 17[পীলাত এই কথা বলেছিলেন কারণ প্রতি নিস্তারপর্বের অনুষ্ঠানে তাকে একজন বন্দীকে মুক্ত করতে হত ৷] 18কিন্তু সমস্ত জনতা একসঙ্গে চিৎকার করে বলেছিল, “এই লোকটিকে মৃত্যুদণ্ড দাও! আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দাও!” 19বারাব্বা এমন একজন লোক ছিল যে যিরুশালেম শহরের কিছু লোককে রোমীয় শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য চালিত করেছিল ৷ সে একজন খুনিও ছিল। আর এইসব অপরাধের জন্য সে জেলে ছিল। 20কিন্তু পীলাত ভীষণভাবে যীশুকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি আবার লোকদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন ৷ 21কিন্তু তারা চিৎকার করতেই থাকলো, “তাঁকে ক্রুশে দাও! তাঁকে ক্রুশে দাও!” 22পরে পীলাত তৃতীয়বার লোকেদের সঙ্গে কথা বললেন ৷ “না! সে তো কোনো অপরাধ করেনি! সে এমন কিছুই করেনি যার জন্য সে মৃত্যুর যোগ্য। সেইজন্য আমার সৈন্যরা তাঁকে চাবুক মারবে, আর তারপর আমি তাঁকে ছেড়ে দেব।” 23কিন্তু ভিড়ের লোকেরা চিৎকার করতে থাকলো যেন পীলাত যীশুকে ক্রুশে মৃত্যুদন্ড দেন। অবশেষে, যেহেতু তারা অনবরত খুব জোরে চিৎকার করতে থাকে, তারা পিলাতকে রাজি করিয়ে ফেলে। 24তাই পীলাত ঘোষণা করলেন যে তারা যা চাইবে তিনি তাই করবেন। 25তখন পীলাত সেই লোকটিকে ছেড়ে দিলেন যাকে জনতা ছেড়ে দিতে বলেছিল ৷ সেই লোকটি জেলে ছিল কারণ সে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল এবং লোকেদের হত্যা করেছিল! তারপর পীলাত সৈন্যদের যীশুকে নিয়ে যাওযার জন্য এবং জনতা যা চায় তাই করার জন্য আদেশ দিলেন।
26শিমোন নামে একজন লোক ছিল, যে আফ্রিকার কুরীনীয় শহরের বাসিন্দা ছিল ৷ সে গ্রামাঞ্চল থেকে যিরুশালেমে আসছিল ৷ সৈন্যরা যখন যীশুকে নিয়ে যাচ্ছিল, তারা শিমোনকে ধরলো। তারা যীশুর কাছ থেকে ক্রুশটি নিয়ে নিল যা তারা তাকে দিয়ে বহন করানোর জন্য বানিয়ে ছিল এবং তারা তা শিমোনের কাঁধে চাপিয়ে দিল ৷ তারা তাকে এটি বহন করতে এবং যীশুর পিছনে অনুসরণ করতে বলল। 27তখন অনেক লোকের ভিড় যীশুর পিছনে হাঁটছিল ৷ ভিড়ের মধ্যে অনেক মহিলা ছিল যারা তাদের বুকের চাপড়া ছিল তাদের দুঃখ প্রকাশ করার জন্য এবং তাঁর জন্য দুঃখের সাথে কাঁদ ছিল ৷ 28কিন্তু তাদের সহানুভূতি গ্রহণ করার পরিবর্তে যীশু এই মহিলাদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন, “হে যিরুশালেমের মহিলারা, আমার জন্য কেঁদো না! পরিবর্তে, তোমাদের সাথে এবং তোমাদের সন্তানদের সাথে যে ভয়ানক ঘটনা ঘটতে চলেছে তার জন্য কাঁদো! 29কারণ আমি চাই তোমরা জানো যে এমন একটা সময় আসবে খুব তাড়াতাড়ি যখন লোকেরা বলবে, 'কত ভাগ্যশালী সেই মহিলারা যারা কখনও সন্তানের জন্ম দেয়নি অথবা সন্তানকে দুধ খাওয়ায়নি!' 30তারপর এই শহরের লোকেরা বলবে, 'আমরা চাই যে পাহাড় আমাদের ওপরে পড়ুক এবং সেই পাহাড়গুলো আমাদের ঢেকে রাখুক!' 31এই মুহূর্তে মানুষের পক্ষে অন্যের প্রতি খারাপ কাজ করা কঠিন, ঠিক যেমনটা তাজা কাঠে আগুন লাগানো কঠিন। কিন্তু পরে, মানুষ সহজেই অন্যদের প্রতি খারাপ কাজ করতে সক্ষম হবে, ঠিক যেমন শুকনো কাঠে আগুন জ্বালানো সহজ।"
32আর অন্য দুজন লোক, যারা অপরাধী ছিল, তারাও যীশুর সাথে সেই জায়গায় যাচ্ছিল যেখানে রোমীয়রা তাদের হত্যা করবে ৷ 33যখন তারা সেই জায়গায় পৌঁছল যার নাম ছিল মাথার খুলি, সেখানে সৈন্যরা যীশুকে পেরেক দিয়ে ক্রুশে বিদ্ধ করল ৷ তারা সেই দুই অপরাধীর সাথে একই জিনিস করল। তারা তাদের একজনকে যীশুর ডানদিকে এবং অন্য জনকে তাঁর বামদিকে রাখল। 34[কিন্তু যীশু বললেন, “পিতা, দয়া করে এই লোকদের ক্ষমা কর। তারা বুঝতে পারছে না তারা কি করছে।”] তারপর সৈন্যরা তার জামাকাপড় ভাগ করল এবং পাশার মত কিছু দিয়ে জুয়া খেলল যাতে প্রত্যেকে পোশাকের কোন অংশটি পাবে তা ঠিক করতে পারে। 35অনেক লোক কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, দেখছিল। তারা যীশুকে নিয়ে মজা করছিল। যিহূদী নেতারাও একই কাজ করেছিল। তারা বলল, “সে অন্য লোকদের বাঁচিয়েছে! ঈশ্বর যদি সত্যিই তাকে মশীহ হিসেবে মনোনীত করে থাকেন, তাহলে তার নিজেকে রক্ষা করা উচিত!” 36সৈন্যরাও তাঁকে উপহাস করতে লাগল ৷ তারা তাঁর কাছে আসলো এবং তাঁকে টক আঙ্গুর রস দিল। 37তারা তাঁকে বলল, "তুমি যদি যিহূদীদের রাজা হও তবে নিজেকে রক্ষা কর!" 38তাঁর মাথার উপরে ক্রুশে, সৈন্যরা একটি চিহ্নও বেঁধেছিল যা বর্ণনা করে, "ইনি যিহূদীদের রাজা।"
39একজন অপরাধী যে যীশুর পাশে ক্রুশে ঝুলছিল, সেও তাঁকে অপমান করল ৷ সে বলল, "তুমি যদি সত্যিই মশীহ হতে, তবে তুমি নিজেকে রক্ষা করতে, এবং তুমি আমাদেরও বাঁচাতে!" 40কিন্তু অন্য অপরাধী তার ওরকম কথার জন্য তাকে ধমক দিল ৷ সে তাকে বলল, “তোমার ভয় করা উচিৎ যে ঈশ্বর তোমাকে শাস্তি দেবেন! তুমিও ক্রুশে মারা যাচ্ছো, এবং শীঘ্রই ঈশ্বর তোমার বিচার করবেন। 41আমরা দুজনই মরার যোগ্য ৷ তারা আমাদের মন্দ কাজ করার জন্য শাস্তি দিচ্ছে যেমনটা আমরা যোগ্য। কিন্তু এই লোকটি যাকে তুমি অপমান করছো তিনি কিছুই ভুল করেনি!” 42তারপর সে যীশুকে বলল, “যীশু, আপনি যখন রাজা হিসাবে শাসন করতে শুরু করবেন তখন দয়া করে আমার বিষয়ে ভাববেন এবং আমার সাথে ভাল ব্যবহার করবেন।” 43যীশু উত্তর দিলেন, "আমি চাই তুমি জানো যে আজই তুমি আমার সাথে পরমদেশে থাকবে!"
44ততক্ষণে প্রায় দুপুর হয়ে গেছে। কিন্তু দুপুর তিনটা পর্যন্ত পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। 45তখন সূর্য থেকে কোন আলো ছিল না ৷ আর মন্দিরের মোটা পর্দাটি যা মহাপবিত্র জায়গায়কে ঢেকে রাখতো তা দুভাগে চিরে গেল ৷ 46যখন তা ঘটল, তখন যীশু জোরে চিৎকার করে বললেন, "পিতা, আমি আমার আত্মাকে তোমার যত্নে রেখেছি।" একথা বলার পর, তিনি শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিলেন এবং মারা গেলেন। 47যখন সেনাপতি যিনি সৈন্যদের আদেশ দিচ্ছিলেন দেখলেন কি ঘটল, তিনি বললেন, “সত্যিই, এই লোকটি কোন অন্যায় করেনি!” তিনি যা বললেন তা ঈশ্বরকে সম্মানিত করল। 48যখন লোকেদের ভিড় যারা এই লোকদের মৃত্যু দেখার জন্য জড়ো হয়েছিল তারা দেখতে পেল যে আসলে কি ঘটছে, তারা তাদের ঘরে ফিরে গেল, আর তাদের বুক চাপড়াতে লাগলো এটা দেখানোর জন্য যে তারা দুঃখিত। 49কিন্তু যখন বাকী লোকেরা চলে গেলে, যীশুর পরিচিত সকলে, যাদের মধ্যে গালীল অঞ্চল থেকে তাঁর সঙ্গে আসা মহিলারাও ছিল, তারা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখান কিছু দূর থেকে কী ঘটছিল তা দেখতে থাকলো ৷
50যোষেফ নামে একজন লোক যিনি যিরুশালেমে বাস করত। তিনি একজন ভাল এবং ধার্মিক লোক ছিলেন যিনি যিহূদী মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। 51কিন্তু মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা যখন যীশুকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং কীভাবে তা করতে হবে তার পরিকল্পনা করেছিল সে তাদের সঙ্গে একমত ছিল না ৷ তিনি ছিলেন যিহূদীদের আরিমাথিয়া শহরের বাসিন্দা। তিনি সেই সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন যখন ঈশ্বর তাঁর রাজাকে রাজত্ব করতে পাঠাবেন। 52যোষেফ পীলাতের কাছে গেলেন এবং যীশুর দেহকে নিতে এবং সেটি কবর দেওয়ার জন্য পিলাতকে তাকে অনুমতি দিতে বললেন। পীলাত তাকে অনুমতি দিলেন, 53তাই যোষেফ যীশুর দেহ ক্রুশ থেকে নামিয়ে নিলেন ৷ তিনি তা একটি শনের কাপড়ে জড়ালেন। তারপর তিনি যীশুর দেহকে একটি কবরের গর্তে রাখলেন যেটি কেউ একটি পাথরের গায়ে কেটেছিল। এর আগে কেউ ওই গর্তে দেহ রাখেনি। 54যেদিন যিহুদীরা লোকেরা তাদের বিশ্রামের দিনের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল সেই দিনেই এই ঘটনা ঘটল ৷ শীঘ্রই সূর্যাস্ত হতে যাচ্ছিল, যা বিশ্রামবার শুরু। 55গালীল প্রদেশ থেকে যে মহিলারা যীশুর সঙ্গে এসেছিলেন তারা যোষেফ ও তার সঙ্গে থাকা পুরুষদের অনুসরণ করলেন৷ তারা কবরের গর্তটি দেখলো এবং তারা দেখলো কেমনভাবে লোকেরা যীশুর দেহকে রেখেছিল। 56তারপর স্ত্রীলোকেরা যীশুর দেহে মশলা ও মলম তৈরি করার জন্য যেখানে তারা ছিল সেখানে ফিরে গেল ৷ যাইহোক, যিহুদী আইনের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রামবার শুরু হলে তারা কাজ বন্ধ করে দিত।
241রবিবার খুব ভোরে, সেই মহিলারা কবরের কাছে গেল ৷ তারা যীশুর দেহে লাগাবার জন্য যে মশলা তৈরী করেছিল তা সঙ্গে নিয়ে এল ৷ 2যখন তারা পৌঁছলো, তখন তারা আবিষ্কার করল যে পাথরটি কেউ একজন সরিয়ে দিয়েছে যা কবরের ঢোকার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল৷ 3তারা কবরের গর্তের ভিতরে গেল, কিন্তু যীশুর দেহ সেখানে ছিল না! 4আর তারা বুঝতে পারছিল না যে এই বিষয়ে কি চিন্তা করবে ৷ তখন হঠাৎ দুজন পুরুষ উজ্জল, চকচকে কাপড় পরে তাদের পাশে দাঁড়ালেন! 5এতে মহিলারা খুব ভয় পেয়ে গেল ৷ তারা নিচের দিকে মাথা নত করল। সেই দুজন লোক তাদের বলল, “যিনি জীবিত আছেন তাঁকে এমন কোন জায়গায় তোমাদের খোঁজা উচিত নয় যেখানে মৃত লোকেদের কবর দেওয়া হয়! 6তিনি এখানে নেই ৷ না, তিনি আবার জীবিত হয়েছেন! মনে কর তিনি যখন গালীলে তোমাদের সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি তোমাদের বলেছিলেন, 7বললেন ‘তারা আমাকে, মনুষ্যপুত্রকে পাপী মানুষের হাতে তুলে দেবে ৷ সেই লোকেরা আমাকে ক্রুশে পেরেক মেরে হত্যা করবে। কিন্তু দুইদিন পরে, আমি আবার জীবিত হয়ে উঠব ৷'" 8সেই মহিলাদের মনে পড়ল যীশু তাদের কি বলেছিলেন। 9তাই তারা কবর ছেড়ে বেরিয়ে গেল এবং সেই 11 জন প্রেরিতদের কাছে এবং যীশুর অন্যান্য শিষ্যদের কাছে গেল এবং যা ঘটেছে তা তাদের বলল ৷ 10আর যে মহিলারা প্রেরিতদের কাছে এই কথাগুলি বলেছিলেন তারা হল মগদ্লীনী মরিয়ম, যোহানা, যাকোবের মা মরিয়ম, এবং অন্য স্ত্রী লোকেরা যারা তাদের সাথে ছিল ৷ 11কিন্তু প্রেরিতরা মনে করেছিলেন যে এই খবরটি ছিল মূর্খতাপূর্ণ, তাই তারা সেই মহিলাদের কথা বিশ্বাস করলেন না ৷ 12যাইহোক, পিতর সিদ্ধান্ত নিলেন এটি দেখতে যে গল্পটি সত্য কিনা। তিনি ছুটে কবরের গর্তে গেলেন। তিনি নিচু হয়ে এবং ভিতরে দেখলেন। তিনি শনের কাপড়টি দেখতে পেলেন যাতে যীশুর দেহ জড়ানো ছিল, কিন্তু যীশু সেখানে ছিলেন না৷ তাই যা ঘটেছে তা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে তিনি কবর ছেড়ে চলে গেলেন। 13সেই একই দিনে দেখো যীশুর দুজন শিষ্য ইম্মায়ু নামে একটি দূরবর্তী গ্রামের দিকে হাঁটছিলেন ৷ এটি যিরুশালেম থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে ছিল। 14যীশুর সঙ্গে যা ঘটেছিল সেইসব বিষয়ে নিয়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছিল ৷ 15আর তারা যখন কথা বলছিল এবং সেই সব বিষয় আলোচনা করছিল, তখন যীশু নিজে তাদের কাছে এলেন এবং তাদের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করলেন ৷ 16কিন্তু ঈশ্বর তাদের বুঝতে বাধা দিলেন যে এটি যীশু। 17যীশু তাদের বললেন, “তোমরা দুজন হাঁটতে হাঁটতে কি বিষয়ে কথা বলছিলে?” তারা থামলো এবং তাদের মুখে খুব দুঃখের ভাব ছিল। 18কিন্তু তারপর তাদের মধ্যে একজন, যার নাম ক্লিয়পা, উত্তর দিল, "আপনি অবশ্যই একমাত্র ব্যক্তি যিনি যিরুশালেম পরিদর্শনের জন্য এসেছেন যিনি সাম্প্রতিক দিনগুলিতে সেখানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির ব্যাপারে কিছুই জানেন না!" 19তিনি তাদের বললেন, "কোন ঘটনা?" তারা উত্তর দিল, “নাসরতের লোক যীশুর সাথে যা ঘটেছিল, যিনি একজন ভাববাদী ছিলেন ৷ ঈশ্বর তাঁকে মহান অলৌকিক কাজ করার জন্য এবং সুন্দর সংবাদ শিক্ষা দেবার জন্য সক্ষম করেছিলেন। বেশীরভাগ মানুষ ভেবেছিল যে তিনি বিস্ময়কর ছিলেন। 20কিন্তু আমাদের প্রধান যাজকরা ও নেতারা তাঁকে রোমীয় শাসকের হাতে তুলে দিয়েছিল ৷ তারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল এবং তারা তাঁকে ক্রুশে পেরেক বিদ্ধ করে হত্যা করেছিল। 21আমরা আশা করেছিলাম যে তিনিই সেই যিনি আমাদের ইস্রায়েলীয়দের শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করবেন! কিন্তু এটি এখন আর সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না, কারণ রোমীয়রা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার তিন দিন পার হয়ে গেছে। 22তা সত্ত্বেও, আমাদের দলের কয়েকজন মহিলা আমাদের অবাক করেছিল ৷ আজ ভোরে তারা সেই কবরের গর্তে গিয়েছিল যেখানে যীশুকে কবর দেওয়া হয়েছিল, 23কিন্তু যীশুর দেহ সেখানে ছিল না! তারা ফিরে আসলো এবং আমাদের জানালো যে তারা কিছু স্বর্গদূতকে দর্শনে দেখেছে। স্বর্গদূতেরা বললেন যে যীশু জীবিত ছিলেন! 24তারপর কিছুজন যারা আমাদের সাথে ছিল যখন সেই মহিলারা আসলো এবং এই কথা বলল তারা কবরের গর্তে গেল ৷ তারা দেখল ঠিক একই জিনিস যা সেই স্ত্রী লোকেরা বলেছিল ৷ কিন্তু তারা যীশুকে দেখতে পেল না ৷” 25তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমরা দুজন বোকা লোক! মশীহ সম্পর্কে ভাববাদীরা যা লিখেছেন তা বিশ্বাস করতে তোমরা এত ধীর! 26আপনার অবশ্যই জানা উচিত ছিল যে মশীহের জন্য এই সমস্ত কষ্ট সহ্য করা এবং মরা, এবং তারপর ঈশ্বরের কাছ থেকে মহান সম্মান লাভ করা আবশ্যক ছিল!” 27তখন যীশু নিজের সম্বন্ধে শাস্ত্রে যা বলা হয়েছে সেইসব তাদের ব্যাখ্যা করলেন ৷ তিনি মোশি যা লিখেছিলেন তা দিয়ে শুরু করেছিলেন এবং তারপর অন্য সমস্ত ভাববাদীরা যা লিখেছিলেন তা তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন।
28যখন তারা দুজন লোক যে গ্রামে যাচ্ছিল সেখানে প্রায় পৌঁছে গেলে, এটি দেখা গেল যে যীশু সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে চলেছেন ৷ 29কিন্তু তারা তাঁকে অনুনয়-বিনয় করতে লাগল সেটি না করার জন্য৷ তারা বলল, "আজ রাতে আমাদের সাথে থাকুন, কারণ বিকেল হয়ে গেছে এবং খুব তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয়ে যাবে।" সেইজন্য তিনি তাদের সাথে থাকার জন্য বাড়ির ভিতরে গেলেন ৷ 30আর তারা যখন সবাই খেতে বসল, যীশু কিছু রুটি নিযলেন এবং এটির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন ৷ তারপর তিনি সেটি টুকরো টুকরো করলেন এবং দুজনকে দিতে লাগলেন। 31তারপর ঈশ্বর তাঁকে চিনতে তাদের সক্ষম করলেন ৷ কিন্তু তক্ষুনি তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন! 32তারা একে অপরকে বলল, “আমরা যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম এবং তিনি আমাদের সাথে কথা বলছিলেন এবং আমাদের শাস্ত্র বুঝতে সক্ষম করছিলেন, তখন আমরা ভিতরে খুব উত্তেজিত হয়েছিলাম! এটি সবই বুঝিয়েছিল যে মশীহকে কষ্ট পেতে হবে কিন্তু তারপর মহান সম্মানও পাবেন ৷" 33তাই তারা তক্ষুনি প্রস্থান করল এবং যিরুশালেমে ফিরে আসলো ৷ সেখানে তারা 11 জন প্রেরিতকে এবং আরও কয়েকজনকে দেখতে পেল যারা তাদের সাথে একত্র হয়েছিল। 34প্রেরিতরা সেই দুজনকে বললেন, “এটি সত্য যে যীশু আবার জীবিত হয়েছেন। আর তিনি শিমোনকে দর্শন দিয়েছেন!” 35তারপর সেই দুজন লোক রাস্তায় যখন হাঁটছিলো তাদের সাথে কি ঘটেছিল তা অন্যদের বলল। তারা তাদের আরও বলল যে কীভাবে তারা দুজনেই যীশুকে চিনতে পেরেছিল যখন তিনি তাদের জন্য কিছু রুটি ভেঙেছিলেন।
36তারা যখন এইসব কথা বলছিল, যীশু নিজেই হঠাৎ করে তাদের মধ্যে উপস্থিত হলেন ৷ তিনি তাদের বললেন, “ঈশ্বর তোমাদের শান্তি দিন!” 37কিন্তু তারা শান্তিতে ছিল না ৷ তারা চমকে উঠল এবং ভয় পেয়ে গেল কারণ তারা ভেবেছিল যে তারা ভূত দেখছে ৷ 38তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের অধীর হওয়া উচিত নয়! আর তোমার সন্দেহ করা উচিত নয় যে আমি বেঁচে আছি। 39আমার হাতের এবং পায়ের ক্ষত দেখ! এইভাবে তোমরা নিশ্চিত হতে পারো যে এটি সত্যিই আমি। ভূতেদের দেহ নেই, যেমনটা তোমরা দেখছ যে আমার আছে, এবং তোমরা আমাকে স্পর্শ করতে পারো প্রমাণ করতে যে আমার শরীর বাস্তব।" 40তিনি একথা বলার পর, তিনি তাদের তাঁর হাতের ও পায়ের ক্ষত দেখালেন ৷ 41তারা এতই আনন্দিত হয়েছিল যে তারা তখনও বিশ্বাস করতে পারছিল না যে তিনি সত্যিই বেঁচে ছিলেন৷ তাই তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের কাছে এখানে কি কিছু আছে যা আমি খেতে পারি?” 42তখন তারা তাঁকে এক টুকরো ভাজা মাছ দিল ৷ 43তারা যখন দেখছিল, তিনি তা নিলেন এবং সেটি খেলেন ৷
44তারপর তিনি তাদের বললেন, “আগে যখন আমি তোমাদের সাথে ছিলাম তখন আমি তোমাদের যা বলেছিলাম তা আমি আবার বলব ৷ ঈশ্বর সমস্ত শাস্ত্র জুড়ে আমার সম্বন্ধে , মশীহ সমন্ধে যা বলেছিলেন তা ঘটাতে চলেছেন ৷ 45তারপর তিনি তাদের বুঝতে সক্ষম করলেন সেই সবকিছু যা শাস্ত্র তাঁর বিষয়ে যা বলেছে৷ তিনি তাদের বললেন, 46“তোমরা শাস্ত্রে এইসব কথা পড়তে পারবে: যে, মশীহ দুঃখভোগ করবেন এবং মারা যাবেন, কিন্তু তারপরে তৃতীয় দিনে তিনি আবার জীবিত হবেন। 47শাস্ত্র আরও বলছে যে যারা মশীহকে বিশ্বাস করে তারা গিয়ে তাঁর হয়ে ঘোষণা করবে যে যারা পাপ করা বন্ধ করবে ঈশ্বর তাদের ক্ষমা করবেন ৷ আমি চাই তোমরা এটি কর, এখানে যিরুশালেম থেকে শুরু করে এবং বিশ্বের প্রতিটি লোকেদের গোষ্ঠির কাছে যাও। 48তোমরা অবশ্যই লোকেদের বলবে যে তোমরা সবকিছুই আমার সাথে ঘটতে দেখেছ যা শাস্ত্রে বলা আছে যে মশীহের সাথে ঘটবে ৷ 49এবং আমার পিতার প্রতিজ্ঞা অনুসারে, আমি তোমাদের কাছে পবিত্র আত্মা পাঠাব ৷ কিন্তু যতক্ষণ না ঈশ্বর তোমাদেরকে (পবিত্র আত্মার) শক্তি দেন ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদেরকে এই শহরেই থাকতে হবে।”
50পরে যীশু তাদের শহরের বাইরে নিয়ে গেলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা বৈথনিয়া গ্রামের কাছে আসলেন। সেখানে তিনি তাঁর হাত তুললেন এবং তাদের আশির্বাদ করলেন। 51আর যখন তিনি এটি করছিলেন, তিনি তাদের ছেড়ে দিলেন এবং স্বর্গে চলে গেলেন ৷ 52পরে তারা তাঁর আরাধনা করার পর, তারা আনন্দ সহকারে যিরুশালেমে ফিরে গেলেন। 53আর তারা প্রতিদিন মন্দিরে যেতেন এবং সেখানে ঈশ্বরের উপাসনা করে সময় কাটাতেন ৷